দুর্গাপুরেই জুরিখ্, মাইনাস ৬ ডিগ্রি
দূর্গাপুরের দার্জিলিং মোড়। কোথায় দুর্গাপুর? কোথায় দার্জিলিং? ৪০৩ কিলোমিটারের দূরত্ব। কলকাতা থেকে গাড়িতে দার্জিলিং যাওয়ার পথেই এই মোড়। এমন কোনও যাত্রী পাবেন না যিনি একবার দুর্গাপুর হাইওয়েতে টি ব্রেক নেননি। নিতে এই মোড়ে হল্ট করেননি। ঠান্ডার অনুভূতি নিতে কলকাতা বা দক্ষিণবঙ্গের, যে ভ্রমনার্থীরা দূর্গাপুর হয়ে দার্জিলিং-গ্যাংটকে যান এবার থেকে তাদের ডেসটিনেশন পাল্টে ফেলতে পারেন। কারন দূর্গাপুর এখন মাইনাস ৬ ডিগ্রী। জমে বরফ সিটি সেন্টার। সঙ্গে তুষার ঝড়।
খবর পেয়েই শহরবাসী ছুটছেন কুল থ্রিলিং নিতে। এফবি টাইম লাইনে বরফের গোলা হাতে সেলফি। মূহুর্তের মধ্যে LIKE এর বন্যা। WHERE ? WHEN ? হাতের নাগালে একটুকরো সুইৎজারল্যান্ডের অনুভূতির সুলুকসন্ধান এবার শিল্পশহরে।দূর্গাপুর জংশন মলে ‘এন্টারটেন্টমেন্ট রিলোডেড’ শীতের মরসুমে শিল্পাঞ কে উপহার দিয়েছে “WORLD OF SNOW”…যার ট্যাগ লাইন Experience Switzerland …।
পায়ের তলায় সরষে ভ্রমণ প্রিয় বাঙালির। Chill অনুভুতি মানেই দার্জিলিং কিংবা গ্যাংটক।গ্যাঁটের জোর আছে যাদের তাঁদের পছন্দ Cool কাশ্মীর। আর সুইজারল্যান্ড? সে তো অনেকেরই জীবনের শেষ ইচ্ছে ! রোম্যান্টিক কাপলের ড্রিম ডেস্টিনেশন। সাধের সাথে সাধ্যে কুলালে চিরাচরিত দীঘা পুরী ছেড়ে ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালিরা পাড়ি দেয় হাড়হীম করা বরফের দেশে। অনেকের কাছেই স্নো-ফলের অনুভূতি, আইসল্যান্ডে বরফের গোলা নিয়ে খেলা,সুইস স্লেজ গাড়িতে চড়ার আনন্দ এখনও অলীক। তবে ভিসা পাসপোর্ট ছাড়াই ছাপোষা মধ্যবিত্তরাও এবার মাইনাস ৬ ডিগ্রীতে। সাত হাজার স্কয়ার ফুটের আইসল্যান্ড আসলে একটি স্নো চেম্বার।প্রাকৃতিক বিনোদনের অনুভূতি আনতে ঢেলে সাজানো হয়েছে দুর্গাপুর জংশন মলের কৃত্রিম আইসল্যান্ডটিকে।
পায়ের নীচ থেকে মাথার ছাদ। সর্বত্র বরফে ঢাকা। কনকনে ঠান্ডা। রোমাঞ্চ বিনোদনের মিশেলে ভরপুর। স্নো-চেম্বারে ঢোকার আগে সংস্থা দেবে পার্কা জ্যাকেট, বুট এবং গ্লাভস। বরফের টিলা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই শুধুই বরফ আর হিমবাহ। তার মধ্যেই রিয়েল বরফে তৈরি এস্কিমোদের ঘর। বরফ দিয়ে ডিজাইন করা নানা বাড়ি।পাইন গাছের পাতায় পাতায় বরফ। মাঝে মাঝেই ধেয়ে আসছে তুষার ঝড়। ভয় আর রোমাঞ্চ কাটতেই হিমবাহ পেরিয়ে অপেক্ষা করছে থিমেটিক আবহে রং বেরঙের আলোর খেলা। রামধনু রঙের মাঝে এবার কুল আইসে হানি মুন যদি নাও হয় হানি সিং হাজির। রিদম ব়্যাপ আর লাউড মিউজিকের তালে তালে পার্টনারের সঙ্গে একটু গা ঘামিয়ে নেওয়ার সুযোগ তো আছেই। কচিকাঁচাদের জন্য জিগজ্যাগ স্লিপ, বিনোদনের জন্য সুইস স্লেজ গাড়ি, স্নো ব্যাটেলসের ব্যবস্থা। দেখে মুহূর্তে মনে হবে যেন সত্যিকারের সুইজারল্যান্ড।
‘এন্টারটেন্টমেন্ট রিলোডেড’ কোম্পানির ইউনিট হেড শম্ভুনাথ সুমন জানান এরকম স্নো পার্ক বা আইসল্যান্ড ইষ্টার্ন জোনে প্রথম। হায়দ্রাবাদ ব্যাঙ্গালুরু জয়পুর মুম্বাইয়ে রয়েছে। এই রাজ্যে দুর্গাপুরেই তাদের স্টার্ট-আপ। খুব শীঘ্রই কলকাতায় তাদের কোম্পানি স্নো পার্ক বা আইসল্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। স্নো পার্কে প্রবেশমূল্য করা হয়েছে জনপ্রতি ৫০০ টাকা। কর্তৃপক্ষের দাবী আইসল্যান্ডের অনুভূতি নিতে ভ্রমন পিপাসুরা বহু টাকা খরচ করে কাশ্মীর বা সিকিম চলে যান সেদিক থেকে দেখতে গেলে এখানে প্রবেশমূল্য অনেকটাই কম। বিশেষ করে তারা সেফটির ব্যাপারটা নজর রেখেছেন। ১০ জন ক্রু মেম্বার রয়েছেন যারা সব সময় নজর রাখছেন দর্শকদের সুবিধে অসুবিধের দিকে। এমনকি মেডিক্যাল টিমও মজুত থাকছে সবসময়।
কোম্পানির কর্ণধার শ্রীবর্ধন দাগা জানান এটা তাদের শুরুয়াতি ব্যবসা। এই দেশে বিনোদনের জন্য অনেক রকম ইভেন্ট থাকলেও স্নো পার্ক নতুন ধরনের কনসেপ্ট।দর্শকরা ইতিমধ্যেই ভালো সাড়া দিচ্ছেন। প্রকল্পটি করতে তাদের খরচ পড়েছে ৫ কোটি টাকা। ১০ হাজার দর্শক পেলেই তারা আইসল্যান্ডটি থেকে লাভের মুখ দেখতে পাবেন। দৃঢ় বিশ্বাস সাফল্য আসবেই। ইতিমধ্যেই যেরকম পাবলিক রেসপন্স তাতে তারা মুগ্ধ। সাত হাজার স্কোয়ার ফুটের আইসল্যান্ডে এক সঙ্গে ২০০ জন দর্শক ঢুকতে পারবেন।জানালেন শ্রীবর্ধন। আসানসোল দুর্গাপুর বণিকসভা মনে করে এরকম আরও অনেক স্টার্টআপ আসা দরকার স্মার্টসিটি দুর্গাপুরে। আসানসোলকে ইন্টালিজেন্ট সিটি করতে চলেছে রাজ্য। পার্শ্ববর্তী রাজ্যের কোলসিটি ধানবাদ ও সদর বর্ধমানবাসীদের হাতের নাগালে। ফলে সম্ভাবনা এবং সুযোগ দুই ই আছে। প্রয়োজন আরও বেশি বেশি করে এরকম বিনিয়োগ।
তবে যে যাই বলুন, ভিসা পাসপোর্ট ছাড়া মাত্র ৫০০ টাকায় গ্রীষ্মে লু দেখা শিল্পাঞ্চলবাসী পৌঁছে যাচ্ছেন বরফের দেশে। আর কলকাতার মানুষ শীতের মরসুমে গ্যাংটক-দার্জিলিং এ স্নো-ফলের অপেক্ষায় না থেকে দার্জিলিং মোড় থেকেই বদলে ফেলতে পারছেন রুট। ডেষ্টিনেশন দূর্গাপুর। মাইনাস ৬ ডিগ্রিতে সারা বছর স্নো ফল এবার আপনার অপেক্ষায়।