সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশালের জলদস্যুরা
জলদস্যুদের সঙ্গে সুন্দরবনের অন্দর মহলে খাঁড়ির আনাচে কানাচে ঘুরতে চান।শুনতে চান সাহেব গাইডের মুখে অতীতের পাতায় হারিয়ে যাওয়া হুগলী নদীর দুপাড়ের ইতিহাস।গঙ্গায় ক্রুজে করে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে মাততে চান হুল্লোড়ে।সব পাবেন। আপনার ঘুরে বেড়ানোর সব চাহিদা মেটাতে তৈরি কলকাতার অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম সংস্থা ক্রস ইন্ডিয়া।
বরাবরই ঘুরতে ভালোবাসতেন ক্রস ইন্ডিয়ার ফাউন্ডার কাম সিইও বিশাল টাপার। সোলো বা গ্রুপ মোটর সাইক্লিং ট্যুরও করতেন। নতুন জায়গা দেখার টানে বাইক নিয়ে কলকাতা থেকে লখণৌও পাড়ি দিয়েছেন মোটরসাইকেলে। নেশাকেই পেশা করতে চাকরি ছাড়লেন একটি কোম্পানীর এইচ আর হেডের। আর ২০১৪ সালে বিশাল তৈরি করলেন তার ট্রাভেল কোম্পানি ক্রস ইন্ডিয়া। দুবছর পেরিয়ে যা এখন কলকাতার ট্যুর অপারেটর জগতে রীতিমত পরিচিত ব্র্যান্ড।
শুরুর কথা
ভ্রমণ পিপাসু কলকাতার মানুষকে কোনও জায়গা শুধু ঘুরিয়ে দেখানোতেই আটকে রাখতে চাননি বিশাল। প্রচলিত ট্যুর এর কনসেপ্টকে কিভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায় তা নিয়েই ভাবনা চিন্তা করেছেন। এনেছেন থিমেটিক টাচ। চাইতেন জায়গা ঘুরে দেখার পাশাপাশি যাতে লোকজনের ইনভলভমেন্ট আরও বাড়ানো যায়। যাতে প্রত্যেকটা জার্নি আরও স্মরণীয় হয়ে থাকে। বেশ কিছু দিন পরিকল্পনা করার পর সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি ছাড়ার। একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির এইচ আর হেডের চাকরি ছেড়ে তৈরি করলেন নিজের ট্যুর কোম্পানি। ২০১৪ এর মে মাসে চার লাখ টাকা মূলধন দিয়ে যাত্রা শুরু করল বিশালের ক্রস ইন্ডিয়া। শুরুর পথ মসৃণ ছিল না।অনেক ধাক্কা খেলেন। অনেক শিখলেন। উঠলেন পড়লেন। আবার ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ওই বছরেরই শেষের দিকে সংস্থায় যোগ দিলেন বিশালের বন্ধু শেরিফ ড্যানিয়েল। ক্রস ইন্ডিয়ারই একটি ট্যুরে বিশালের সঙ্গে আলাপ হল আই টি প্রফেশনাল স্বর্ণেন্দুর। একটি বিজনেস মিটে রীতেশ ওস্তার সঙ্গে পরিচয়ও গড়াল অনেক দুর। বছর গড়িয়ে স্বর্ণেন্দু আর রীতেশ দুজনেই এখন ক্রস ইন্ডিয়ার কো-ফাউন্ডার এবং ডিরেক্টর।
তবে শুধু ট্যুর অপারেটর নয়। ক্রস ইন্ডিয়াকে রাজ্যের প্রথম "সফট অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর অপারেটর" বলে পরিচয় করাতেই ভালবাসেন বিশাল। দাবি, তাঁদের সংস্থাই প্রথম সুন্দরবনের মাটিতে এরকম সফট অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরের আয়োজন করছে।
কিভাবে এই পাইরেট পার্টির ধারনা প্রথম তাঁদের মাথায় এল?
আমরা বন্ধুরা মার্কেট রিসার্চ করে দেখেছিলাম কলকাতার কাছে পিঠে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের জায়গা খুব একটা নেই। অ্যাডভেঞ্চারের টানে বেশির ভাগ লোকজনই ট্রেনে, বাসে বা ফ্লাইটে করে উত্তরবঙ্গে পাড়ি দেন। কিন্তু ঘরের কাছে সুন্দরবন থাকতে এত দূরে কেন! আমরা এমন একটা থিম চাইছিলাম যেটা সব বয়সের লোকজনকেই সমান আকর্ষণ করবে। আর সুন্দরবন বলতেই বাঘ মৌমাছি হোগলা পাতা সুন্দরীগাছ ছাড়া ডাচ ওলোন্দাজ আরাকন এমনকি হালফিলের জলদস্যুর কথাও মাথায় হাতুড়ি মারে। ব্যাস জ্বলল আইডিয়া বাল্ব। ক্রস ইন্ডিয়া পাইরেট পার্টি থিম হিট করে গেল। এখন আমাদের কোম্পানির সবচাইতে জনপ্রিয় ট্যুর এই পাইরেট পার্টি।'' বললেন বিশাল।
ক্রস ইন্ডিয়ার ট্যুরে খাঁড়িতে নৌকাভ্রমণ, জঙ্গল ওয়াক, রাতে নৌকাভ্রমণ, ক্রোকোডাইল অ্যাইল্যান্ড, ক্যাম্পিং সব কিছুরই মিশেল রয়েছে। সংস্থার কোনও একজন ডিরেক্টর প্রতি ট্যুরে পর্যটকদের সঙ্গে অবশ্যই যান। তিনিই তাঁদের ট্যুর গাইড। এই পার্সোনাল কেয়ারই সংস্থার ইউএসপি।
চারজন কো-ফাউন্ডারই ঘুরতে সমান ভালবাসেন। এটিই ক্রস ইন্ডিয়া টীমের সাফল্যের মূল রসায়ন। দাবি ক্রস ইন্ডিয়ার অন্যতম কো-ফাউন্ডার স্বর্ণেন্দু দের।স্বর্ণেন্দুর মতে "নিজে দেশে বা বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে দেখেছি ঠিক কোথায় কোথায় সমস্যা হয়। প্রথমেই চেষ্টা করেছি সেই সব সমস্যা যাতে আমাদের ট্যুরে এসে লোকজন ফেস না করেন। আর সুন্দরবন ট্যুরের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে পরিবেশগত তথ্যের অভাব। জোয়ার ভাঁটা, নৌকোর রুট সবকিছুই আমরা আমাদের পর্যটকদের ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করি। সেকারণে আমাদের ট্যুরে একবার জলদস্যুর টুপী পড়লে বেশির ভাগ গ্রাহকই আবার ফিরে আসেন সেই অভিজ্ঞতার শরীক হতে। নিদেনপক্ষে রেফারাল পাঠান। তাদেরকে খুশি করতে বেশ ভাল লাগে। তবে শুধু লোকজনকে আনন্দ দেওয়া নয় পরিবেশগত দিকও মাথায় রাখি আমরা। এছাড়া স্থানীয় মানুষ আমাদের ট্যুরের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এতে পুরো ট্যুরে একটা কমপ্লিট ইনভলভমেন্ট পাওয়া যায়।"
এইচ আর হেডের চাকরি ছেড়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলে স্বাধীন ট্যুর অপারেটরের জীবন। কেমন লাগে বিশালের ?
বললেন,"তেত্রিশ বছর বয়স এখন আমার। চাকরি ছাড়ার পর ব্যবসা করতে গিয়ে গত দুবছরে যা শিখেছি তার কোনও তুলনা নেই। মানুষ হিসাবে অনেক পরিণত হয়েছি। সবচাইতে ভাল লাগে যখন আমাদের সঙ্গে ঘুরে এসে লোকজনের মুখে হাসি দেখতে পাই। সেটাই তো আমাদের ব্যালেন্স শিটে প্রফিট মার্ক।"