২০ বছরের অভ্যেস, ভাসতে ভাসতে স্কুলে যান আবদুল মাস্টার
Friday December 04, 2015,
2 min Read
পরিপাটি করে চুল আঁচড়ানো। চোখে রিমলেস চশমা। হাতে জুতো। খালি গা। সঙ্গে চাকার টিউব। পলিথিনের ব্যাগ। তাতে জামা-কাপড়, বই। সব নিয়ে স্কুল চললেন আবদুল মাস্টার। হেঁটে নয়। গাড়িতেও নয়। সাঁতার কেটে ভাসতে ভাসতে নদী পেরিয়ে। বছর ৪২ এর আবদুল মালিকের এইভাবে স্কুলযাত্রার অভ্যেস এক দু দিন বা এক দু মাসের নয়। গুনে গুনে ২০ বছর! কী শীত, কী গ্রীষ্ম, কী বর্ষা-অংকের শিক্ষক আবদুল একদিনের জন্যও ক্লাস মিস করেননি।
বছর ২০ আগে যখন কেরলের মালাপ্পুরমে পাদিনজাত্তুমুরির মুসলিম লোয়ার প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পান, ২৪ কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে যেতে হত আবদুল মালিককে। তিনটে বাস পালটে অতটা যেতে সময়ও লাগত অনেক। ‘প্ৰথম বছর রাস্তা দিয়েই স্কুল যেতাম। এক সহকর্মীর বুদ্ধিতে সাঁতরে নদী পেরনো শুরু করি। স্কুলের তিন দিকে জল। ফলে অন্য কোনও যানের উপর নির্ভর না করে সাঁতার কাটাই ভালো’, বলেন মালিক। সঙ্গে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে একসেট জামাকাপড় আর বই থাকে। নদী পেরিয়েই জামা পালটে এক্কেবারে ধোপদুরস্ত অঙ্কের মাস্টার।
আবদুল পরিবেশবিদও। গত কয়েক বছরে নদী যেভাবে নোংরা হয়েছে তা দেখে ব্যথিত গণিতের মাস্টার। এমন অদ্ভুতুড়ে স্যরকে যারা পছন্দ করে তেমন কজন পড়ুয়া সঙ্গে নিয়ে মাঝে মাঝে সাঁতার কাটতে চলে যান তিনি। নদী বক্ষে ভাসমান প্লাস্টিক এবং অন্যান্য নোংরা জিনিসপত্র পরিষ্কার করেন। ‘নদী যাতে নির্মল থাকে এবং দূষণ মুক্ত রাখার দিকে আমাদের নজর দেওয়া উচিত।কারণ নদী ইশ্বরের দান’, বলেন আবদুল।
কোনও কিছুতেই যেন ক্লান্তি নেই মুসলিম লোয়ার প্রাইমারি স্কুলের এই শিক্ষকের। অতটা পথ সাঁতরে পাড়ি দিয়ে সময়মতো এবং নিয়মমাফিক স্কুলে পৌঁছে যাওয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ হেন আবদুল মালিককে দেখে বলতেই হয়, ইচ্ছেটাই আসল রাজা। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।