অনির্বান-সম্রাটদের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়রদের Finishing School

অনির্বান-সম্রাটদের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়রদের Finishing School

Thursday April 28, 2016,

4 min Read

“Stay Hungry, Stay Foolish”- Steve Jobs

বছর কয়েক আগে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক জোয়ার এসেছিল, রাজ্যের বিভিন্ন নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অনামী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে আইটি সেক্টরে চাকরি করতে ঢোকাই ছিল রেওয়াজ। উজ্জ্বল ছাত্রদের এহেন আইটিমুখী হয়ে ওঠা কপালে ভাঁজ ফেলছিল কোর কোম্পানিগুলির। বেশি বেতন, কায়িক শ্রম কম, দ্রুত উন্নতি ইত্যাদি নানা যুক্তিতে আইটি কোম্পানিগুলিতে ভিড় জমাতো সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা যুবক যুবতী। তবে হালে এই ধারা কিছুটা বদলেছে। এক দিকে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিশ্ব আর্থিক মন্দার প্রভাব, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কর্মীর উপস্থিতি, অন্যদিকে নিজের বিষয়ে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা তরুণ সমাজকে আবার কোর কোম্পানিমুখী করে তুলেছে। অনেকেই আজকাল আইটির পরিবর্তে বেছে নিচ্ছেন কোর কোম্পানির চাকরি। তবে এক্ষেত্রে প্রায়শই কিছু সমস্যায় পড়তে হয় ছাত্র ছাত্রীদের। নিজেদের বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকলেও চাকরির বাজারে হালে পানি পান না অনেকেই। বিশেষত বিভিন্ন সদ্য গড়ে ওঠা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে বা ডিপ্লোমা করে চাকরিতে ঢোকার ক্ষেত্রে একটা ফাঁক থেকে যায়, নিজেদের জীবনেও এধরণের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন অনির্বাণ চ্যাটার্জি ও সম্রাট বিশ্বাস। সেখান থেকেই বিশেষত এই সমস্যা মেটানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা মাথায় আসে।

image


অনির্বাণ ও সম্রাট দুজনেই ২০১২ সালে, ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক পাস করেছেন। এর পর বছর আড়াই একটি স্ট্রাকচারাল কনসাল্টিং ফার্মে কাজ করেছেন, বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (ক্যালকাটা) এ এক্সিকিউটিভ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সম্রাট ডেভেলপার ফার্মে বছর খানেক কাজ করার পর এনআইটি-রৌরকেল্লাতে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে এম-টেক করেছেন।

২০১৪ তে দুই বন্ধু শুরু করেন ফিনিশিং স্কুল ফর ইঞ্জিনিয়ারস। অনির্বাণ বললেন, “এটা কোনও অ্যাকাডেমিক ইনস্টিটিউশন বা জব কনসালট্যান্সি নয়, আমরা সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল ইত্যাদি কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়গুলির ওপর প্রশিক্ষণ দিই, যাতে ছাত্র ছাত্রীরা চাকরির জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে”।

২০১৪ তে পাইলট রানের পর ২০১৫ তে চাকরি ছেড়ে ব্যবসাতে পুরোপুরি মন দেন অনির্বাণ ও সম্রাট।

বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্যক্তিগত ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানি ও কলেজের হয়েও প্রশিক্ষণ দেয় ফিনিশিং স্কুল ফর ইঞ্জিনিয়ার্স। এখন অবধি ৫টি কলেজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা। প্রশিক্ষণ দিয়েছে ৭০০ এরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে।

উন্নতমানের প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করতে বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ফিনিশিং স্কুল ফর ইঞ্জিনিয়ার্স। বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া তাদের অ্যাসেসমেন্ট বডি হিসেবে কাজ করে।

অনির্বাণ বললেন, “নিজেদের এই ব্যবসা করতে গিয়ে কী কী না করতে হয়েছে। ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বাংলার নানা মফস্বল ও ছোট শহরে গিয়ে প্যামফ্লেট বিলি করা থেকে দিল্লিতে সেন্ট্রাল মিনিস্ট্রি অফ কন্স্ট্রাকশনের কাছে নিজেদের পরিকল্পনা পরিবেশন, সবই করেছি। অনেক কিছুই শিখেছি এই কদিনে”।

অনির্বাণ মনে করেন তাঁর উদ্যোগের জীবনের যাত্রা তাঁকে একটা জিনিস শিখিয়েছে, যতক্ষণ না একজন নিশ্চিত হচ্ছ একটা কাজ সে কেন করছে, ততক্ষণ সেই কাজে হাত দেওয়া উচিত না। তিনি আরও যোগ করলেন, “নিজস্ব উদ্যোগ ও ইগো দুটো এক সাথে চলতে পারেনা। ব্যবসায় সফল হতে হলে ইগো বিসর্জন দিয়েই নামতে হবে”।

কোর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে এধরণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ধারণা বেশ নতুন। তাই কোম্পানিগুলিকে বিষয়টি বোঝাতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে অনির্বাণদের। এটি যে কোচিং ক্লাস বা কনসালটেন্সি নয় এটাই কেউ বুঝতে চাইত না, এই মানসিকতার বদল ঘটানোটা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও অন্য যেকোনও স্টার্টআপের মতই প্রতিভাবান ও প্যাশনেট কর্মী খুঁজে পাওয়াটাও ছিল শক্ত।

এনআইটি রৌরকেল্লা থেকে তাদের কোর্সের অ্যাক্রিডিয়েশন পেয়েছে এফএসই। এছাড়াও আইআইএম-ব্যাঙ্গালোর থেকে অন্যতম সেরা স্টার্টআপের পুরস্কারও পেয়েছে তারা।

ইতিমধ্যেই ওড়িশা ও কর্ণাটকে কাজ শুরু করেছে এফএসই। আগামী তিন বছরের মধ্যে আরও ৫০,০০০ ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তারা।

উদ্যোগের দুনিয়ায় আসতে চাওয়া তরুণ তরুণীদের জন্য অনির্বাণের পরামর্শ, “শুধু মাত্র ব্যবসা করার জন্য বা বন্ধুদের মধ্যে একটু অন্যরকম দেখানোর জন্য কোনও ব্যবসা শুরু করবেন না। বাস্তব জীবনের সমস্যা যা সত্যিই আপনাকে ভাবায়, সেই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রকে মাথায় রেখে ব্যবসা পরিকল্পনা করুন, ফান্ডিংয়ের পিছনে ছুটবেন না, গ্রাহকদের ওপর নজর দিন, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের ওপর নয়”।

নিজেদের ব্যবসার ক্ষেত্রেও এই বিষয়গুলিই মাথায় রেখেছেন অনির্বাণ ও সম্রাট। জানালেন, “বেশ কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে বর্তমানে আমরা বাজার বৃদ্ধিতেই মনযোগ দিচ্ছি। এবছরের পরের দিকে অন্যান্য শহরে কাজ বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ সংগ্রহ করব আমরা”।

স্টিভ জোবসের একটা কথাই পাথেয় অনির্বাণদের, “Stay Hungry, Stay Foolish”।