হাইপারলোকাল-ছুটে চলার যুগে এই শব্দটাও এখন বেশ পরিচিত। অকুস্থলে গিয়ে পরিষেবা-ভেঙে বললে তাই দাঁড়ায়। খাবার থেকে জামাকাপড়, বই থেকে ওষুধ, মুদিমাল কী নেই সেই তালিকায়। শুধু অর্ডার করার দেরি। বাড়ির দোরে পৌঁছে যাবে সবকিছু। ২০১৫ সালের প্রথমার্ধেই সারা বিশ্বে হাইপারলোকাল সার্ভিসের সঙ্গে সম্পর্কিত ২৭ টি চুক্তি হয়েছে এবং বিনিয়োগ হয়েছে ১৩৫ মিলিয়ন ডলারের ওপরে। এই পরিষেবার চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। উদ্যোক্তারা বিনিয়োগও করছেন যথেষ্ট। ফলে হাইপারলোকাল সার্ভিসের ক্ষেত্রে বলাই যায়- sky seems the limit।
লজিস্টিকস এবং জিনিস পৌঁছে দেওয়ার এই নতুন ব্যবসার ওপর নির্ভর করে অনেকগুলি স্টর্টআপ বাজারে এসেছে। পিকজির গল্প এর আগেই আপনারা পড়ে থাকবেন। কিংবা আউটবক্সের সাফল্যের গল্প। বিজনেস টু কনজিউমার বা B2C বাজার ভরে উঠছে ‘সুইগি’ এবং ‘গ্রফারস’-দের মতো উদ্যোগে। B2B বাজার ধরতে হাজির ‘রোডরানার’এর মতো সংস্থা। এমনই একটি সংস্থা চেন্নাইয়ের ‘লোকালেগস’। এই তো সেদিন ২০১৫র এপ্রিলে শুরু হল পথ চলা। প্রাক্তন আইআইটি প্রতীক আগরওয়াল এবং বিবেক পোদ্দার এই ভেঞ্চার শুরু করেছেন।
ডেলিভারি পিছু ৫০০টাকা রোজগার। গড়ে দিনে ২০০টি ডেলিভারি থাকে। প্রতিদিন লাখ টাকার আয়। দুই উদ্যোক্তার দাবি, সপ্তাহে ৭৬ শতাংশ করে রেভিনিউ বাড়ছে। আয় বেড়ে দ্বিগুন হওয়ার পথে। কীভাবে বাড়ছে? বিবেক জানান, মে-তে গড়ে ৬০টি ডেলিভারি ছিল। জুনে বেড়ে হয়েছে ১৩০টি। এখন গড়ে ৩০০ টি ডেলিভারির দিকে এগোচ্ছে। ‘লোকালেগস’ এর লক্ষ্য বছরের শেষে সেটাকে গড়ে প্রতিদিন ১০০০০ ডেলিভারিতে নিয়ে যাওয়া।
‘লোকালেগস’এর নজর মূলত B2B হোম ডেলিভারির বাজার ধরার দিকে। শুধু ইট সুরকির দোকানের সঙ্গে নয় এবার ই-কমার্স বা অনলাইন শপিং সংস্থা ফ্লিপকার্ট বা স্ন্যাপডিলের সঙ্গেও গাঁটছড়া বাঁধার দিকে এগোচ্ছে ‘লোকালেগস’।
ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরের বাসিন্দা প্রতীক। বিলাসপুরে প্রতীকের ক্যারিইং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্সি বিভিন্ন সিমেন্ট সংস্থার সঙ্গে কাজ করে। তখনই লজিস্টিকস (পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়া) সম্পর্কে জানাতে পারেন প্রতীক। স্থির করেন চেন্নাই গিয়ে নিজের লজিস্টিক কোম্পানি করবেন।
অন্যদিকে বিবেক কানাডায় যখন মাস্টার্স পড়ছিলেন তখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় খাবার পৌঁছে দেওয়ার পার্টটাইম কাজ করতেন। সেই সময় থেকেই ভাবছিলেন ভারতে এইরকম একটা পরিষেবা চালু করার কথা। হাইপারলোকাল ডেলিভারি নিয়ে তাঁর দারুণ আগ্রহ ছিল। তাই বিবেক যোগ দেন প্রতীকের সঙ্গে।
প্রথমে বাজারে ঢুকলেন B2C ইট-সুরকি সরবরাহকারী হিসেবে। কিন্তু দুজনেই বুঝতে পারেন তাঁদের মন পড়ে রয়েছে লজিস্টিক সেগমেন্টে প্রযুক্তির উন্নয়নের দিকে। বিবেক বলেন, ‘আমরা ভাবলাম B2C হাইপারলোকাল মার্কেট ইতিমধ্যে ভরে গিয়েছে। প্রায় সাতটির মতো ভেঞ্চার এই সেগমেন্টে রয়েছে এখন। খদ্দের টানতে ডিসকাউন্ট-কুপন মডেল থেকে বেরিয়ে এসে আমরা চেয়েছিলাম প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আরও ভালো পরিষেবা দিতে’।
দুই কর্নধার বলেন, ৯০ শতাংশের মতো হাইপারলোকাল কোম্পানির প্রযুক্তি সচল রাখার লোক দরকার। অল্প পুঁজির ‘লোকালেগস’এ অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর তিন জন। যারা পরামর্শ দিয়ে এবং সংস্থাকে ব্যবসায়ীক উন্নতি ও গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কের নানা স্ট্র্যাটেজি নিয়ে উপদেশ দেয়। বর্তমানে চেন্নাইয়ে ৭টি টিম ভেঞ্চারের সক্রিয় নেটওয়ার্কে ৩৫ জন ডেলিভারি বয় রয়েছে।
এই বছরের শেষের দিকে এবার মুম্বইয়ে পা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। আহমেদাবাদ এবং জয়পুরের মতো টিয়ার ১, টিয়ার ২ শহরেও তাঁরা হাজির হওয়ার কথা ভাবছেন। মার্কেটিং অ্যাপ্রোচ নতুন করে সাজিয়ে বিজনেস স্ট্র্যাটেজিতে বদল আনার চেষ্টা চলছে। ওষুধ, মুদি এবং ই-কমার্সের দিকে নজর দেবে বলে ঠিক করলেন। কো ফাউন্ডাররা বলেন, বিজনেস স্ট্র্যাটেজি বদলাতে গিয়ে ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে বিনিয়োগ করে কিছু বাড়তি খরচ হয়েছে। তবে নতুন ব্যবসায়ীক পরিকল্পানার মাধ্যমে সেই টাকা উঠে আসবে বলেই ধারনা দুই উদ্যোক্তার।
রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং সিস্টেমের মতো কিছু নয়া প্রযুক্তি আনারও চিন্তা ভাবনা রয়েছে। এর ফলে ডিলিভারি বয়ের অবস্থান সম্পর্কে ধারনা রাখা সম্ভব হবে। বিবেক জানান, যদি কোনও ডিলিভারি বয় এক জায়গায় বেশি সময় নষ্ট করেন বা অন্য রুটে চলে যান, ট্র্যাকিং সিস্টেম সতর্ক করে দেবে। যদি ডেলিভারি বয়ের মোবাইলে চার্জ কম থাকে তাও জানিয়ে দেবে। তাছাড়াও ‘লোকালেগস’ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অ্যানালেটিক ইনফরমেশন জেনারেট করে বিভিন্ন এলাকায় রিসোর্সের সুষ্ঠু ব্যবহার করে। সংস্থায় বিনিয়োগের জন্য লগ্নিকারীর খোঁজ চলছে। কথা বলা হচ্ছে জাঙ্গল ভেঞ্চার এবং স্মাইল গ্রুপের সঙ্গে।
‘লোকালেগস’ কিছু কিছু এনজিওর সঙ্গে কথা বলছে। তাদের পরিকল্পনা হল এনজিও থেকে কর্মী নিয়োগ করা। এর ফলে সেই সমস্ত অভাবি কর্মীদের ভালো কাজের সুযোগও দেওয়া হয়ে যাবে।