চিন্ময়ের Kronos বদলে দিয়েছে কলকাতার সংস্কৃতি
চিন্ময় রায়। ইনি সেই অভিনেতা নন। কিন্তু বাংলার ফিটনেস সার্কিটে রীতিমত নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ তিনি সফল। কলকাতায় জিম ব্যাপারটাই যখন অচেনা ছিল সেই সময় তিনিই ছিলেন ফিটনেস বাঙালির সবেধন নীলমণি ফিটনেস ট্রেনার। কলকাতার সংস্কৃতিতে তার উদ্যোগেই ঢুকে পড়েছে জিম কালচার। বাংলার ক্রিকেট সার্কিটে তিনি এখন দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু তা বলে লড়াইটা আদৌ সহজ ছিলনা। চিন্ময়ের ক্রোনোস শুরুর সেই দিনগুলি আজকের যেকোনও অ্যান্তেপ্রেনিওরকে দারুণ বুস্ট দিতে পারে।
শুরুর আগের শুরুটা ছিল দারুণ। খেলাধুলোর প্রতি দারুণ একটা আকর্ষণ ছিল। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে সেরা জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব নয় এটা বুঝেই ঝোঁকেন ফিটনেসের দিকে। লক্ষ্য ছিল একটাই যা করব সেরাটা করব। কোনও মাঝারি মানের কিছুতে আটকে থাকব না। শুরুটা ২০০০ সাল নাগাদ। বাংলার ক্রিকেটে ফিটনেস সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ডক্টর ভেস পেজের সহকারি খুঁজছিল সিএবি। তার আগে সাই ও সিএবি-র যৌথ উদ্যোগে একটি ফিটনেস সংক্রান্ত কোর্সে পাস করে থাকাটা কাজে লেগে যায়। এরপর ধীরে ধীরে এনসিএ হয়ে লেভেল ওয়ান ট্রেনারের ছাপ সবই এগোচ্ছিল ঠিকভাবেই। গ্রেগ চ্যাপেল জমানায় ভারতীয় দলের সহকারি ট্রেনারদের একজন ছিলেন। এবার মনটা চাইছিল সিনিয়র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে। অনুর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের দায়িত্ব। দীপ দাশগুপ্ত-পরস মামরেদের সময় বাংলা দলের দায়িত্ব। কিন্তু নিশ্চিন্ত ধরাবাঁধা পথ আর তাঁর ভাল লাগছিল না। মন চাইছিল ঝুঁকি নিতে।
২০০৭ সাল। ফিটনেস বস্তুটি খায় না মাথায় দেয় ছাপোষা বাঙালি বুঝতই না। মাছে ভাতে তৃপ্ত, দুপুরে ভাত ঘুম দিয়ে অভ্যস্ত, রকে চায়ের ঠেকে আজগুবি গুলতানিতে ব্যাস্ত, আরেক দল ভুঁড়ি বাগিয়ে ট্রেনে গুঁতোগুঁতি করে ক্লান্ত শ্রান্ত নাজেহাল বঙ্গপুঙ্গব হঠাৎ সকাল বিকেল জিম করতেই বা যাবে কেন? এইরকম একটা পরিস্থিতিতে নিজের জিম খুলবেন ভাবলেন চিন্ময় রায়। তাঁর বুদ্ধি আর বন্ধুর মূলধন। এই নিয়ে রবিনসন স্ট্রিটে প্রথম পথ চলা শুরু করল Kronos।
শুরুর সেই দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে এখনও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন চিন্ময়। "ছমাস অবধি কোনও প্রফিটের দেখা নেই। বাড়ি ভাড়া, ইলেকট্রিসিটি বিল সবই যাচ্ছে নিজের পকেট থেকে। লোকজনকে অনুনয় বিনয় করে নিয়ে আসতে হত। আজ হয়ত ভাবলে হাসি পায় কিন্তু প্রশ্ন আসত সব অদ্ভুত অদ্ভুত। আমি মেয়ে জিম করে আমি কেন শুধু শুধু মাসল বানাতে যাব?" আর আজ অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে লড়াইয়ের পর সাফল্যের স্বাদটা চুটিয়ে উপভোগ করছেন চিন্ময় রায়। ক্রোনোসের একটি শাখা খুলেছে পিকনিক গার্ডেন্সে। শুধু ক্রোনসই নয়, ল্যান্সডাউনেও একটি জিমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন চিন্ময়।
রোজকার শারীরিক সমস্যা থেকে মানসিক সমস্যা সবেতেই এখন জিম মিরাকেলের মত কাজ করে। চিকিৎসকদের নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেক মুক্তির পথ বাতলে দিতে পেরে খুশি চিন্ময় বাবু। হাঁটুর ব্যাথা থেকে গাইনোকলজিক্যাল সমস্যা। সুরাহা পাচ্ছেন সকলেই। মনোজ তিওয়ারি, লক্ষ্মীরতন শুক্লাদের বড় প্রিয় নুপূরদা অনেক লড়াই করেছেন। বাড়িয়ে নিয়েছেন নিজের বৃত্তটা। এই সাফল্যের সুদিনের স্বপ্ন দেখেই তো ২০০৭-র সেই লড়াইয়ের দিনগুলিতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছিলেন। এখন তাঁর জিমে আড়াইশো-র কাছাকাছি মেম্বার।
এখনও আরও ডানা মেলার স্বপ্ন দেখে চলেছেন। ইচ্ছা আনন্দপুর, নাকতলা এইসব জায়গায় আরও চেন খোলা। কারণ উড়ান ভরতে শুরু করলে তার তো কোনও শেষ নেই। তখন শুধু একটা কথাই মাথায় থাকে স্কাই ইজ দ্য লিমিট। অ্যান্তেপ্রেনিওর হতে গেলে কিন্তু নিজে হাতে করে কেউ কিছু সাজিয়ে দেবেনা। সব নিজেকেই গড়ে নিতে হবে।