দোলে রেডি সোনকুপি, StartUp 'বুগিয়াল'

দোলে রেডি সোনকুপি, StartUp 'বুগিয়াল'

Tuesday February 09, 2016,

3 min Read

শীত গেছে। বাতাসে এখন আমের মুকুলের গন্ধ। পলাশের অশোকের রঙবাজি শুরু। আর আপনার কী প্ল্যান? বটু হয়ে শান্তিনিকেতন ছুটবেন... খোল দ্বার খোল-এর ডাকে সাড়া দিয়ে কি এবারও একই গন্তব্য! নাকি অ্যাকোয়াটিকা? আমি বরং অন্য একটা ঠিকানার সন্ধান দিতে পারি। চলুন দুয়ারসিনি। পুরুলিয়ার শিমূল পলাশ অশোক ডাক দিয়েছে? ডাক দিয়েছে সোনকুপির বাঞ্জারা ক্যাম্প।

পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির আগেই পড়ে বরাভূম স্টেশন। কাছেই দূয়ারসিনি হাট। রাস্তার দু'ধারে ফুল দিয়ে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাতে তৈরি পথ-তরু। মাথার ওপর আগুনের ক্যানোপি। আপনি যাচ্ছেন কুকুবুড়ু পাহাড়ের গায়ে হেলান দিতে। সোনকুপিতে সবুজ নিঃশ্বাস নিতে।

এখানেই বিঘে কুড়ি জমির ওপর পার্মানেন্ট ক্যাম্প করেছে বুগিয়াল। একটি ট্যুরিজম স্টার্টআপ। অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপন চক্রবর্তী বলছিলেন, ১৪ বছর মিডিয়ায় কাজ করার পর তিনি থমকে গিয়েছিলেন। চিট-ফান্ডের বুদবুদ ফাটার পর কলকাতার কয়েকশ সাংবাদিক এবং অ-সাংবাদিক কর্মী যখন কাজ হারান। সেই দলে ছিলেন সন্দীপনও। সে এক কঠিন লড়াই। জীবনের এই সন্ধিক্ষণে উঁকি দিল পাহাড়। চিরকাল তাঁকে পাহাড় টানত। পায়ের তলায় সর্ষে ছিল সন্দীপনের। তাঁকে শুধু পাহাড় নয় টানত বাংলার লোকসংস্কৃতি, লোকগান, বন জঙ্গল এবং জঙ্গলের মানুষজন। ওর অজান্তে এসব নিয়ে তৈরি হয়ে গিয়েছিল শহরের বাইরে ওর একটি পরিচিতি মহল। চাকরিতে ইতি টানার পর রোজগারের দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর এই এতদিনের প্রিয় আবহই তাঁকে টেনে নিলো। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম সংস্থা অ্যালপাইনের কর্ণধার বরুণদেব ভট্টাচার্য। দু'জনে ছকে ফেললেন বুগিয়াল স্টার্টআপের প্ল্যান। এগিয়ে এলেন পুরুলিয়ার স্থানীয় ট্যুরিজম সংস্থা ছৌবুড়ির কর্ণধার সুজিতচন্দ্র কুমার। জ্বলে উঠল আইডিয়া বাল্ব। শুরু হয়ে গেল ক্যাম্প করার তোড়জোর। 

image


এভাবেই একটা মানুষের ট্র্যান্সফর্মেশন দেখল পুরুলিয়া। দেখল শহর কলকাতাও।

সোনকুপি বাঞ্জারা ক্যাম্প। এলাকাটা স্থানীয় বাজার হিসেবেই পরিচিত। এখান থেকে যাওয়া যায় অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে। রুক্ষ জমি এবড়ো খেবড়ো পথ। এতদিন ঝিমিয়ে ছিল গোটা চত্বর। বুগিয়ালের এই ক্যাম্পের দৌলতে চেগে উঠেছে সোনকুপি।চারিদিকে অস্পষ্ট ব্যস্ততা। জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসছে 'আমাদের উৎসব আছে।'

বহুবছর এই এলাকা উৎসব চিনত না। এখন তারাই আসর জমিয়েছে আগাম জলসার। দোলের আগের দিন থেকে তিন দিন চলবে উৎসব। পলাশ উৎসব। বুগিয়ালের এই আয়োজনে দল বেঁধে আসবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এলাকায় তাই সাজো সাজো রব। এই পলাশ উৎসব দিয়ে শুরু হবে বুগিয়ালের এই ক্যাম্প। এরপর এখানে নিয়মিত চলবে উৎসব। একা বুগিয়ালের উদ্যোগে ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সোনকুপি। টুরিস্ট পার্টি এলে দুটো পয়সার মুখ দেখতে পাবে গরিব গ্রাম। ভাবনাটা সেখান থেকেই শুরু। পাশাপাশি আরও বড় বাণিজ্যিক ভাবনাও তাড়িয়ে মারছে বুগিয়ালের তিন কর্তাকে। সন্দীপন বলছেন সবে তো শুরু এরপর আছে একে একে লোকসংস্কৃতি উৎসব, শিকার উৎসব। পরপর চলতেই থাকবে ক্যাম্পের কাজ। উৎসব মুখর হয়ে উঠবে পুরুলিয়া। কলকাতা আর প্রত্যন্ত পুরুলিয়ার মাঝে সেতু বেঁধে দেওয়ার কাজটা করতে চায় সদ্যজাত সংস্থা বুগিয়াল। শুধু পুরুলিয়া কেন, মন্দারমণিতেও এরকমই একটি সাংস্কৃতিক ঠেক তৈরি করতে চায় বুগিয়াল। সেখানেও থাকবে সন্দীপনের গ্রাম ভাবনার ছোঁয়া। তবে কুকুবুড়ুর গা-লাগোয়া গ্রামে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। সেজে গুজে রেডি সোনকুপি।

একসময় মাওবাদীদের ডেরা হিসেবে পরিচিত জঙ্গল-মহল এখন অনেকটাই ঠাণ্ডা। অভয় দিচ্ছেন সন্দীপন। বলছেন ভয় কীসের এখন এসব এলাকা নতুন করে বেঁচে উঠতে চাইছে দুটো পয়সার মুখ দেখতে চাইছেন কুকুবুড়ুর মানুষ। তাই ওরা এখন বুড়িবাড়ি পোড়ানোর তোড়জোড় করছে। দোল দিয়ে শুরু হবে উৎসবের পরব।

Read More

পুরুলিয়ার ‘মন্দিরনগরী’ কেন ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন নয় !

মকর পরবে জঙ্গলমহল পেল টুসুমন্দির

সেদিন সাহস দেখিয়ে ঠকেননি মৃন্ময় আর অভীক

নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁবেন গার্গী