ফ্যাশনে ফিরেছে আরতির ‘নেহেরু জ্যাকেট’
কথায় আছে পুরানো চাল ভাতে বাড়ে।সেই পুরানো জহরলাল নেহেরুর জ্যাকেটকেই নয়া আঙ্গিকে তৈরি করে টিন এজদের ফ্যাশনে ঝড় তুলেছেন আরতি পোদ্দার। বয়স নয় নয় করে ৬০টি বসন্ত পেরিয়েছে, তাতে কী? মনের উদ্যমতা কমেনি একটুও। আর এতে ভর করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র ডাকে সাড়া দিয়েছেন রাঁচি নিবাসী আরতি পোদ্দার। এই বয়সে তাঁর লক্ষ্য, নেহেরু জ্যাকেট তৈরি করে বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া।
বয়স কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এই সত্যিটি প্রমাণ করতেই তাঁর ‘মালবেরি লাইফস্টাইল’এই উদ্যোগ নিয়েছে। এরকম প্রেরণা পেলেন কোথা থেকে? আরতি জানিয়েছেন, ৭২ বছর বয়সে তিনি দেখেছিলেন, তাঁর বাবাকে নতুন ব্যবসায় হাত দিতে।
কিন্তু হঠাৎ নেহেরু জ্যাকেট কেন? ব্যাপারটার মধ্যে অনেক নতুনত্ব রয়েছে বলে মত আরতির। নতুন প্রজন্ম নতুন ভাবে এই স্টাইলকে গ্রহণ নিয়েছে। বিভিন্ন সিরিয়ালে এখন নেহেরু জ্যাকেট পরার একটা চল হয়েছে। এখান থেকেই আরতির মাথায় ‘নেহেরু জ্যাকেট’ তৈরি করার বুদ্ধিটা আসে। বেশ কিছুদিন ধরেই অন্যরকম কিছু একটার ব্যবসা শুরু করতে চাইছিলেন আরতি। রাঁচিতে বর্তমানে আলাদা করে ‘নেহেরু জ্যাকেট’ তৈরি করার মত একটাও কোম্পানি নেই। আরতির ইচ্ছেপূরণ হয়েছে। ‘মালবেরি লাইফস্টাইল’ এক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের ব্যবসায় সাফল্য পেয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ব্যবসায় এত তাড়াতাড়ি সাফল্য আসে যে, ডিসেম্বরেই অনলাইনে নিজের ব্যবসাকে ছড়িয়ে দেন আরতি।
বিহারের কোহালগাঁও-তে কেটেছে আরতির ছোটবেলা। এরপর পাটনার ‘উওম্যান কলেজ’ থেকে ইতিহাসে স্নাতক নিয়ে পাশ করেন আরতি। সেই সময়ই রাঁচির এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। জীবনে সমস্ত ক্ষেত্রে স্বামীর সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন। ছোটছেলে যখন একটা ব্যবসা শুরু করবে বলে চিন্তাভাবনা করছিল, সেই সময় আরতিও নিজের ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেন। সানন্দে সেদিন আরতির মতামতে সায় দিয়েছিলেন তাঁর গোটা পরিবার।
গোটা দেশের সেরা জায়গা থেকে কাঁচামাল আনান আরতি। সিল্কের জন্য বিখ্যাত ভাগলপুর থেকে আসে সিল্ক। বহু তাঁতী ব্রতী হয়েছেন আরতির এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য। বর্তমানে বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘মালবেরি লাইফস্টাইল’-এর শাখা খোলার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।শুধু তাই নয়, মহিলা এবং শিশুদের জন্যও ‘নেহেরু জ্যাকেট’ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে আরতির।
কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ফোন আসে আরতির কাছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য একটি ‘নেহেরু জ্যাকেট’ তৈরি করে দিতে হবে তাঁকে। এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন জেনে গর্ববোধ করেছিলেন আরতি। অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বজায় রেখে বেছে নিয়েছিলেন লাল রঙ। পাঁচঘণ্টার সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণও ছিল আরতির গোটা পরিবারের।
তাঁর এই সাফল্যের পেছনে পরিবারের সমর্থনের কথা বারবার স্বীকার করেছেন আরতি। যখনই ভারতের অন্যান্য শহরে ঘুরতে যান, লক্ষ্য রাখেন সেখানকার নতুন নতুন ডিজাইনের দিকে। আরতির জীবনে একটাই লক্ষ্য, ‘মালবেরি লাইফস্টাইল’কে সারা ভারতে ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে ‘নেহেরু জ্যাকেট’ বলতে মানুষ একটা নামই বোঝে, তা হল ‘মালবেরি লাইফস্টাইল’।