কীভাবে হতাশার অন্ধকার থেকে সাফল্যের রাজপথে এলেন সৌম্যা

কীভাবে হতাশার অন্ধকার থেকে সাফল্যের রাজপথে এলেন সৌম্যা

Saturday December 10, 2016,

3 min Read

না পারা থেকে শেষপর্যন্ত পেরে ওঠার কাহিনিটাই হল সৌম্যা গুপ্তার সাফল্যের মোদ্দা কাহিনি। বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরেপরেই মুম্বইয়ের মেয়ে সৌম্যা পাইলট হওয়ার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা তাঁর জীবনে অঘটন ডেকে আনে।

image


এদিকে পাইলট প্রশিক্ষণের কোর্সটিও সমাপ্ত করতে পারেননি সৌম্যা। অনেক আশা নিয়ে ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন। লেখাপড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ-খরচা বাবদ ততদিনে ইতিমধ্যে ৫০ লক্ষ টাকা তাঁর পকেট থেকে খসে গিয়েছে। সৌম্যা দেশে ফেরেন ব্যর্থতার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে।

তারপর সচরাচর অন্য যে কোনও মানুষের সঙ্গে যা ঘটে থাকে, সৌম্যার ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই-ই। আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশী এমনকি বন্ধুবান্ধবের একাংশও তাঁকে ব্যর্থ হিসাবে চিহ্নিত করলেন। সৌম্যার বাবা একজন উদ্যোগপতি। পরিবারের অভিভাবকেরাও সৌম্যাকে সেইসময় বিরক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এবার সে এমন কিছু একটা করুক, যাতে কেরিয়ার তৈরি হয়।

সৌম্যা বললেন, আমার বয়স তখন ২১। শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে উচ্চ মাধ্যমিক। এই যোগ্যতা নিয়ে ভালো চাকরি পাওয়া সত্যিই কঠিন। তাও কোনওক্রমে মুম্বইয়ের একটা কল সেন্টারে মাসিক ২০ হাজার টাকা মাইনের একটা চাকরি জোগাড় করলাম। চাকরিটা করতে করতে কিছু টাকাও জমালাম। কেননা, কল সেন্টারের কাজটা করতে করতেই বুঝে গিয়েছিলাম, এ কাজটা আমার পক্ষে বেশিদিন করা সম্ভব হবে না। সেইমতো আট মাস পরে কল সেন্টারের কাজটা ছেড়ে দিই।

সৌম্যা হতাশায় ডুবে গিয়ে পুরোপুরিভাবে মুছে যেতে পারতেন। তাঁর যাবতীয় স্বপ্নই বিফলে যেতে পারত। তবে ভিতর থেকে এমন কোনও এক তাগিদ সৌম্যার ছিল, যা তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। এ ব্যাপারে মায়েরও সহায়তা পেয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

সৌম্যা গুপ্তা এখন এ দেশের নবীন প্রজন্মের মহিলা উদ্যোগপতিদের মধ্যে অগ্রগণ্যা।

সৌম্যা জানিয়েছেন তাঁর সেই লড়াইয়ের কাহিনি। জামাকাপড় ও ফ্যাশন বরাবর তাঁর পছন্দের বিষয়। হতাশার কঠিন দিনে সৌম্যা খুব ছোটভাবে পোশাক-আশাকের একটি বিপণি খোলেন নিজের বাড়িতেই। কিন্তু সমস্যা হল ব্যবসাটাকে এগিয়ে নিতে যেতে হলে দরকার পুঁজির। এদিকে ২১ বছর বয়সী মেয়েকে ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে রাজি নয়। ফলে সৌম্যা পড়লেন মুশকিলে। তাছাড়া, পোশাক-আশাক পরিয়ে মডেল শ্যুট করানোর জন্যে যে পরিমাণ টাকার দরকার, সেও সৌম্যার হাতে তখন ছিল না।

সৌম্যা বললেন, এই সময়ে অনেক অপরিচিতের সহায়তা পেয়েছি‌। অল্পবয়স্ক কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা আমার মডেল হয়েছেন। পেশাদার ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলে দিয়েছেন। ওঁদের তোলা ছবি পাঠাই Fashion & You এর মতো নামী অনলাইন ফ্যাশন পোর্টালে। সাড়া পেলাম। তারপর ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম।

এভাবেই এখন সৌম্যা গুপ্তা সফল। Fashion & You সৌম্যার কাজকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে ক্রমে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। মুম্বইয়ে একটি পরিত্যক্ত গ্যারেজকে অফিস বানিয়ে নিজের ব্যবসার সূত্রপাত করেছিলেন সৌম্যা। এখন মুম্বইয়ে তাঁর ১০০০ ও ৫০০০ স্কোয়ার ফুটের দুটি নিজস্ব অফিস। প্রতিমাসে অন্ত‌তপক্ষে ১ কোটি থেকে ১.২৫ লক্ষের ব্যবসা করছে তাঁর সংস্থা। বাত্সরিক ব্যবসার পরিমাণ টাকার অঙ্কে ১০ থেকে ১৫ কোটি।

২০১৫ সালে একজন সফল মহিলা উদ্যোগপতি হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছেন সৌম্যা। যে কোনও মানুষ তাঁর না পারাটিকে কীভাবে পারাতে বদলে দিতে পারেন, তারই অনন্য এক নজির সৌম্যা গুপ্তা।