চাকরি ছেড়ে মাটির পুতুল বেচেন দুই টেকনোক্র্যাট

চাকরি ছেড়ে মাটির পুতুল বেচেন দুই টেকনোক্র্যাট

Friday January 01, 2016,

3 min Read

কথিত আছে ১৭২৮ খৃস্টাব্দে শিল্পানুরাগী রাজা কৃষ্ণচন্দ্র অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা ও নাটোর থেকে পুতুল শিল্পীদের নিয়ে এসে নদিয়ার ঘূর্ণিতে বসতি গড়ে দেন। সেই থেকে বংশ পরম্পরায় সেই পুতুল বানিয়ে চলেছেন শিল্পী পরিবারগুলি। বেশিরভাগেরই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তবে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই আর্ট কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের পারম্পরিক ধারাতে আধুনিকতার ছোঁয়া আনছেন।

image


এই এলাকারই ছেলে সৌম্যদীপ পাল ও অনির্বাণ পাল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। সৌম্যদীপ, গত সাত বছর ধরে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করছেন। অনির্বান পেশায় কার্টুনিস্ট। নিজেদের এলাকার এই সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে কী ভাবে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় ও তার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান করা যায় তাই ভাবনা চিন্তা করছিলেন সৌম্যদীপরা, আর সেই ভাবনারই ফসল rewee.in ইকমার্স সাইট। রেউই- ঘূর্ণির মাটির পুতুল বিক্রির অনলাইন ও অফলাইন স্পেস। কোম্পানির নাম হিসেবে কৃষ্ণনগরের প্রাচীন নাম রেউইকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা।

“অনলাইন শপিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, মানুষ আজকাল সব কিছুই ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করছেন। কিন্তু আমাদের এখানকার শিল্পীরা প্রযুক্তি ব্যবহারে সেভাবে সড়গড় না হওয়ায় এই সুবিধা নিতে পারছেন না, আমরা সেই সুযোগটাই করে দিতে চেয়েছি”, বললেন সৌম্যদীপ।

প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করা ও কর্মসংস্থান এই দুটিই ছিল প্রাথমিক লক্ষ্য। “ভারতের অনলাইন উপহারের বাজারের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, ২০১৫-১৭ আর্থিক বছরে

ভারতের হস্তশিল্পের রফতানি ১৭, ০০০ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে, এই বিরাট বাজারটাকেই আমরা ধরতে চাইছি”, জানালেন সৌম্যদীপ।

image


অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও এই মাটির পুতুল বিক্রি বৃদ্ধিতে চেষ্টা করছে রেউই। গতবছর ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যবসা শুরু করেছে এই সংস্থা। এই ঐতিহ্যবাহী পুতুলকে তার নিজস্ব পুরনো রূপেই বিক্রি করে রেউই, কারণ সৌম্যদীপরা মনে করেন এটাই এই পুতুলের ইউএসপি। তবে ঐতিহ্য ও অভিনবত্ব বজায় রেখে আধুনিকিকরণের জন্য নানা পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালাচ্ছে রেউই, তৈরি করছে নানা উপহার সামগ্রী। শিল্পীদের জন্য নিয়মিত কর্মশালার আয়োজনও করা হয়, যেখানে নতুন নতুন জিনিস তৈরির শিক্ষা পান শিল্পীরা।

“শুরুটা মূলতঃ আবেগ থেকেই হয়েছিল, নিজেদের এলাকার ঐতিহ্যকে বাঁচাতে হবে, এলাকার শিল্পীদের বাঁচাতে হবে এটাই ছিল ভাবনা। তবে এখন লাভজনক ব্যবসার মডেল তৈরি করাতে গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা”, বললেন সৌম্যদাপ।

মাটির পুতুল অত্যন্ত ভঙ্গুর হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেতারা অনলাইনে মাটির পুতুল কিনতে চান না। সেই জন্য প্যাকেজিংয়ে বিশেষ জোর দিচ্ছে রেউই। এছাড়াও পুতুলের পরিবহণের সময় বিমার ব্যবস্থাও করেছে তারা।

মাটির পুতুলের পাশাপাশিই কাঠ, খাদি ও হাতে বানানো কার্ড বিক্রিও শুরু করেছে রেউই, চলছে পরীক্ষা। বর্তমানে শুধু বিজনেস টু ক্লায়েন্ট মডেলেই কাজ করছে রেউই তবে আগামী দিনে বিজনেসটুবিসনেস মডেলেও কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তাদের। কিছুদিনের মধ্যেই আলিবাবা, ফেডএক্সের মত সংস্থার সাহায্যে বিদেশে রফতানির ব্যবস্থাও করবে তারা। ভারতে ইন্ডিয়ামার্টের মত কোম্পানির সাহায্যে বিজনেসটুবিজনেস ব্যবসা শুরু করবে।

এই শিল্পের একটি নিজস্ব বাজার রয়েছে, শুধু দেশে নয় ভারতের হস্তশিল্পের কদর রয়েছে বিদেশেও। পশ্চিমবঙ্গের যে হস্তশিল্পগুলি বিশ্বের আঙিনায় সমাদৃত তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য নদিয়ার ঘূর্ণির মাটির পুতুল। পৃথিবীর প্রায় সব হস্তশিল্প মিউজিয়ামে রয়েছে এই পুতুল। শৈল্পিক নৈপুণ্য, গঠনে বাস্তবতার ছাপ ও নিখুঁত অভিব্যক্তিতে এই পুতুলের জুড়ি মেলা কঠিন। কৃষ্ণনগরের অদূরবর্তী এই এলাকায় রয়েছেন অসাধারণ শিল্পীরা।

হস্তশিল্পজাত দ্রব্য ছাড়া ফ্লেক্স, ব্রোসিওর, লোগো ইত্যাদি ডিজাইনে সাহায্য করা ও ডিজিটাল পেইন্টিং বিক্রিও করে রেউই।