উচ্চমানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কলেজ-শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের বন্ধু ‘ফেস’
কিছুটা কাকতালীয়ভাবেই ঘটেছিল স্টার্টআপ ফেস-এর জন্ম। একটি পথদুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের পাশাপাশি বিছানায় স্থান হয় ২০০৭ সালের কোঝিকোদ আইআইএম-এর দুই স্নাতক রাজেশ এবং ভেঙ্কটের। সেই সময় রাজেশ কর্মরত সিটিব্যাঙ্কে, ভেঙ্কট কাজ করেন কনসাল্টিং ফার্ম দেলয়ইত্তেতে। বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করার সময়ই তাঁদের নিজস্ব ব্যবসা করার দিকে ঝোঁক। নানা ধরনের ব্যবসায়িক ভাবনা তাঁদের মাথায় ঘুরপাক খায়। পছন্দের কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে প্রায়ই হয় এ’সব নিয়ে আলোচনা। হাসপাতালে থাকার সময় পাশাপাশি বিছানায় চিকিৎসারত একদা দুই সহপাঠীর মাথায় আসে স্টার্টআপ হিসেবে ক্যাট প্রশিক্ষণ সংস্থা ফেস-এর ভাবনা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছাড়ার। জন্ম নেয় ফেস। কিছু দিনের মধ্যেই ফেস অর্থাৎ ফোকাস অ্যাকাডেমি ফর কেরিয়ার এন্হান্সমেন্টের কার্যকারিতা কার্যত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় দেশের সুপরিচিত একই ধরনের সংস্থা টাইম এবং আইএমএস-কে। যদিও এই মুহূর্তে ক্যাট প্রশিক্ষণ ফেস-এর আয়ের প্রধান জায়গা নয়, তবু আজও দেশের কয়েকটি অঞ্চলে দেশের অগ্রনী সংস্থাগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করছে ফেস।
কী করে এল ফেস-এর ভাবনা?
ভেঙ্কটের কথায়, “রাতারাতি এই ভাবনা মাথায় আসেনি। কিন্তু আমরা এমন কোনও ব্যবসা করতে চেয়েছিলাম, যা কিনা শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত। কেন না, রাজেশ এবং আমি দুজনেই এই ক্ষেত্রটিতে ব্যবসা করার বিষয়ে প্রবলভাবে আগ্রহী ছিলাম।“ প্রাথমিকভাবে ক্যাট দিয়ে এমবিএ করতে ইচ্ছুকদের প্রশিক্ষণ দিতেন রাজেশ এবং ভেঙ্কট। কিন্তু সেখানে দেশের প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ছিল অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু অচিরেই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল। একটি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডাক এল। সেই সংস্থার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তাঁরা ক্যাটে কৃতকার্য হতে পারেন। ভেঙ্কটের বক্তব্য, “এই সময়ই আমরা উপলব্ধি করলাম যে, এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগটিকে আজও টু-হান্ড্রেড মিলিয়ন ডলার সুযোগ বলে আমাদের মনে হয়। কেন না, সেই সময় ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উচ্চতর শিক্ষাঙ্গনের জন্য প্রস্তুত করে তোলার মতো কোনও সুসংগঠিত সংস্থা সেই অঞ্চলে ছিল না।“
সহজ পরিচালন এবং ইউএসপি
২০০৮ সালে জন্ম হলেও, সাফল্য এসেছে খুবই দ্রুত। ছাত্রছাত্রী এবং কর্পোরেটদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উচ্চতর শিক্ষাঙ্গনের জন্য প্রস্তুত করা বা কোনও নামী সংস্থার জন্য উপযুক্ত করে তোলার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ফেস সব অর্থেই মার্কেট লিডার। কেন না এই সংস্থার রয়েছে ভারতে একই ধরনের সংস্থাগুলির মধ্যে বৃহত্তর প্রশিক্ষক দল। ভেঙ্কট জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত আইআইটি মাদ্রাজ থেকে শুরু করে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর প্রায় চারশোর ওপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচ লক্ষ পঞ্চাশ হাজারের ওপর ছাত্রছাত্রীকে প্রশক্ষণ দিয়েছে তাঁদের সংস্থা। ভেঙ্কটের গর্বিত উচ্চারণ, “আমরাই সেই সংস্থা যা কিনা, সংস্থার ক্লায়েন্ট, ভিআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছি। আমাদের সংস্থার প্রশিক্ষণের গুণেই ওই প্রতিষ্ঠানে একই ক্যাম্পাস ইন্টারভ্যুতে কগনিজান্টের কাছ থেকে ১৮২০ জন শিক্ষার্থী চাকরির ডাক পেয়েছেন।“ কগনিজান্ট, উইপ্রো-সহ ভারতের বৃহত্তম নিয়োগকারীসংস্থাগুলির সঙ্গে ফেস-এর ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুপ্রতিষ্ঠিত। সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয় কোয়েম্বাটরে। এখন সেই সংস্থাই চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং মুম্বাইয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটির রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস। এই অফিসগুলির প্রতিটি থেকেই পাঁচশো কিলোমিটার পরিধির মধ্যে থাকা কলেজগুলিতে পরিষেবা দেওয়া হয়।
ফেস
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে প্রবলেম সলভিং, কমিউনিকেশন, অ্যানালিটিকাল এবিলিটি ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে প্রশক্ষণ দিয়ে থাকে ফেস। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দক্ষতা উন্নয়ন শিক্ষা (স্কিল ইমপ্রুভমেন্ট এডুকেশন)-সহ জ্ঞানার্জনের শিক্ষা (নলেজ বেস্ড এডুকেশন) দেওয়ার চুক্তি রয়েছে এই সংস্থার। সংস্থাটির রয়েছে ১৫০ জনের ওপর প্রশিক্ষক। যাঁদের উপযুক্ত করে তোলার কাজটি মূলত করেন রাজেশ এবং ভেঙ্কট। এর পর তাঁদের প্রত্যেককে বিভিন্ন কলেজে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার তালিম দিতে হয়। ফ্রিলান্স প্রশিক্ষকের কোনও জায়গাই নেই ফেস-এ। এখানকার সমস্ত প্রশিক্ষকই সংস্থার সর্বক্ষণের কর্মী। প্রশিক্ষণের নিজস্ব প্রযুক্তি রয়েছে এই সংস্থার। যার মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা, ওনলাইন টেস্টিং টুল ইত্যাদি।
মোকাবিলা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালায় এমন অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলি চলে কর ফাঁকি দেওয়ার মতলবে এবং মুনাফার লোভে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উপযুক্ত প্রশিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তাদের মনযোগ থাকে না। ফলে অনেক অনুপোযুক্ত ব্যক্তি কিংবা ছোটখাটো সংস্থা এই সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করে নিম্নমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। ভেঙ্কটের বক্তব্য, “চার বছর ধরে ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাস ইন্টারভ্যুয়ের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না দিয়ে, অনেক কলেজই স্টেজে বাজিমাত করতে চায়।“ সাধারণত, এই ক্ষেত্রে অধিকাংশ বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজই নিম্নমানের প্রশিক্ষক বা প্রশিক্ষণ সংস্থা নিয়োগ করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দক্ষিণ ভারতে সাফল্যের পর, এবার দেশের পশ্চিমে ও মধ্যভারতে ডানা বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে ফেস-এর। ভেঙ্কট জানিয়েছেন, “অতীতে এনসিআর-এ কাজ করেছে তাঁদের সংস্থা, সেই কারণেই খুব শীঘ্রই সেখানে পূর্ণোদ্দমে কাজ শুরু করা হবে। উপরুন্তু, সংস্থার পরিষেবাপ্রাপ্ত কয়েকটি কলেজেও সাফল্যের সঙ্গে প্রযুক্তির সাহায্যে বিকল্প ডেলিভারি মডেলের পরীক্ষা চালিয়েছে ফেস।“ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে প্রচলিত মডেলের পরিবর্তে বিকল্প ডেলিভারি মডেলকে নিয়ে আসবে ফেস। পাশাপাশি, মেধার সন্ধানে হায়ারফ্রমকলেজ নামের একটি অভিনব পরিষেবা ইতিমধ্যেই চালু করেছে এই সংস্থা।