ঝালাইমিস্ত্রির ছেলের পকেটে কোটি টাকার চাকরি

ঝালাইমিস্ত্রির ছেলের পকেটে কোটি টাকার চাকরি

Sunday February 14, 2016,

3 min Read

বিহারের খাগারিয়ার হতদরিদ্র পরিবার। ৬ ভাইবোন। রোজগেরে বলতে একা বাবা। সামান্য ঝালাইয়ের কাজ করেন। খাবার কোনও দিন জোটে তো কোনও দিন জোটে না। এর মধ্যেও ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে কোটি টাকার স্বপ্নের জাল বুনতেন বাৎসল্য। পুরও নাম বাৎসল্য চৌহান। IIT খড়গপুরের কম্পিউটার সায়েন্সের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। এগিয়েছেন স্রোতের বিরুদ্ধে। লড়াই ছিল দারিদ্রের সঙ্গে। লড়াই ছিল হাজারো প্রতিকূলতার সঙ্গে। অবশেষে সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে। IT জায়ান্ট মাইক্রোসফটের ১.০২ কোটি টাকার চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পকেটে পুরে ফেললেন ঝালাইমিস্ত্রির ছেলে। চলতি বছরের অক্টোবরেই চাকরিতে যোগ দেবেন তিনি।

image


গত ডিসেম্বরে খড়্গপুরেই ক্যাম্পাসিং হয়। তার পরে পাঁচ দফার পরীক্ষা শেষে তাঁকে মনোনীত করে বিশ্বের অন্যতম প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফট। আইআইটি খড়্গপুরের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ২১ বছরের বাৎসল্য জানিয়েছেন, মাইক্রোসফটের পরীক্ষা মোটেও সহজ ছিল না। পাঁচ ধাপ পেরোনোর পর তাঁকে যখন নিশ্চিত করেন মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ, প্রথমে তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। বাৎসল্যের কথায়, ‘ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বাবার আমাকে পড়ানোটা সার্থক হল’।

তবে এই সুযোগ তিনি হয়তো কোনওদিনই পেতেন না। কেন? তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি রাজস্থানের কোটা যাই। লোন করে বাবা একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান। কিন্তু, প্রস্তুতির মাঝেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যার বই পড়তে শুরু করি। আমার ইচ্ছে ছিল বই লেখা। কিন্তু, ২০১১ সালে যখন প্রথমবার JEE-তে বসি তখনই আমার ভুল ভাঙে’। সেই পরিস্থিতিতে মেন্টর বিশাল জোশিকে পাশে পেয়েছিলেন তিনি। প্রথমবার ভালো ব়্যাঙ্ক করতে না পারলেও দ্বিতীয়বার JEE-তে সারা ভারতে তাঁর ব়্যাঙ্ক ছিল ৩৮২।

ছোটবেলা থেকেই বাৎসল্য পড়াশোনায় বেশ ভাল। বিহার বোর্ডের অধীনে স্থানীয় একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। ভাল রেজাল্ট করায় সরকারি বৃত্তিও পান। মূলত বৃত্তি-নির্ভরই ছিল তাঁর পড়াশোনা। তবে, এ সবের বাইরেও পড়াশোনার ক্ষেত্রে যখন যে রকম টাকা-পয়সা প্রয়োজন পড়েছে, বাবা চন্দ্রকান্ত তা বিভিন্ন ভাবে জোগাড় করেছেন। ছেলেকে বুঝতেও দেননি। ছেলের কথায়, ‘বাবা সব সময় বলে, জীবনে উন্নতি করতে হবে। তবে, মাধ্যমিকের সময়ে আমি জানতামও না আইআইটি-টা ঠিক কী!’

ছেলের মুখে তার নতুন চাকরির মাইনের কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি বাবা। কিছুক্ষণ কোনও কথা বলতে পারেননি তিনি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন ছেলের মুখের দিকে। ভেজা চোখে ফের জিজ্ঞেস করেন, ‘মাইনে কত?’ ছেলে বাবাকে জানায়, ‘এক কোটি দু’লাখ।’ এ বার ছেলে বাৎসল্যকে বুকে জড়িয়ে ধরেন বাবা চন্দ্রকান্ত সিংহ চৌহান।

২১ বছর বয়সী বাৎসল্য ২০১৬ সালের অক্টোবরে মাইক্রোসফটের রেডমন্ড দফতরে যোগদান করবেন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। অন্যান্য শিক্ষানবিশ ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি তার পরামর্শ, ‘সিলেবাস সীমিত। তাই ঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা করলে সফলতা পাওয়া সম্ভব। আর আমি পড়াতে পছন্দ করি। যে শিখতে চায় তাকে আমি সাহায্য করতে প্রস্তুত।’

শুধু নিজের গ্রাম বা জেলার উন্নয়নই তাঁর লক্ষ্য নয়, তাঁর মতো দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের দিশা দেখাতে ইতিমধ্যেই ফেসবুকের পাতা খুলে দিয়েছেন তিনি। সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ফেসবুকে পড়ুয়াদের বেশ কিছু সমস্যা তাঁকে হতাশও করেছে। সেরকমই কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বাৎসল্য বললেন, “পড়ুয়ারা প্রায়ই বলছে যে বাবা-মা আমার মতো ভাল ফল করার জন্য কিংবা কোটি টাকার চাকরি খুঁজতে চাপ দিচ্ছেন। সেইসব অভিভাবককে বলতে চাই, এমন তুলনা করা উচিৎ নয়। প্রতিভা বহুমুখী হয়, তাই কারোর সাফল্যকে অনুকরন করার শিক্ষা না দিয়ে নিজের সন্তানের প্রতিভাকে চেনা এবং তা তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালানো গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানকে সঠিক দিশা দেখাতে বাবা-মাকে সার্পোটিভ হতে হবে। ক্লাস টেন প‌র্যন্ত পড়াশোনা করতে কোনও বৃত্তিরও দরকার পড়ে না।”

ছোটবেলা থেকে মাওবাদী সমস্যা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। তাই নকশালদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর স্বপ্ন দেখেন বাৎসল্য। পাশাপাশি, শিক্ষার প্রসারে নিজের জেলাতে স্কুল গড়তে চান তিনি। সমাজসেবামূলক কাজের পাশাপাশি বাবা-মাকে বিশ্বভ্রমণে পাঠানোর ইচ্ছাও রয়েছে বাৎসল্যের।

[কেউ যদি পরামর্শ চান বাৎসল্যর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেই পারেন। তবে মার্চ মাসের আগে নৈব নৈব চ। কারণ এখন পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত এই আইআইটিয়ান। টুকে নিন বাৎসল্যর নম্বর +91 (973) 571 7361]