এক পঙক্তিতে দাঁড়িয়ে বোয়িংয়ের বিমান, টেসলার গাড়ি আর মুন্নার রিক্সা

এক পঙক্তিতে দাঁড়িয়ে বোয়িংয়ের বিমান, টেসলার গাড়ি আর মুন্নার রিক্সা

Friday February 09, 2018,

3 min Read

ইলন মাস্ক সাহেবের দৌলতে ইলেকট্রিক কার নিয়ে এখন আর উত্তেজনা করার কিছু নেই। বাড়ির সামনে দিয়ে যে টোটোগুলো ছোটে সেগুলিও এখন চলে ব্যাটারিতে। রিক্সায় লাগানো হচ্ছে ব্যাটারি। আর অক্লেশে দৌড়চ্ছে। চার্জ দেওয়ার যে কী মহিমা, সেকথা সকলেই বুঝতে পারছে। আর তাই রিক্সার মাথায় সোলার প্যানেল লাগানোর কথাও ভাবছেন বাড়ির সামনের রিক্সা স্ট্যান্ডের মুন্না দা। পরিবেশ দূষণ নেই। টেসলার গাড়িই বলুন কিংবা পাড়াতুতো মুন্নার তেচাকার রিক্সা, ইলেকট্রিক যে ভবিষ্যৎ। সেকথা সম্যক বুঝতে পেরেছে অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি। 

image


পেট্রোল, ডিজেলের দাম নিয়ত বাড়ছে। তাই মধ্যবিত্ত মানুষও আজকাল ইলেকট্রিক স্কুটারের কথা ভাবছেন। অটো সেক্টরের হিসেব বলছে গত দু বছরে চোখে পড়ার মতো বেড়েছে ইলেকট্রিক স্কুটার বিক্রির সংখ্যা। ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মার্কিন মুলুকে ইলেকট্রিক গাড়ির বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৪৫ শতাংশ হারে। ভারতেও বাড়ছে বিক্রি। দেশে ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের মফঃস্বল শহরে রাস্তার মোড়ের সাইকেলের দোকানেও ব্যাটারি চালিত গাড়ি তৈরি করানো হয়। কিন্তু এবার আরও একটু এগিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কিছুদিন পর ব্যাটারিতে বিমান চললে অবাক হবেন না। সম্প্রতি বোয়িং যে বিনিয়োগ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে শক্তিশালী ব্যাটারি তৈরির জন্য নতুন সংস্থা নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এই ধরনের ব্যাটারিতে বিমান চালানো সম্ভব। এরোস্পেস সংস্থা ‘হরাইজন ভেঞ্চারর্স’ সম্প্রতি ব্যাটারি স্টার্টআপ কুবার্গ এর অংশীদারীত্ব কিনেছে। বর্তমান যে ব্যাটারি টেকনোলজি রয়েছে তা এয়ারক্রাফটের জন্য যথেষ্ট ভারী। কুবার্গের সিইও এবং কো ফাউন্ডার রিচার্ড ওয়াং জানাচ্ছেন, তারা তাই এই প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তিনি। এবং সেভাবেই পরিকল্পনা শুরু করেছে এই সংস্থা।

স্ট্যানফোর্ডের অধ্যাপক মুরো পাস্তার সঙ্গে মিলে ওয়াং কুবার্গ তৈরি করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল হালকা অথচ দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি তৈরি করা। একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওয়াং জানিয়েছেন, কুবার্গ এবং বোয়িং এর মধ্যে পার্টনারশিপ নতুন ধরনের ব্যাটারি তৈরিতে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। কুবার্গের ব্যাটারির কার্যক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বের অন্যতম এরোস্পেস সংস্থার সঙ্গে ওদের পার্টনারশিপ ভবিষ্যতে এরোস্পেস প্লাটফর্মকে আরও জোরদার করারই লক্ষ্য নিয়ে হয়েছে, জানিয়েছেন ওয়াং। বোয়িং এর ফান্ডিং নিয়ে টিম এবং গবেষণা বাড়িয়েছে এই সংস্থা। ক্রেতারা যাতে বেশি সুবিধা পান তার জন্য টেকনোলজি আরও উন্নত করে স্বয়ংক্রিয় উৎপাদনে নজর দিয়েছেন।

সংস্থার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক ব্যাটারিগুলিতে প্রথা মতো যে অর্গানিক ইলেক্ট্রোলাইট ব্যবহার করা হয় তার থেকে কুবার্গ টেকনোলজি আরও সুরক্ষিত ও টেকসই। কুবার্গ টেকনোলজি চিরাচরিত অর্গানিক ইলেক্ট্রোলাইটকে বদলে নিরাপদ এবং দীর্ঘস্থায়ী নন ফ্লেমেবল সলভেন্ট ও সল্টে তৈরি হয়, বলা হয়েছে ওয়েবসাইটে। ওদের ইলেক্ট্রোলাইট রাসায়নিক স্টেবিলিটি, হাই-ভোল্টেজ ক্যাথোডের সঙ্গে লিথিয়াম মেটাল অ্যানোড একত্রিত করে অভূতপূর্ব শক্তি উৎপাদন এবং নির্ভরযোগ্যতা দেয়। এই নিরাপত্তাই বোয়িং এর ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিভ নর্ডলুন্ড কে কুবার্গ এর প্রতি আকৃষ্ট করে। তিনি জানিয়েছেন, কুবার্গ এর ব্যাটারি টেকনোলজি বাজারে অন্যান্য প্রযুক্তির তুলনায় সবচেয়ে শক্তিশালী। এর ইউনিক কেমিস্ট্রি ব্যাটারিকে নিরাপদ এবং দীর্ঘস্থায়ী করে তুলেছে।

তবে এখনই বিদ্যুৎ চালিত প্লেন তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে না। বাড়তে থাকা জ্বালানির দামের কথা ভেবে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ফ্লাইট স্কুলে ট্রেনিংয়ের সময় এই অভিনব টেকনোলজির ব্যবহার করা হয়। তবে যাই হোক না কেন কুবার্গ এবং সঙ্গে বোয়িং এর গাঁটছড়ায় ভবিষ্যতে বৈদ্যুতিক বিমানের সম্ভাবনা জোরাল হচ্ছে। জ্বালির খরচ বাঁচিয়ে বিমানে ব্যাটারি ব্যবহার করা গেলে টিকিটও সস্তা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা এভিয়েশন ফুয়েল বা বিমান চালানোর জ্বালানির দাম সব থেকে বেশি হওয়ায় বিমান পরিষেবার দামও চড়া থাকে। গত বছর জ্বালানি এবং অন্যান্য ট্যাক্স ২৫ শতাংশ বেড়েছিল গোটা বিশ্ব জুড়ে। ওই সময়ে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স জানায়, জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ বেড়েছে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সিইও ডোগ পার্কার এই বাড়তে থাকা জ্বালানির দামে চিন্তিত বোধ করেন। কারণ তাতে ক্রমশ ভাড়া বাড়াতে হয়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এভাবে প্লেন যাত্রার খরচ বাড়তে থাকলে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ যাতায়াতের আগে দুবার ভাববেন। সময় বেশি খরচ করে হলেও বিকল্প রাস্তা খুঁজবেন। আর সে অবস্থা থেকে রিনিউয়েবল এনার্জি ব্যবহারই একমাত্র সুরাহা।

একই ভাবে ভাবছে বোয়িং এবং কুবার্গ। তবে দুটো সংস্থাই অবশ্য জানিয়েছে, শক্তিশালী অথচ হালকা এই ব্যাটারি কবে বাজারে আসবে তার সময় নির্দিষ্ট হয়নি। এখনও নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াং জানান, এবছরের শেষের দিকে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রোটোটাইপ আনতে পারে এই সংস্থা।