লক্ষ্মীর মুখে হাসি ফুটল ফাইনালি

লক্ষ্মীর মুখে হাসি ফুটল ফাইনালি

Saturday November 07, 2015,

2 min Read

লক্ষ্মী ফের শিরোনামে। এবার আর তীব্র যন্ত্রণার খবর হয়ে নয় বরং মানবিকতার জয়ী মুখ হিসেবে ফিরে এসেছেন পত্রপত্রিকার 'কভার গার্ল' হয়ে। মাস সাতেক হল মা হয়েছেন লক্ষ্মী। মেয়ের নাম রেখেছেন পিহু। সন্তানের বাবা অলক। এত পরিচয়ের মাঝখানে যে পরিচয় অনেকেরই জানা, আবার কেউ কেউ ভুলে গিয়েছেন তাহল আমাদের এই লক্ষ্মীর কথা।

image


শান্ত, স্নিগ্ধ ষোড়শীর সেই বেদনাদীর্ণ গল্প শুনে একসময় আঁতকে উঠেছিল শীর্ষ আদালতও। অপ্রেম আর প্রতিহিংসার শিকার হওয়া দিল্লির এই মেয়ের মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল এক দুর্বৃত্ত। তারপর থেকেই সামান্য মেয়েটির অসামান্য লড়াই দেখেছে দিল্লি থেকে ওয়াশিংটন ডিসি। ২০০৫ থেকে ২০১৫। এই দীর্ঘ দশ বছরে কুঁচকানো চামড়া, বিভৎস মুখের এই মেয়েটি হয়ে উঠেছেন নিপীড়িত অ্যাসিড আক্রান্ত নারীদের মুখ। অ্যাসিড হানা বন্ধ করার জন্যে গোটা দেশ তোলপাড় করে প্রচার করেছেন। টেলিভিশনের পর্দায় এসেছেন। অ্যাসিড আক্রান্তদের হয়ে সওয়াল করেছেন। গোটা পৃথিবী দেখেছে। অ্যাসিড বিক্রি নিয়ন্ত্রণের জন্য ২৭ হাজার সই সংগ্রহ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে অ্যাসিড বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। সংসদে বিষয়টির আইনি আলোচনার জন্য সুপারিশ করেছে। তাঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে দিল্লি এসেছেন মিশেল ওবামা। আন্তর্জাতিক সাহসী নারীর সম্মান দিয়েছে ওবামা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

এসব গল্প অনেকেই জানেন। বরং যেটা অনেকেই জানেন না। সেটা হল অলক দীক্ষিতের কথা। অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করেন অলোক। ২৭-২৮ বছরের সাহসী তরুণ। সমাজের কাজেই নিজেকে ব্যপৃত রাখতে ভালোবাসেন। চলার পথে আলাপ হয় লক্ষ্মীর সঙ্গে। প্রথম দেখায় প্রেম। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওঁরা পেতে বসেন লিভ-ইন সংসার। দুজনের সেই সংসারে বসন্ত নিয়ে এসেছে পিহু। মাস সাতেক আগে মা হয়েছেন লক্ষ্মী। অলোক বলছিলেন, মাতৃত্বের সময় কুন্ঠিত ছিলেন লক্ষ্মী। ভাবছিলেন তাঁর সন্তান যদি তার রূপে বিরক্ত হয়! যদি তাঁকে ভালো না বাসে! এরকম অসংখ্য 'যদি' লক্ষ্মীর মনে ঘুরপাক খেত। কিন্তু পিহুই পেরেছে তাঁর মার সমস্ত ভুল ধারণা ভেঙে দিতে। হাসকুটে পিহুর মুখের হাসি মিলায় না। মাকে ভীষণ ভালোবাসে। বলতে বলতে চোখ ছলছল করে উঠছিল অলোকের।

image


লক্ষ্মী এবার ব্যবসা করতে চান। পরের মাসেই লক্ষ্নৌয়ে একটি কাফে খোলার কাজে উঠে পড়ে লেগেছেন। নাম দিচ্ছেন Sheroes café। পিহুও দিব্যি ঘুরছে মায়ের কোলে কোলে। বেশিরভাগ সময়টাই অ্যাসিড হানায় আক্রান্তদের আন্দোলনের কাজের পরিবেশের মধ্যেই বড় হয়ে উঠছে পিহু। তাই ওর প্রিয় কোলগুলো বেশিরভাগই অ্যাসিড হানার শিকার। লক্ষ্মীর স্বপ্ন ওঁর সন্তান যেন মানুষের শুধু ওপরের নয় গভীরের রূপটাও দেখতে পায়।