ডুয়ার্স কানহা হয়ে কিনিয়া, স্বপ্ন দেখছে ট্যুরিয়ানা
বনে বাঁদারে ঘুরে বেড়াতে ভালোই লাগে। বরফ ঢাকা পাহাড় আর শ্যাওলা মাখা নদী ডাক দিলেই মন উড়ু উড়ু। সময়, সামর্থ্য আর সুযোগ না থাকলে সে গুড়ে বালি। হাওড়ার অর্ণব হাজরা এই তিনটের একটা সহজ সমীকরণ করেছেন। ঘুরে বেড়ানোর দারুণ রাস্তা।
সময়টা ২০১০ হবে, প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন অর্ণব। ভালো করে শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু নিজস্ব পারিবারিক ব্যবসার কাজ সামলে সময় আর সুযোগ কোনওটাই যেন পাচ্ছিলেন না। মাঝেমাঝেই ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা হত পকেট অনুমতি দিত না। কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার নেশাও তাঁকে ঘরে বসে থাকার অনুমতি দিতে নারাজ। তাই ভাবতে শুরু করেন কি করলে দুটোই একসাথে সম্ভব। এরপরই মাসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন TOURIANA খুলবেন।বেড়াতে যাওয়ার ব্যবসা। পাঁচ বছরে তাঁরা বেশ জমিয়ে বসেছেন।
ছোটবেলা থেকেই ঘুরতে ভালবাসেন অর্ণব। সময় পেলেই বেরিয়ে পড়তেন পাহাড় কিংবা জঙ্গলে। সময়ের সাথে সাথে জীবনে ব্যাস্ততা বাড়তে থাকে, নিত্যদিনের কাজের মধ্যে কোথাও যেন তৈরি হচ্ছিল একটা শূন্যস্থান। ভাবতে শুরু করেন যে কিছু একটা করতে হবে যাতে ঘোরার ইচ্ছাটাও পূরণ হয়, সাথে রোজগারও। যেমন ভাবা তেমন কাজ। লোকাল পরিচিতি আর ফেসবুকের মাধ্যমে শুরু TOURIANA -র পথ চলা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছিলেন “প্রথম দিকে খুব খারাপ লাগত যখন কোন ছোটখাটো ভুলের জন্য কাস্টমারের কাছ থেকে খারাপ কথা শুনতে হত। হঠাৎ করে কোনও বন্ধের কারণে অনেকসময় ট্রিপ ক্যানসেল হলেও একটা খারাপ প্রভাব পড়ত আমাদের ওপর। কিন্তু আসতে আসতে সেটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। আসলে ব্যবসা করতে গেলে সবার আগে যেটা দরকার সেটা হল প্রফেশনালিজম। সেখানে আবেগের কোন জায়গা নেই। অনেক সময়ই অনেক কথা খারাপ লাগতে পারে কিন্তু সেটাকে ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেই সাফল্য আসতে বাধ্য।"
ভারতের প্রায় সর্বত্রই তাঁরা ট্যুর পরিচালন করেছেন। তবে জঙ্গল সাফারি আর পাহাড় ঘোরাতে তাঁরা বিশেষভাবে পটু। আসলে নিজের অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে আর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অর্ণব আজ বেশ কনফিডেন্ট। বলছিলেন জঙ্গল সাফারিটা অন্য অনেকের থেকে তিনি ভালো বোঝেন। প্রতি বছর বেশ কয়েকবার তাঁরা সুন্দরবন ট্রিপ করেন আর সেই কারণেই একটা ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়েছে সেখানে, ফলে কাস্টমারদের সবথেকে ভালো সুযোগ সুবিধা গুলো তাঁরা দিতে পারেন। স্থায়ী কিছু ভেন্ডরও আছে। ফলে যেকোন জায়গাতেই যাতায়াত বা খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়না। ভবিষ্যতে কিছু আন্তর্জাতিক ট্রিপ করার ইচ্ছা আছে বিশেষত আফ্রিকার জঙ্গল বা অামাজনে। ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বলছিলেন যে কম পয়সায় কষ্টকর ট্রিপ করার পক্ষপাতী নন তিনি। অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছেন যে এতে পেশাদারিত্ব থাকেনা। তাই একটু বেশি বাজেটের ট্রিপ করে ভালো স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করাই তাঁর মুল উদ্দেশ্য। কারণ তিনি মনে করেন সস্তায় স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়ার আশা করাটা একদম বিপরীত দুটো ব্যাপার। বছরে খুব বেশি ট্রিপ করেন না তাই এখনও একডাকে চিনে নেওয়ার মতো নাম নয় TOURIANA।
কিন্তু যে বা যারা একবার তাদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছেন তাঁরা বারবার ট্যুরিয়ানার সঙ্গেই বেড়াতে যেতে চান। এবং সঙ্গে বন্ধু বান্ধবদেরও নিয়ে যান। ফলে অর্গানিক হারেই বেড়েছে ট্যুরিয়ানার ব্যবসা। পাঁচবছরে দারুণ সাফল্য এসেছে। ওরা এখন মনে করেন এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ বেশ আশাবাদী এবং বিশ্বাস করেন খুব তাড়াতাড়ি তাঁর সংস্থাকে একডাকে চিনবে বাংলার ভ্রমণপ্রিয় মানুষ।