ছোট ও মাঝারি খুচরো ব্যবসার অনলাইন স্টোর খুলতে সবরকম সহায়তায় Twikster

ছোট ও মাঝারি খুচরো ব্যবসার অনলাইন স্টোর খুলতে সবরকম সহায়তায় Twikster

Thursday September 24, 2015,

4 min Read

image


গত কয়েক বছরে ভারতের খুচরো ব্যবসায় এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। ঘরে বসে কম্প্যুটার বা মোবাইল ফোনের বোতাম টিপে কিনে ফেলা যাচ্ছে যাবতীয় প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় জিনিস, এবং অনেক সময়ই তা বাজারের থেকে কম দামে। অনলাইন শপিং-এর এহেন জনপ্রিয়তা বদলে দিয়েছে ভারতীয় খুচরো ব্যবসার মানচিত্রটা। এর ফলে ছোট ও মাঝারি মাপের ব্যবসায়ীরও পৌঁছে যেতে পারছেন দেশের যেকোনোও প্রান্তের ক্রেতার কাছে। কিন্তু সুযোগ যেমন রয়েছে, রয়েছে সমস্যাও। এই মাঝারি আর ছোট মাপের ব্যবসায়ীরা অনেকেই অনলাইন ব্যবসার পদ্ধতিগুলি জানেন না, বুঝে উঠতে পারেন না নিয়মকানুন, শুরু করতেই ভয় পান কেউ কেউ। তাঁদের সাহায্য করতেই Twikster।

নম্রতা সোনি ও প্রিয়া রামকৃষ্ণণ, ইউএসএ এর ওয়েলস ফার্গোতে কাজ করার সময়ই ভারতের খুচরো বাজারের এই দ্রুত পরিবর্ত লক্ষ্য করছিলেন দুই সহকর্মী ও বন্ধু। তখনই ঠিক করে ফেলেন নম্রতা, দেশে ফিরবেন, শুরু করবেন এমন এক কোম্পানি যা ছোট ও মাঝারি মাপের ব্যবসায়ীদের অনলাইন বিক্রিতে সবরকম সাহায্য করবে।


নম্রতা সোনি, সিইও  ও যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা

নম্রতা সোনি, সিইও ও যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা


দেশে ফিরে নিজের জমানো টাকা দিয়েই শুরু, কিছুদিনের মধ্যেই বিনিয়োগ করেন প্রিয়াও। তবে সমস্যা হয় প্রধান প্রযুক্তি আধিকারিক বা সিটিও পদের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পাওয়া। প্রযুক্তি এই ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফলে সঠিক প্রার্থী পাওয়া ছিল জরুরি। দীর্ঘ সন্ধানের পর কথা হয় বিনয় সাইনির সঙ্গে, কোম্পানির যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা ও সিটিও হিসেবে যোগ দেন বিনয়।


বিনয় সাইনি, সিটিও ও যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা

বিনয় সাইনি, সিটিও ও যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা


ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে আগাগোড়া পরিষেবা দেয় Twikster। শুধুমাত্র ব্যবসা শুরু নয় ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলিও যোগান দেওয়া হয়। অনলাইন দোকান শুরু, পেমেন্ট গেটওয়ে ও পণ্য সরবরাহ পরিষেবা প্রদানকারীর সঙ্গে চুক্তি, অনলাইন বাজারে উপস্থিতি সামলানো এবং আরও সমস্তরকম প্রয়োজনীয় বিষয়ই ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিয়ে থাকে কোম্পানিটি।

Magento, Shopify এবং Prestashop এর মত কোম্পানিগুলিও একই ধরণের পরিষেবা দিয়ে থাকে, কিন্তু নম্রতার মতে Twikster তা দেয় সাশ্রয়ী মূল্যে। “ভারতে জনপ্রিয় যে কোম্পানিগুলি ই-কমার্স ব্যবসা শুরুতে সহায়তা দিয়ে থাকে তারা মাসিক হারে টাকা নেয় এবং পূর্বনির্ধারিত কিছু সুবিধা দেয়. কিছু জরুরি ও প্রাথমিক সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রায়শই গ্রাহককে আরও বেশি মূল্যের প্ল্যান নিতে হয়. ফলে পুরো ব্যাপারটাই হয়ে পড়ে বেশ খরচ সাপেক্ষ, বাত্সরিক খরচ দাঁড়ায় ৬০,০০০ থেকে ৮৪,০০০ টাকা। এরফলে একটা বড় অংশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, এতটাকা খরচ করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ে,” বললেন নম্রতা।

তিন ধরণের মূল্য হার রয়েছে Twikster এ। প্রাথমিক প্ল্যানটি হল ‘Twikster GO’। যে কেউ forever-free বা সবসময়ের জন্য বিনামূল্যে একটি অনলাইন দোকান খুলতে পারেন। নানাধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে এই প্ল্যানে, মোবাইলে থেকেও সহজেই ব্যবহার করা যাবে এই অনলাইন দোকান। আর পুরোটাই পাওয়া যাবে কোনও মাসিক গ্রাহক মূল্য ছাড়াই। এরপর গ্রাহক নিজের প্রয়োজন ও সুবিধা মত কোনও বিশেষ পরিষেবা বা সাহায্য নিতে পারেন নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়। এখানে কোনও মাসিক গ্রাহক মূল্য বা নিজের প্রয়োজন ছাড়া অন্য পরিষেবার জন্য টাকা দিতে হয় না গ্রাহককে।

এছাড়াও Twikster এ রয়েছে ‘preferred’ ও ‘pro’ প্ল্যান। শুরুতে একবার অল্প কিছু টাকা ও বাৎসরিক গ্রাহক মূল্য দিয়ে পাওয়া যাবে পণ্য সরবরাহ, পেমেন্ট গেটওয়ে ইত্যাদি নানা সুযোগ।

ডিসেম্বর ২০১৩ এ Twikster তৈরি করতে শুরু করেন নম্রতা। মে ২০১৪এ লঞ্চ হয় বেটা। কিছুদিনের মধ্যেই নম্রতা বুঝতে পারেন ভারতের ই-কমার্সের সহায়তার বাজারটি খুবই বিশৃঙ্খল, এখানে কাজ করার কৌশলগুলিও ঠিক করে ফেলেন তিনি। মে ২০১৫ তে দামের প্ল্যান পরিবর্তন করেন নম্রতা, যোগ করেন এমন সব সুবিধা, যাতে অনলাইন দোকান খুলতে যা যা প্রয়োজন সবই দিতে পারে Twikster।

“আমাদের এখন পণ্য সরবরাহকারী কোম্পানি, পেমেন্ট গেটওয়ে এবং মার্কেট প্লেস, যেমন Instamojo এর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে,” জানালেন নম্রতা.

“আমেরিকায় সম্পূর্ণ অন্যরকম সংস্কৃতিতে কাজ করেছি আমি, প্রথমদিকে বুঝতেই পারতাম না কথা দিয়েও কেন কিছুতেই সময়মত কাজ শেষ করে না কেউ,” ভারতের কর্ম সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে বলতে বলছিলেন নম্রতা। বর্তমানে মোট আট জনের টিমে কাজ করে Twikster, অফিস বেঙ্গালুরুতে। কর্মী সংখ্যা বাড়ানো ও দ্রুত হারে পণ্য উত্পাদনের জন্য আগামী ছ’মাসের মধ্যে বিনিয়োগ সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। এখনও পর্যন্ত দিল্লি, জয়পুর, হরিদ্বার, বেঙ্গালুরু ও মাইসোর এই পাঁচটি শহরে কাজ করছে Twikster, কিছুদিনের মধ্যেই অন্যান্য শহরেও কাজ শুরু হবে। হস্তশিল্প ও জামাকাপড় বিক্রেতা, Twikster এর গ্রাহক মূলত এরাই। শিল্পীদের জন্য Art Space নামে একটি মার্কেট প্লেস লঞ্চ করেছে কোম্পানিটি।

ই-কমার্সের বাজার

PwC এর রিপোর্ট অনুসারে ২০০৯ সাল থেকে ৩৪ শতাংশ CAGR হারে বাড়ছে ভারতের ই-কমার্স ব্যবসা। ২০১৪ এ ব্যবসা পৌঁছেছে ১৬.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলারে। বর্তমানে ই-কমার্স বাজারের ৭০ শতাংশ হল ভ্রমণ। অনলাইন খুচরো ব্যবসা হল সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে চলা ক্ষেত্র, গত পাঁচ বছরে এর বৃদ্ধির হার ৬৫ শতাংশ CAGR।

প্রতিদিনই নতুন নতুন ক্রেতা অফলাইন ছেড়ে অনলাইনে আসছেন। ফলে Twikster মত কোম্পানির বৃদ্ধির সুযোগ প্রচুর। তবে শিল্প বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইন দোকানের সহায়তাকারী পরিষেবার বিষয়টি গুণমানের জন্য জরুরি হয়ে উঠবে। তাই দামের পার্থক্যটা আদৌ ক্রেতার কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ থাকবে কি বা সেটা ভেবে দেখতে হবে Twikster কে। Art beat paintings, Kili Shop, Candy Shelves এর মত আকর্ষণীয় ব্র্যান্ডগুলি Twikster এর সঙ্গে তাদের অনলাইন দোকান খুলেছে। ভবিষ্যতে তারা কতটা ভাল ব্যবসা করে, তা সময়ই বলবে।

ওয়েবসাইট- www.twikster.com