নারকেল গাছে চড়তে আপ্পাচানের শর্টকাট!

নারকেল গাছে চড়তে আপ্পাচানের শর্টকাট!

Saturday November 07, 2015,

2 min Read

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরা রাজ্য কেরল। সেই কেরলের নাম উঠলে প্রথমেই যে ছবিটা মনের মধ্যে ভেসে ওঠে তা হল সার-সার নারকেল গাছ। দক্ষিণের এই রাজ্যের সংস্কৃতি, খাওয়াদাওয়া ও সামাজিক প্রথার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী মিশে রয়েছে এই নারকেল। রাজ্যের বহু মানুষ রোজগার করেন নারকেল চাষ থেকে। অর্থকরী ফসল বলতে যা বোঝায় নারকেল হল তাই।

গাছ থেকে নারকেল পেড়ে আনা কিন্তু খুব সহজ নয়। এজন্য রয়েছেন প্রফেশন্যাল ক্লাইম্বার্স। স্থানীয় ভাষায় তাঁদের বলা হয় থন্ডন। এই থন্ডনরা খুব সহজেই বিশাল উচ্চতার গাছগুলিতে অনায়াসে উঠে যান। খানিকটা বংশ পরম্পরাতেই এই নারকেল পেড়ে আনার কাজটা করে আসছেন থন্ডনরা। কিন্তু সময়ের প্রবাহে সেই পেশাতেও ভাটার টান। এই প্রজন্মের ছেলেদের অনেকেই থন্ডনের কাজ করতে চান না। অনেকেই বেছে নিচ্ছেন অন্য কোনও পেশা। যা গাছে চড়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়, আবার অন্য দিকে রোজগারও বেশি।


image


তরুণ প্রজন্ম উৎসাহ হারালেও, নারকেল গাছ ছাড়া কেরলকে ভাবাই যায় না। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক পেশাদার থন্ডনের অভাবে সমস্যা একটা হচ্ছেই। এ এমন এক কাজ যাতে শারীরিক পটুতা ও দক্ষতা লাগে। ভুলচুক হলেই বিপদের সম্ভাবনা। অগত্যা সাধারণ কোনও কৃষককে গড়েপিটে নিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা চলছে। তেমনই একজন কৃষক কান্নুরের এম জে জোশেফ। এলাকায় আপ্পাচান নামেই বেশ পরিচিত। থন্ডনের অভাবে নারকেল পাড়তে যেভাবে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তা তাঁকে ভাবিয়ে তোলে। কীভাবে সহজে নারকেল পেড়ে আনা যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকেন তিনি। সেই ভাবনারই ফসল তাঁর কোকোনাট ট্রি ক্লাইম্বার। ঘরোয়া পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে জিনিসটা বানিয়ে ফেলেছেন তিনি।তাঁর এই যন্ত্রের সাহায্যে ১৩০ ফুট লম্বা গাছে চড়া যায় ২ মিনিটের মধ্যেই। যা একজন অতি দক্ষ থন্ডনের পক্ষেও সম্ভব নয়। অত উঁচু গাছে চড়তে একজন থন্ডনেরও কমপক্ষে ৫ মিনিট লেগে যায়। এখানেই পাপ্পাচানের কৃতিত্ব।

পাপ্পাচান আসলে এমনই। নিজে স্কুল ড্রপআউট হলে কী হবে, কিছু তৈরি করার ব্যাপারে তাঁর একটা সহজাত দক্ষতা রয়েছে। ছোটখাট সমস্যার ঘরোয়া সমাধান খুঁজে বের করতে পারেন সহজেই। কোকোনাট ট্রি ক্লাইম্বার খানিকটা সেভাবেই তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। এমনকী এমন একটি যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছেন যা দিয়ে নারকেলের শাঁস সহজেই বের করে নেওয়া যায়। বিভিন্ন ফল থেকে রস বের করারও যন্ত্র বানিয়েছেন পাপ্পাচান। ২০০৬ সালে এই নারকেল গাছে চড়া যন্ত্রের জন্য পেটেন্ট পেয়েছেন তিনি। National Innovation Foundation (NIF) তাঁকে তাঁর এই কাজের জন্য স্বীকৃতিও দিয়েছে। যন্ত্রের কার্যকারিতার জন্য সুনাম পৌঁছে গিয়েছে বিদেশেও। শুধু ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিলে পাপ্পাচানের তৈরি মই রফতানি হয়। গাছে চড়তে এমন নিরাপদ ও কাজের জিনিস কেই বা ছাড়ে?