হুজুগ নয় আবেগ, তাই দুচাকায় ঢাকায় প্রবীরও

হুজুগ নয় আবেগ, তাই দুচাকায় ঢাকায় প্রবীরও

Tuesday February 09, 2016,

2 min Read

টাচ অব হেভেনের অক্ষরযাত্রার পাশাপাশি ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই বাংলা থেকে আরও অনেক অভিযাত্রী ছুটছেন ঢাকা। এদেরই একজন সোদপুর সুকান্ত পল্লীর প্রবীর রায়চৌধুরি।

image


বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে যাদের ধমনিতে রক্তস্রোত দ্রুতগামী হয়, কবি শামসুর রহমান, আল মামুদ মনে পড়ে যায়। জসিমুদ্দিনের রূপকল্পের অদ্ভুত জগতে চলে যান তাদের দলে প্রবীর হয়তো পড়েন না। কিন্তু মাতৃভাষা তার আবেগর জায়গা। সাইকেল তাঁর দ্বিতীয় প্রেম। এতদিন সাইকেল নিয়ে এদিক সেদিক অনেক করেছেন এবার তাঁর দুই আবেগের মিলন হল।

৩১শে জানুয়ারি তিনি যাত্রা শুরু করেছেন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। অমর একুশের আগেই ঢাকায় পৌঁছে যাবেন প্রবীর। সোদপুর থেকে ঢাকা প্রায় তিনশ কিলোমিটার। সাইকেলে ছুটবেন। যশোর থেকে ফরিদপুর হয়ে একে একে ছুঁয়ে যাবেন পাবনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ। সব শেষে সিলেট হয়ে ঢাকা পৌঁছনর কথা ১৯শে ফেব্রুয়ারি। 

মাঝবয়সী এই মানুষটা এলাকায় সমাজসেবী হিসেবেই পরিচিত। আর প্যাশান সবসময়ের জন্যেই সাইকেল। ঘুরেছেন অনেক। সাইকেলে চরে গোটা দেশ দেখার সাধ ছিল। অনেকটা গিয়েওছেন। কিন্তু এত বড় দেশ দেখার জন্যে শুধু সাইকেলে ভরসা করলে তো আর হয় না। পকেটে রেস্ত লাগে। আর সেখানেই তাঁর টান। তাই ফিরে এসেছেন মাঝপথে। সেটা ছিল ২০০৩। এবার আর মাঝপথে ফেরা ফিরি নেই।

ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি, আবেগের। মাতৃভাষার দাবিটা সমর্থন করেন প্রবীর। মাতৃভাষা মানে শুধু বাঙলা নয়, যার যেটা মাতৃভাষা প্রবীর চান সেটাই হোক তাঁর আদরের। তাই তিনি চান বাঙালি যদি বাংলায় কথা বলে। সাঁওতালও লিখুক, পড়ুক, শিখুক, বলুক তাঁর নিজের মাতৃভাষায়। স্বীকৃতি পাক সমস্ত অস্বীকৃত মাতৃভাষা। আরও প্রসারিত এবং সংরক্ষিত হোক বাংলা। ভাষার সাম্রাজ্যবাদের ঘোর বিপরীতে দাঁড়ানো একটি মানুষ সোদপুর সুকান্তপল্লীর প্রবীর নিজেকেও ভাষার লড়াইয়ে সামিল মনে করেন। তাই দুচাকায় গড়গড়িয়ে তিনশ কিলোমিটার উজিয়ে যাচ্ছেন ভাষা শহিদ মঞ্চে।

কিন্তু তাঁর লড়াইয়ে রশদ জোগাবে কে, এটাই একটা সময় বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাবলে থেমে থাকার পাত্র নন প্রবীর। জানান বন্ধুদের। তাঁর অভিযানের কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন তাঁর প্রতিবেশিরাই। গোটা পাড়া চাঁদা তুলে দেয়। এগিয়ে আসে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, স্থানীয় ক্লাব। নিজের পাড়া সুকান্ত পল্লী উন্নয়ন পরিষদ সাহায্যের সাথে সাথে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় সম্বর্ধনা জানায় প্রবীরকে। ইয়োর স্টোরির পক্ষ থেকেও রইল প্রবীর রায়চৌধুরির জন্যে অনেক অভিনন্দন।