সাফল্য পেতে চাইলে হোন লম্বা দৌড়ের ঘোড়া

সাফল্য পেতে চাইলে হোন লম্বা দৌড়ের ঘোড়া

Tuesday January 05, 2016,

4 min Read

সংস্থা গড়ে ফেললেই হবে না। সেটা দীর্ঘদিন ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এটা কোনও স্বল্পদৈর্ঘের ফিল্ম নয়। বসলাম দেখলাম আর উঠে গেলাম। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি লড়াই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার কিছু মৌলিক শর্ত আছে। আরেকভাবে বলতে গেলে সাফল্যের শর্ত। আপনি হয়তো অনেকগুলোই জানেন। কিন্তু এমন অনেক দিক আছে যা আবারও ঝালিয়ে নেওয়া দরকার।

যেমন কর্মী বাছাইয়ের প্রশ্নে, ওয়ান ম্যান আর্মি বলিউড কলিউডের সিনেমায় দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে আপনি জানেন যে কোনও সংস্থা চালাতেই কর্মচারী প্রয়োজন। শুধু কর্মচারী বললে কম বলা হয়। বলা উচিত দক্ষ এবং যোগ্য কর্মী। এমন কর্মী যাঁরা আপনার সংস্থাকে টেনে নিয়ে যেতে পারবেন। অর্থাৎ যাঁদের মধ্যে সেই সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের খুঁজে বের করা জরুরি। প্রতিদিনই আমাদের এমন বহু কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ হয়, যারা সেই সম্ভাবনাময় কর্মীটিকে পেয়েও হারিয়েছে। প্রতিভা বা ট্যালেন্ট হল স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট। কিন্তু আপনি যখন একটা দ্রুত গতির স্টার্টআপ নিয়ে এগোচ্ছেন, তখন কর্মী নিয়োগ, কাজের যোগ্য করে তোলা, তারপর কাজে লাগানো-ব্যাপারটাই বেশ কঠিন। একটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস টিম গড়ে তোলা ও ধরে রাখা দুই'ই শক্ত। কিন্তু মনে রাখবেন সেটা অসম্ভব নয়।

image


একজন আন্ত্রেপ্রেনার হিসাবে আপনাকে সবসময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। কোনটা ছেড়ে কোনটা করবেন এই নিয়েই আপনাকে থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঠিক করাটাই হল চাবিকাঠি। সে ক্ষেত্রে আপনার প্রথম লক্ষ্যই হবে একটা আন্তর্জাতিক মানের টিম গড়ে ফেলা। প্রথম দিকে এমন একটা টিমের সদস্যদের খুঁজে বের করাটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সেই সব প্রতিভাশালী সম্ভাবনাময় কর্মীরা হয় নিজের কাজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত, নয়তো নিজেদের তুলে ধরতে একদমই অনাগ্রহী। আপনার যদি স্বচ্ছ ও সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, সেই ট্যালেন্টকে আকর্ষণ করাটা সহজ হয়ে যায়। ঠিক যে ভাবে একজন কাস্টমারকে কাছে টানা হয়।

আপনার দ্বিতীয় কাজ হল কষ্ট করে যে টিমটা গড়ে তুলেছেন তা ধরে রাখা। কাজের জায়গায় ছোটখাট কনফ্লিক্ট বা বিরোধ থেকেই থাকে। এখন দেখতে হবে সেটা যাতে প্রোডাকটিভ হয়। তা যাতে কাজের পরিবেশকে নষ্ট করতে না পারে। আমাদের এই কনফ্লিক্টেরও প্রয়োজন রয়েছে। মতের আদানপ্রদান থেকেই তো সৃষ্টিশীলতা জন্ম নেবে। একটা হাই-পারফর্মিং টিম এই গঠনমূলক কনফ্লিক্টকে কাজে লাগায়। আপনাকে সবসময় কাস্টমারদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, তার ওপর কর্মচারী ও আপনার অফিসও আলাদা। রোজ রোজ কর্মীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎও হয় না। ফলে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলাও সম্ভব নয়। তা হলে আপনি কী করবেন? ঠিক যে ভাবে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করেন, সে ভাবেই তাঁদের সঙ্গে বসবেন। আপনাকে বুঝতে হবে ফিডব্যাক অত্যন্ত জরুরি। যা না থাকলে কোনও একদিন ফলাফল অত্যন্ত খারাপ হতে পারে।

আপনি যাঁদের নিয়ে ফেলেছেন তাঁরা সবাই কিন্তু আপনার সংস্থার উপযুক্ত নয়। এটা অনেক স্টার্টআপের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গিয়েছে।স্টার্টআপের ব্যাপারে অভিজ্ঞ একজন এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, স্টার্টআপ শুরুর দিকে দ্রুত নানারকম পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বড় মাত্রায় লেনদেনও ঘটতে থাকে। অনেক কর্মীই এর সঙ্গে মানিতে নিতে পারেন না। নীতিগত এই পরিবর্তনকে একজন কর্মী কী চোখে দেখছেন বা দেখবেন তা জানা জরুরি। এ জন্য ইন্টারভিউয়ের সময় একজন প্রার্থীকে হোমওয়ার্ক দেওয়া যেতে পারে। 'আপনি কি এই কাজের উপযুক্ত'- এই সেল্ফ-অ্যাসেসমেন্ট পরবর্তী সময়ে কাজে লাগে।

কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বেশি সময় নিয়ে ফেলি। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। একজন নিয়োগকর্তা খুব ট্যালেন্টেড প্রার্থীর সন্ধান পেলেন, যাঁকে পেলে তাঁর টিম আরও ভালো কাজ করবে। কিন্তু সেই কর্মীকে নেওয়া সহজ ছিল না। ভালো সংস্থায় কাজ করতেন, মাইনেটাও মোটা পেতেন। তাঁকে নিতে গেলে স্বভাবতই বেশি পয়সা ঢালতে হবে। নেব কী নেব না, এই ভাবতেই তাঁর পাঁচ মাস গড়িয়ে গেল। একসময় নিয়েও ফেললেন। একবার সে যোগ দেওয়ার পরে, নিয়োগকর্তার ব্যবসায়িক কাজকর্ম যেন আরও সহজ হয়ে গেল। অথচ দেখুন, তাঁকে নিতে কত না টালবাহানা করেছিলেন। আবার একজন কর্মী উপযুক্ত নন। তাঁকে আর দরকার নেই, এটা বলতেও অনেকের সময় লেগে যায়। সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করবেন যখনই নতুন কাউকে নেবেন তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন,কাজটা তাঁর কেমন লাগছে। আবার কাউকে মুখের ওপর বলে দিন তাঁকে দিয়ে হচ্ছে না।

কর্মী-সংস্কৃতি বলেও একটা কথা আছে। আপনি সেটায় নজর দিলেও আছে, না দিলেও আছে। অর্থাৎ ঠিক কাদের নিয়ে আপনার টিম গড়ে উঠছে। এটা ঠিক ততটাই জরুরি, ঠিক যতটা গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট। এই কাজটা গোড়ার দিকে যত করতে পারবেন ততই ভালো। আর একটা কথা। একটা কোম্পানি গড়ে তুলতে ধৈর্য ও সময় লাগে। মনে রাখবেন এটা ম্যারাথন দৌড়, স্প্রিন্ট নয়।

(লিখেছেন স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বিশেষজ্ঞ রাজদুলাল মুখোপাধ্যায়)