প্রযুক্তি নয়, আসল সম্পদ কর্মীরাই : নরউড

প্রযুক্তি নয়, আসল সম্পদ কর্মীরাই : নরউড

Friday November 06, 2015,

4 min Read

একদিকে কৃষ্ণ। অন্যদিকে অক্ষৌহিণী সেনা নামে পরিচিত যুদ্ধ পরাঙ্গম চতুরঙ্গ বাহিনী। কাকে বাছবে তুমি? সেদিন কৃষ্ণের বদলে অক্ষৌহিণী সেনাকে বেছে যে ভুলটা করেছিলেন দুর্যোধন, তা এক কথায় হিস্টোরিক্যাল ব্লান্ডার। ঐতিহাসিক ভুল। নইলে হয়তো মহাভারতীয় যুদ্ধকে লিখতে হত অন্যভাবে।

২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর। টেকস্পার্কস সম্মেলনে টিম ওয়ার্ক শীর্ষক বক্তৃতায় টেলর নরউড নামের এক ঝকঝকে তরুণ যে কথাগুলো বললেন, তা বারবার মনে করিয়ে দিল মহাভারতের আখ্যান। ‘যতই সতর্ক থাকুন না কেন, সংস্থার উন্নতি কিন্তু নির্ভর করে টিমের ওপর। কাকে নেবেন, আর কাকে বাদে দেবেন, তা নিয়ে সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন, ভাল টিম মানে সাফল্য। টিম খারাপ হলে ব্যর্থতা।’


টেকস্পার্কসের সম্মলেন টেলর নরউড

টেকস্পার্কসের সম্মলেন টেলর নরউড


টেলর নরউড। বিভিন্ন সংস্থায় সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। জ্যাবং ডট কমের গ্লোবাল বিজনেস ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার পদে রয়েছেন নরউড। বানিজ্যিক দুনিয়া তাঁকে চেনে দক্ষ টিম লিডার হিসাবে। তিনি আগ্রাসী এবং নমনীয়। প্রযুক্তিতে বিশ্বাস করেন। কিন্তু অনেক-অনেক বেশি গুরুত্ব দেন সম্পদের ওপর। টেকস্পার্কসের সম্মেলনে নরউডের বক্তব্যে উঠে এল টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এক নতুন দর্শন।

দরকারে কঠোর হও

টিমের ওপর ভরসা থাকা ভাল। কিন্তু পরিস্থিতি চাইলে টিমের কোনও সদস্যকে ছাঁটাই করার কাজটাও টিম লিডারকে করতে হবে। কারণ দক্ষ কর্মী যেমন টিমের সম্পদ, তেমন অদক্ষ কর্মীকে রেখে দেওয়া হলে কর্মসংস্কৃতিতে ধাক্কা আসে। টি‌মওয়া‌র্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নরউডের বক্তব্য, প্রযুক্তি কিংবা বিপণনের কৌশলগুলোকে বিভিন্ন সংস্থা যতটা গুরুত্ব দেয়, ততটা গুরুত্ব পায় না মানবসম্পদ।

কর্মীদের উত্সাহ দিন

যুদ্ধের সময় সেনানায়ক শুধুই জয়ের কথা ভাবেন। টিম লিডারের কাজটাও তাই। নরউডের কথায়, হেরে যাওয়ার ভাবনা যেন টিম লিডারের মাথাতেও না আসে। তাতে টিম আগেই হেরে বসে থাকবে। টিম লিডারের লড়াকু মনোভাব দেখালে, তাঁর টিমও হয়ে উঠবে আগ্রাসী। এপ্রসঙ্গে টেলর নরউড টেনে আনলেন স্পেস এক্স-এর এলন মাস্কের কথা।

তিন-তিন বার রকেটে উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হয়ে স্পেস এক্স তখন দেওলিয়া হওয়ার মুখে। মনোবল তলানিতে। কী হবে, কেউ জানে না। কর্মীদের সামনে হাজির হয়ে মাস্ক বললেন, ‘‘জানি রকেট বানানো সহজ কাজ নয়। তবে তোমরা যদি আর একবার নিজেদের উজার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দাও, তবে আমি রকেট তৈরির অর্থ জোগাড় করব।’’ মাত্র দশ মিনিটের বক্তৃতা। আর বাকিটা ইতিহাস। রকেট তৈরি করতে নাসার লাগে তিন বছর। সেখানে মাত্র ৬ সপ্তাহের মধ্যে রকেট তৈরি করে, প্রথম বেসরকারি সংস্থা হিসাবে তা কক্ষপথে স্থাপন করে স্পেস এক্স পাকাপাকিভাবে ঢুকে পড়ল ইতিহাসের পাতায়।

বোঝো এবং বোঝাও

কার কী দায়িত্ব, সেটা বোঝানোর দায়িত্ব টিম লিডারের। সঙ্গে নিজের দায়িত্বটাও তাঁর বোঝা উচিত। নিজের টিমের সঙ্গে আলোচনার সময় টিম লিডারের এমন কিছু করা ঠিক নয়, যাতে মনে হবে তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি। বরং তাঁর দায়িত্ব হল, টিমের সদস্যদের হাতে ঠিকমতো কাজ বণ্টন করা। সিইও পদে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের কাছে নরউডের পরামর্শ, ‘‘বিকল্প তৈরি রাখুন। দক্ষ কর্মী সংস্থা ছেড়ে চলে গেলে তুলে আনতে হবে সমান বিকল্প কাউকে।’’

ই-মেল নয়, আলোচনা হোক মুখোমুখি

‘‘সবচেয়ে হতাশ হই কখন জানেন? আজকাল মুখোমুখি কথা না বলে কর্মীরা ই-মেল করেন। এটা হল প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ।’’ নরউডের কথায় চমক লাগে। যুক্তির জাল বিছিয়ে তিনি বললেন, ‘‘মুখোমুখি কথায় ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা কমে। গড়ে ওঠে সম্পর্ক। ই-মেল কিংবা স্কাইপে সে সুযোগটা কোথায়?’’

কর্মী যদি ভুল করেন, তবে ঠিক কী করা উচিত? টেলর নরউডের পরামর্শ, ‘‘কার্পেটের নিচে ধুলো জমানোর বদলে তা পরিষ্কার করুন। ভুল যে কারও হতে পারে, তা সংশোধন করুন। সঙ্গে উত্সাহ দিন, যাতে কর্মীর মনোবল ধাক্কা না খায়। এ নিয়ে কারও ইগো থাকলে কিন্তু মুশকিল। তাতে কর্মসংস্কৃতি নষ্ট হবে।’’

বিনিয়োগ করুন মানব-সম্পদে

‘‘মানব-জমিন রইল পতিত, আবাদ করলে ফলত সোনা।’’ আহা, কর্পোরেট তরুণের গলাতেও যেন সেই গান। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে নরউড বলেন, ‘‘প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য টাকা খরচে কমতি নেই। বিপণনের কৌশলও খরচ কম যায় না। কিন্তু মানবসম্পদ উন্নয়নের বেলাতেই শুধু অনীহা। এটা কেন। এর ফলে সংস্থার মধ্যে যে বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেটা বোধহয় অনেকেই বুঝতে পারেন না। দরকারে খরচ কমান, কিন্তু খুব প্রয়োজন ছাড়া ছাঁটাইয়ের রাস্তায় না যাওয়াই ভাল। এতে কর্মীরা সংস্থার প্রতি আস্থা হারান।’’

নরউড বলেন, ‘‘কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতেই হবে। টাকা যায় তো যাক। কিন্তু দক্ষ কর্মী তৈরি করতে গেলে প্রশিক্ষণ দিতেই হবে।’’ এপ্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী এবং সিইও-র সংলাপের মধ্যে দিয়ে বক্তৃতায় দাঁড়ি টানলেন নরউড।

বিনিয়োগকারীঃ ট্রেনিং-এর পর কর্মী যদি সংস্থা ছেড়ে দেন, তখন কী হবে?

সিইওঃ প্রশিক্ষণহীন অদক্ষ কর্মীরাই যদি সংস্থায় থেকে যান, তখনই বা কী হবে?