সফ্টওয়্যারে দক্ষতা বাড়াতে Udacity-র অনলাইন কোর্স
ফ্যাক্ট ১-প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার পরেই ভারত। সফ্টওয়্যার ডেভেলপারের সংখ্যায় বিশ্বে ঠিক এতটাই উঁচুতে অবস্থান ভারতের। ভারতে সফ্টওয়্যার ডেভেলপারের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। ২০১৮ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৪০ লক্ষে। আর তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও পিছনে ফেলে দেবে ভারত।
ফ্যাক্ট ২- ভারতে সফ্টওয়্যার ডেভেলপারের সংখ্যা এত হলেও অ্যাপস (অ্যাপ্লিকেশন) তৈরির ক্ষেত্রে অবদান মাত্র ২ শতাংশ। যা ভারতকে গুগলের টপ ১০০০-এ জায়গা করে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রথম একশোয় ঠাঁই মেলেনি।
ভারতের এই হাল কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন ডিগ্রিধারী ছাত্রছাত্রী কাজের বাজারে পা রাখার পরে সেই অর্থে আর তাঁর দক্ষতায় শান দিতে পারে না। নিজেকে আপগ্রেড করতে পারে না। আসলে সেই পরিবেশটাই নেই। কিন্তু নতুন-নতুন প্রযুক্তি সবসময় আসছে, নিজেকে এর উপযোগী রাখাটা একান্ত জরুরি। ঠিক সেখানটাতেই ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। জব স্কিলের আপগ্রেডেশন করার মতো তেমন একটা অনলাইন কোর্স নেই। বছর খানেক আগে এই বিষয়টির দিকে নজর দেয় একটি সংস্থা। সেটাই Udacity.
Udacity প্রতিষ্ঠার গল্প লুকিয়ে রয়েছে Stanford University-তে। একটা পরীক্ষামূলক উদ্ভাবনে। যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দু'জন। Sebastian Thrun ও Peter Norvig. সকলের জন্য অনলাইনে “Introduction to Artificial Intelligence” নিয়ে আসেন তাঁরা। বিষয়টা যাঁর ব্রেনচাইল্ড সেই সেবাস্তিয়ান স্ট্রানফোর্ডেরই প্রোফেসর এবং গুগলের প্রাক্তন রোবোটিসিস্ট। অনলাইনে বিনামূল্যে কলেজ কোর্স। এমন একটা বিষয় জানাজানি হতেই শিক্ষাজগতে হইহই পড়ে যায়। যাতে নাম লেখায় ১৯০টি দেশের ১,৬০,০০০-এরও বেশি ছাত্রছাত্রী। এই পথেই কিছুদিন পরে জন্ম নেয় Udacity.
Udacity নামটা শুনলে প্রথমেই মনে আসে ইংরেজি audacity-র কথা। অডাসিটি অর্থাৎ দুঃসাহস। নামটা সেখান থেকেই বেছে নিয়েছেন সেবাস্তিয়ান। সফ্টওয়্যারে ছাত্রছাত্রীরা যেন দুঃসাহসী হতে পারে। সঙ্গে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরণ। ঠিক এটাই মিশন উডাসিটির। যে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন একদল শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞ। যাদের কাজই হচ্ছে শিক্ষার ভবিষ্যৎ অভিমুখের পরিবর্তন ঘটানো। যাতে এইক্ষেত্রে যে ধরনের শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মীর প্রয়োজন তার ঘাটতি কমে আসে।
ভাবা এক আর মাঠে নেমে কাজ করা আর এক ব্যাপার। লক্ষ্য পূরণ করতে একসময় কাজ শুরু করে দিল উডাসিটি। সহজ কথায় ডাইরেক্ট অ্যাকশন। অনলাইন এডুকেটরস অনেকেই আছেন। কিন্তু প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনলাইনে বৃত্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া লোকের বড়ই অভাব। একথাও ঠিক যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু যখন একজন কর্মজগতে পা রাখেন, তখন তাঁকে সাফল্য এতে দিতে যে প্রশিক্ষণ দরকার সেটা কমই মেলে। সেই প্রয়োজন মেটাতেই নিরন্তর গবেষণায় তৈরি হল Nanodegree program. যা একজন সফ্টওয়্যার ডেভেলপারের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, সাফল্য এনে দেবে। একজন successful professional-এর সঙ্গে একজন educated professional-এর ফারাক কোথায়? দু'জনেরই বেসিক ডিগ্রি থাকে। কিন্তু প্রথমজন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে (বিশেষ করে প্রোগ্যামিং, ডেভেলপিং) সবসময় নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। সেটাই তার সাফল্যের চাবিকাঠি।
ন্যানোডিগ্রি প্রোগ্যাম
ন্যানোডিগ্রিকে আর পাঁচটা ডিগ্রির সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না বলেই উদ্যোক্তাদের দাবি। দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখার জন্য এই সার্টিফিকেট নয়। তাঁদের বক্তব্য, এটা এমন একটা প্রোগ্যাম যাতে দক্ষতা বৃদ্ধি পায় আর আর্থিক উন্নতি সুনিশ্চিত হয়। কোনও একজনের শিক্ষাগত যোগ্যতা আর প্র্যাকটিক্যাল দক্ষতা, এই দু'য়ের মধ্যে যে মিসিং লিঙ্ক সেটাই খুঁজে বের করে এই অনলাইন মডেল। যা একইসঙ্গে সকলের নাগালের মধ্যে ও কম ব্যয়সাধ্য।সিলিকন ভ্যালির বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এই কোর্স ডিজাইন করা হয়েছে। এই কোর্সে ছাত্রছাত্রীরা গ্লোবাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজেক্টে হাতেকলমে শিক্ষালাভ করেন।বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সহপাঠীদের সঙ্গেও আদানপ্রদান চলতে থাকে তাঁদের।
একজন নিয়োগকারী যে ধরনের কর্মী চান, ছাত্রছাত্রীদের তেমনভাবেই তৈরি করার চেষ্টা করে উডাসিটি। ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এর পাঠ্যক্রম। যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে AT&T, Google, Facebook-সহ বহু নামজাদা সংস্থা। ভারতে প্রথম হিসাবে প্রযুক্তি ক্ষেত্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সংস্থা Google-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে উডাসিটি। জব ট্রেনিংয়ের এই সার্ভিস মডেলকে ভবিষ্যতে কোডিং শিক্ষাদানের কাজেও লাগাতে চায় উডাসিটি।
ভারতে যারা এই কোর্স করবেন আর্থিক দিক থেকেও তারা লাভবান হবেন। ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য এই কোর্সের ডিসকাউন্টেড প্রাইস রাখা হয়েছে মাসিক ৯৮০০ টাকা। যা মার্কিন মুলুকের তুলনায় কিছুটা কম। সেখানে একজনকে দিতে হয় প্রতি মাসে ২০০ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৩ হাজার টাকা। এই কোর্স সম্পূর্ণ করতে সময় লাগে গড়ে ৬ থেকে ৯ মাস।কোর্স শেষ হওয়ার পের ইনসেন্টিভ হিসাবে টিউশন ফি'র অর্ধেকটা রিফান্ড করে থাকে উডাসিটি। সঙ্গে রয়েছে এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য স্পেশ্যাল স্কলারশিপ। ন্যানোডিগ্রিতে স্কলারশিপের জন্য Google ও Tata Trust-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে উডাসিটি। দু'টি সংস্থাই ৫০০ জন করে যোগ্য ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপের দায়িত্ব নিয়েছে। এখানেই শেষ নয়।২০১৬-তে বেঙ্গালুরুতে Android Development Career Summit করার পরিকল্পনা নিয়েছে গুগল। সেখানে সেরা ৩০ ছাত্রছাত্রীকে যোগদানের জন্য ডাকা হবে। তবে উডাসিটির ন্যানোডিগ্রি প্রোগ্যামে নাম লেখাতে গেলে একজন প্রার্থী কিছু ধাপ টপকাতে হয়। তবেই মিলবে দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ।
ন্যানোডিগ্রিতে দক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন বিকল্প বা ধাপ রয়েছে। যাদের প্রোগ্যামিংয়ে অভিজ্ঞতা নেই তাদের জন্য রয়েছে “Beginning iOS App Development”. আপনি যদি একজন ইন্টারমিডিয়েট স্কিল লেভেলের প্রোগ্যামার হন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে “Android Developeprogram। যা আপনাকে Android development-এ মাস্টার লেভেলে পৌঁছে দেবে। এরপর রয়েছে ‘Tech Entrepreneur’ প্রোগ্যাম।এছাড়াও রয়েছে আরও বহু প্রোগ্যাম যাতে কোনও একজন Full Stack Web Developer, Front end developer, Programmer কিংবা দক্ষ Data analyst হয়ে উঠতে পারেন।
গত একবছরে প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রীর দক্ষতা বাড়াতে সমর্থ হয়েছে উডাসিটি। ইতিমধ্যে ভারত, ইজিপ্ট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮ হাজার ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দিয়েছে উডাসিটি। সংস্থা মনে করে, শিক্ষার কোনও বয়স বা ভৌগোলিক সীমারেখা থাকতে পারে না। সংস্থার বিভিন্ন অনলাইন কোর্সের ব্যাপারে জানা যাবে www.udacity.com সাইটে।