জানতেন আর হাঁটতে পারবেন না, তবু...

জানতেন আর হাঁটতে পারবেন না, তবু...

Wednesday November 18, 2015,

8 min Read

এটা একটা দুষ্টু মিষ্টি প্রেমের গল্প। একটু ক্লাইম্যাক্স। একটু ট্র্যাজেডির ছোঁয়া আবার সবাইকে কাঁদিয়ে শেষ মেশ মূল চরিত্রের জয়জয়কার। এই কাহিনীর প্রধান চরিত্র নারী। গল্পের নয়। বাস্তবের এক আশ্চর্য নারী। দীপা মালিক। সুশ্রী। চোখের কোণে লাজুক স্বভাব উঁকি মারে না। সুঠাম মন। তাই চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেন। সেদিন বিকেলে জাপানি বাইকে বসা ঝকঝকে এক তরুণের দিকে তাকিয়ে ছিলেন দীপা। কিন্তু দীপা যে তাঁকে নয়, তাঁর বাইকটি দেখছেন তা বুঝতে নায়োকোচিত সুপুরুষের কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল। মৃদু ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, "বাইক সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন?" উল্টোদিকে দীপার স্বদর্প উত্তর, "চাবিটা দিন, দেখিয়ে দিচ্ছি কতটা জানি।" 

সেই প্রেমের শুরু। কেবল চাবি নয় গোটা জীবনটাই দীপার জিম্মায় দিতে তৈরি হয়ে গেলেন ওই তরুণ। 

দীপা মালিক এখন প্যারাপ্লেজিক, তাঁর বুকের নীচ থেকে পুরো শরীরটাই অসাড়, তবে তিনি কিন্তু 'স্বাভাবিক' জীবনে ফিরে যেতে ব্যাকুল নন। তিনি জানেন, তিনি আর কোনওদিন স্বাভাবিক হতে পারবেন না। "স্বাভাবিকত্ব জিনিসটা খুব একটা 'কুল' নয় বুঝলেন", বললেন দীপা। তবে দীপা স্বাভাবিক বা সাধারণ সবকিছুর উর্ধ্বে। তিনি অসাধারণ। অনন্যা। এবং তাঁর জীবনের সব খুঁতগুলোকে সঙ্গে নিয়েই নিখুঁত হতে চান তিনি।

দীপা মালিকের সঙ্গে কথা বলার পর আমরাও বুঝলাম মানুষের আসল শক্তিটা কী। তাঁর যে দুটো হাত হুইলচেয়ারের চাকা ঘোরায়। বাইকের গিয়ার সামলায়, সযত্নে জিতে নেয় অর্জুন পুরস্কার, আকাশের বুক চিরে জ্যাভলিন স্টিক ছোড়ে। আবার একইভাবে নিজের সন্তানদের হাত ধরে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগায়। সেই খানে তার আসল শক্তি ঠিকরে বেরয়।

image


"আমি সবসময় নিজেকে প্রমাণ করতে চাইতাম। এটা কেমন যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল - আমি বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে চাইতাম যে আমার শারীরিক অসুস্থতা আমার জীবনকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারেনি।"

৬ বছরের দস্যি দীপার স্পাইনাল কর্ডে হঠাৎই টিউমার ধরা পড়ে। সেরে উঠতে তিনবছর সময় লেগেছিল তাঁর। তবে খুব অল্প বয়সেই জীবনের জটিল পাঠ পড়তে শিখে গিয়েছিল সে। রসিকতা করা ছিল দীপার ছোট্টবেলার স্বভাব। ভাগ্যের এমনই পরিহাস, জীবন খুব নিষ্ঠুর 'রসিকতা' করল দীপার সঙ্গে। ঠিক যে বিষয়গুলো দীপাকে সকলের চেয়ে আলাদা করে তুলেছিল, সেই জায়গাটাই কেড়ে নিল।

"আমার মতো গেছো, দস্যি মেয়ে - বাড়িতে থাকতেই পারতাম না। গাছে চড়া, লুকিয়ে বন্ধুদের বাইক চালানো, হঠাৎ হঠাৎ কাছাকাছি বাইক নিয়ে ঘুরতে চলে যাওয়া, এগুলোই ছিল আমার জীবন," বলছিলেন দীপা।

"আপনার যদি কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই জীবনের সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করতে পারবেন। শয্যাশায়ী অবস্থাতেও তাই আমি স্থির করে নিয়েছিলাম, আমাকে আরও অনেক কিছু শিখতে হবে, জানতে হবে। কারণ এর ঠিক বিপরীত প্রান্তেই তো আমার জীবন অপেক্ষা করছিল।"

image


ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

দুজন মিলে বেশ সুখে সংসার করছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই ঘর আলো করে প্রথম সন্তান দেবিকা এল। কিন্তু, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। "তখন ওর এক বছরও হয়নি। মেয়েকে বাইক ধাক্কা মারল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর দেবিকার শরীরের বাঁদিক অসাড় হয়ে গেল। আমরা ওকে পুনে কম্যান্ড হসপিটালে নিয় গেলাম। সেই এক বিছানা, যেখানে একসময় আমি দিনের পরদিন শুয়ে থাকতাম। সেই বেডে ছিল দেবিকা," বললেন দীপা।

"সেই সময় কানাঘুষো শুনতাম অনেকেই বলত, আমার অসুস্থতার কারণেই আমার মেয়ের এই অবস্থা। সেই প্রথম বুঝতে পারলাম, সমাজের চোখে আসলে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার অর্থ কী? আমার ছোটবেলায় বাবা,মা সবসময় আমাকে আগলে রাখতেন। চারপাশের মানুষজন যে এভাবে বিষোদ্গার করতে পারেন ধারণাও ছিল না। বাবা আমাকে শিখিয়েছিলেন - ঈশ্বর সকলের জীবনে তাদের ভাগের লড়াইটুকু লিখে রেখেছেন। তোমার লড়াই এটাই।"

সব ভুলে দীপা এবং তাঁর স্বামী মেয়ের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন। যেভাবে একদিন দীপার বাবা,মা দিনরাত এক করে তাঁর সেবা করতেন, সেভাবেই। এরই মাঝে সংসারের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতেই যেন জন্ম নিলো তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান, অম্বিকা। "কিন্তু আমার চ্যালেঞ্জের যেন কোথাও শেষ ছিল না। ১৯৯৯ সালে আমার স্বামীকে কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে হল। তার কিছুদিনের মধ্যেই আমার টিউমার রিল্যাপ্স করল।ওঁর সাথে যোগাযোগ করার কোনও উপায় ছিল না। আমার শ্বশুরবাড়ির সকলেও খুব ভেঙে পড়েছিলেন।"

"প্রতিদিন কার্গিল থেকে শুধুই ধ্বংসের খবর পেতাম। রোজই কেউ না কেউ প্রাণ হারাচ্ছিলেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি জানতাম না আমার স্বামী আর ফিরবেন কি না। শুধু জানতাম, আমাকে শক্ত হতে হবে। আমার দুই মেয়ের জন্য আমাকে বাঁচতে হবে।"

এরই মধ্যে দীপার টিউমার অপারেশন করতে হল। যুদ্ধে আহত সৈনিকদের অনেককেই সেনা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। পুরো হাসপাতালটাই তখন যেন একটা আইসিইউ। "এমন সব মানুষের মাঝে আমার অপারেশন হচ্ছিল যাদের প্রত্যেকেই বিনা দোষে, কেউ চোখ, কেউ হাত, কেউ পা হারিয়েছেন। নিজেদের বাঁচাতে নয়, দেশের সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে তাঁরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করেছেন।" এটাই তাঁকে উৎসাহ যুগিয়েছিল।

অপারেশনের পরই নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়। দীপার ব্রেন টিউবে লিকেজ হয়ে যায়। তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তৃতীয় অস্ত্রোপচারের পর ২৫দিন কোমায় ছিলেন দীপা। আর এতেই শেষ নয়। বরং এখান থেকেই যেন তাঁর জীবনে শেষের শুরু।

পরবর্তী অস্ত্রোপচারের আগেই দীপা জানতেন, তাঁকে এরপর সারাজীবন হুইলচেয়ারে বসেই কাটাতে হবে। তিনি তাঁর চিকিৎসকদের কাছে সাতদিন সময় চান। সাতদিন, নিজের দু'পায়ে শুধুই হাঁটতে চেয়েছিলেন দীপা। তিনি হাঁটতে পারেন, সেই ক্ষমতার উদযাপনই ছিল ওই সাতদিনের লক্ষ্য।

তিনি হতাশ হননি; ভেঙে পড়েননি। সাতদিন ধরে নিজের বাড়িকে পুরোপুরি হুইলচেয়ার ফ্রেন্ডলি বানিয়ে ফেলেছিলেন। অবসর সময়ের পুরোটাই এধরণের চিকিৎসা চলছে এমন মানুষজনকে নিয়ে গঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে চ্যাটরুমে যোগাযোগ করতে থাকেন দীপা। একা ঘরে এটুকুই ছিল তাঁর মনোবল জোগানোর সামান্য উপায়।

যুদ্ধ থেকে স্বাভাবিকভাবেই ফিরে এসেছিলেন দীপার স্বামী। কিন্তু আশপাশের সকলেই ভেবেছিলেন, তিনি হয়তো দীপার সঙ্গে আর সংসার করতে চাইবেন না। "আসলে সমাজের চোখে আমি তখন একটা নিথর দেহ। কিন্তু মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আমার ছিল। আমি তো সেরকম হয়ে যাইনি। আমার মধ্যে জীবনের প্রতিটা বিন্দু তখনও অবশিষ্ট।"

দীপার ইতিবাচক মনোভাব এবং রসবোধই তাঁর জীবনের চালিকাশক্তি। "সবসময় স্বাভাবিক হওয়াটাও তো কোনও কাজের কথা নয়! কাল যদি আমি একজন রাজনীতিবিদ হয়ে যাই, আমি তো কখনওই আমার গদি ছাড়ব না! লম্বা ট্রেন সফর নিয়েও এখন আর চিন্তা করতে হয় না, বা সিনেমার কোনও সিন মিস করারও সুযোগ নেই। আমি সবসময় বেশ ডায়পার পরে বসে থাকতে পারি।"

এছাড়া দীপা সবসময়ই এমন কাজ করে চলেছেন যা তাঁকে আনন্দ দেয়। "আমার তো এখন সবসময় পায়ের তলায় চাকা লাগানো। আপনারা খামোখা আমাকে হুইলচেয়ারে আবদ্ধ ভাবেন কেন,আমি তো এতেই মুক্ত। অশোক চক্রেও তো চাকাই আছে। তা তো অনুপ্রেরণারই প্রতীক। আমি সবাইকেই বলি, আমার অনুপ্রেরণা তো এখানেই আছে, আমার ঠিক নিচে।"

গুজব এবং তা থেকে মুক্তি

"আমি সেই একইরকম ভাবে আবার সকলের নিশানায় চলে এসেছিলাম - 'কী করে ও মেয়েদের দেখাশুনো করবে? ওর তো সবসময় সঙ্গে বাইরের কাউকে লাগবে।' এইসব শুনতাম সবসময়। আর আমার ভিতরের কোনও একটা শক্তি যেন সবসময় চাইত, কী করে এগুলোকে ভুল প্রমাণ করা যায়।"

এই টানাপোড়েনের মাঝেই আরও একটি ঘটনা ঘটে। সংসদে হামলার খবর আসতেই ফের দীপার স্বামীকে সেখানে চলে যেতে হয়। এইসময় সব কোয়ার্টার থেকেই সবাইকে জরুরি ডিউটিতে যেতে হয়েছিল। Squadros Commander এর স্ত্রী হিসেবে বাকি ৩০টি পরিবারের সদস্যদের দেখভাল করার দায়িত্ব এসে পড়ে দীপার উপর। তখনই তাঁর মাথায় নতুন এক ভাবনা উঁকি মারতে থাকে।

আর্মি কোয়ার্টার্সে কোনও কেটারিং সার্ভিস সেই সময় ছিলনা। এরকমই একটি পরিষেবা চালু করার কথা ভাবেন দীপা। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাড়ির কাজের লোক আর সেই সময় বাড়িতে কর্মরত রঙের মিস্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে নিজের ফার্ম হাউস লাগোয়া একটি ছোট্ট জায়গাকে কাজে লাগান দীপা। প্রথমে হোম ডেলিভারি সেন্টার হিসেবে কাজ শুরু হয়। যদিও এখন সেটি একটি বড় রেস্তোরাঁয় পরিণত হয়েছে। "এই রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন অন্তত ২৫০ জন খাবার খেতে শুরু করেন। অন্তত ১০০টি বাড়ি থেকে প্রতিদিন হোম ডেলিভারির অর্ডার আসতে থাকে।" রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা প্রত্যেকে যাতে পড়াশুনো করে এবং অন্তত দশম শ্রেণির পরীক্ষা পাশ করে তা নিশ্চিত করেছেন দীপা। "একটা সময় যে মহিলারা ভাবতেন, আমি আমার স্বামী, সন্তানদের খাওয়াবো কী করে। আজ আমি তাঁদের পরিবারেও খাবার পৌঁছে দিই," বললেন দীপা।

সব আছে, কিন্তু কী যেন নেই...

সকলের প্রিয় এই রেস্তোরাঁ D Place এ অনেকেই নিজের স্ত্রী বা প্রেমিকাকে নিয়ে গল্প করতে আসতেন। এরকমই একজন একদিন দীপাকে বলেন, "আপনি কিন্তু আবার বাইক চালাতে পারেন।" বিদেশে কীভাবে তা করা হয় সেটিও গুগল করে দীপাকে দেখান ওই যুবক।

"আমি সঙ্গে সঙ্গে ওঁকে বলি, আমার বুকের নীচের কোনও অংশই আর কাজ করে না। আমার টরসো ব্যালান্স, লাং ফাংশানিং ঠিক নেই। আমার নার্ভে অনুভূতি নেই, তাপমাত্রার ওঠানামা পর্যন্ত আমি বুঝি না। নিজের মল,মূত্রও আমার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আমি যে একটা রেস্তোরাঁ চালাচ্ছি সেটাই তো একটা চমৎকার।"

কিন্তু ওই যুবক হাল ছেড়ে দেননি। তিনি দীপাকে বোঝান, এটাও সম্ভব। তাঁর মতো মনের জোর যার আছে, তার পক্ষে সবই সম্ভব। পুরোদমে এক্সারসাইজ শুরু করেন দীপা। তাঁর শরীরচর্চার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল সাঁতার কাটা। কোনও এক ব্যক্তি দীপার সাঁতার কাটার ছবি টিভিতে দেখেন। তিনি আসন্ন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্যোক্তাদের বিষয়টি জানান। মহারাষ্ট্র সরকারের তরফ থেকে দীপাকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

image


"তখন আমার ৩৬ বছর বয়স। আমি ভাবলাম অংশ নিয়েই দেখি না। সুযোগ দরজায় কড়া নাড়ছে যখন, হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। আমি প্রতিযোগিতায় নামলাম। পদক জিতলাম। কুয়ালালামপুরের প্রতিযোগিতাতেও গেলাম। সেখানেও রৌপ্য পদক পেলাম।"

দেশের জার্সি গায়ে দিয়ে পদক জিতেছেন, একজন স্পোর্টসপার্সন হয়ে উঠেছেন, নিজের CSR ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন, খোদ বিজয় মালিয়ার কাছ থেকে স্পনসরশিপের অফার পেয়েছেন। কিন্তু তখনও একটা স্বপ্ন পূরণ হয়নি। দীপা চালাতে পারেন এমন বাইক ভারতের কেউ তৈরি করে দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু এক্ষেত্রেও চমক অপেক্ষা করছিল দীপার জন্য। দিন কয়েকের মধ্যেই খোদ Roadies এর টিম ডেকে পাঠাল তাঁকে।

"আপনি বাইকার হতে চান? ন্যাশনাল টেলিভিশনে সকলের সামনে বাইক চালাবেন আপনি।" দীপাকে একথাই বলেছিল টিম Roadies।

image


দীপা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সবটাই সত্যি হয়েছে। 'The Secret' এর একনিষ্ঠ ভক্ত দীপা মনে করেন, সত্যিই মন থেকে কেউ কিছু চাইলে তা নিশ্চয়ই সফল হয়।

জাতীয় স্তরে ৫৪টি সোনা, আন্তর্জাতিকে ১৩টি, ৩টি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন খেতাব, একটি রৌপ্য পদক, এবং সব প্রতিযোগিতাতেই অন্তত প্রথম পাঁচে থাকা। কমনওয়েল্‌থ গেমসে সাধারণ বিভাগের প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়াই করে প্যারা স্পোর্টস-এর আইকন হয়ে উঠেছেন দীপা মালিক।

"বাইকিং আর স্পোর্টস, সকলের মনে হুইলচেয়ারের যে একটা ছবি ছিল, সেটা ভেঙে দিয়েছে। নিজেকে প্রমাণ করতে হলে কিছু করে দেখাতে হবে। আর সকলের নজরে পড়তে হলে একটু পাগলামো তো করতেই হবে।" সেই কারণেই স্রোতের উল্টোদিকে যমুনা নদী পার করে লিমকা ওয়ার্ল্ড অ্যাডভেঞ্চার রেকর্ডস-এ নাম তুলেছেন দীপা। হিমালয়ান রেস এবং ডেসার্ট স্টর্মের মতো চ্যালেঞ্জিং রেসেও Himalayan Motorsports Association (H.M.A.) এবং Federation of Motor Sports Clubs of India (F.M.S.C.I.)-র সঙ্গে অংশ নিয়েছেন তিনি। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে, এমন অবস্থায় টানা আটদিন, ১৮,০০০ ফুট উচ্চতায় মোট ১,৭০০ কিলোমিটার বাইক চালিয়েছেন দীপা।

"সকলে ভেবেছিলেন, আমি একটা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ হয়েই থেকে যাব। আর আমাকে দেখুন, দুটো পাসপোর্ট ভর্তি হয়ে গেছে। গোটা বিশ্বে ঘুরে বেড়াচ্ছি। একদিন জন অ্যাব্রাহামের সঙ্গে বাইক চালাচ্ছি, তো পরদিন অর্জুন পুরস্কার নিচ্ছি," হাসিমুখে বললেন দীপা।

শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আগামী বছর রিও অলিম্পিক্সে শট পাটে নিজের কেরামতি দেখাতে জোরদার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দীপা মালিক। হয়তো তাঁর হাত ধরে আবারও গর্বিত হবে দেশ।

লেখা : বিঞ্জল শাহ্ , অনুবাদ : বিদিশা ব্যানার্জী