বেরাতে গিয়ে 'বটু' হবেন না Explore লোড করুন
ভীষণ ব্যস্ত! কটা দিন বেরিয়ে আসতে চান। শহর থেকে দূরে কোথাও কোনও জঙ্গল আপনাকে ডাকছে কি? দূরে কোথাও দূরে দূরে ঘুরে আসলেই ভালো হয়। কিন্তু কী দেখবেন সেখানে! সেই প্যাকেজড ট্যুর। সেই হোটেল। গরম জল। ঠাণ্ডা পানীয়। বেরাতে গিয়েও নিজের শর্তে ঘরে বন্দি হয়ে থাকার নাম তো আর বেরানো নয়। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশবার ইচ্ছে থাকে। আঞ্চলিক কিস্যা শোনার রোমাঞ্চকর ইচ্ছে। স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার বাসনা। যথাস্থানে থেকে যায়। চেখেই দেখা হয় না আঞ্চলিক খাবারের জিভে জল আনা রেসিপি। অতৃপ্তি নিয়েই ফিরতে হয়। পকেট ফাঁকা করেও সাদামাঠা শুধু যাওয়াই হয়। লোকে ঠাট্টা করে বলে বোকা ট্যুরিস্ট। অ্যব্রিভিয়েশন করে বটু। কিন্তু এক্সপ্লোর দেখাচ্ছে অন্য একটা অপশন। সাধ মিটতে পারে। আর বটু হওয়া নয়। যদি ডাউনলোড করেন এদের অ্যাপ। তার আগে চলুন আলাপ করি এই অপের সঙ্গে।
মাসখানেক হোল একটা নতুন অ্যাপ্লিকেশন – ‘এক্সপ্লোর’ চালু হয়েছে। আপনার আঙুলের একটা স্পর্শে যা আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে আপনার স্বপ্নের গন্তব্যে। সাথে মাটির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার সুযোগ। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে স্টার্টঅাপ এর আত্মীয়তা অনেকদিনের। আপনার চাহিদা অনুযায়ী থাকা, খাওয়া আর যোগাযোগের ব্যাবস্থা করে দেওয়াই এগুলির কাজ। কিন্তু বিক্রম. পি. কুমারের মতে ‘সব জায়গার হোটেল থেকেই প্রায় কিছু নির্দিষ্ট সুযোগ সুবিধে পাওয়া সম্ভব, কিন্তু এলাকার মানুষের সাথে মিশে গিয়ে, তাদের সাথে থেকে, তাদের জীবনধারার মধ্যে মিশে গিয়ে TLC, Lonely Planet কায়দায় ছুটি কাটানো গেলে জায়গাটা সম্পর্কে আবেগ চারগুণ বেড়ে যায়।’ আর এই ভাবনা থেকেই বিক্রমের এক্সপ্লোর এর সৃষ্টি। এই কাজে বিক্রমের সঙ্গী ক্যালিফোর্নিয়া বাসিন্দা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, রহিত সুরি।
ঘুরে ফিরে ভারতে
পুরো একটা দশক পড়াশুনা এবং চাকরি সুত্রে মার্কিন মুলুকে কাটিয়ে বিক্রমবাবু দেশে ফিরেছেন এ বছর। টেক্সাস ইউনিভার্সিটির প্রাক্তনী। পেশায় সফটঅয়্যার আর্কিটেক্ট। বিক্রম CISCO, MOBILEIRON এর মতো স্টার্টঅ্যাপ এ কাজ করেছেন বহুদিন। কিন্তু তিনি অনুভব করেন যে ভারতে পর্যটন শিল্পের বাজার থাকলেও, তরুণদের এবং বিশেষত মহিলাদের জন্য ঠিকঠাক ব্যাবস্থা না থাকায় শিল্পটা মার খাচ্ছে। আর ঠিক এই কারনেই লাদাখ বা মেদিকেরির মতো সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলো বাদ পরে যাচ্ছে বেরাতে যাওয়ার তালিকা থেকে।
কিন্তু আমরা ক'জন জানি যে এইসব জায়গায় সুন্দর ঘরোয়া পরিবেশে থেকে আঞ্চলিক জীবনযাত্রার স্বাদ নেওয়াটা জাস্টা ফাটাফাটি একটা অভিজ্ঞতা। এই ব্যাপারটাই তাকে উৎসাহিত করেছে এক্সপ্লোর এর মতো একটা অ্যাপলিকেশন তৈরি করতে।
ইওর স্টোরির সাথে কথা বলার সময় তিনি বলছিলেন, মেক মাই ট্রিপ বা স্টেজিলার মতো যে অনলাইন, অ্যাপগুলো এখন রয়েছে তারা সবাই হোটেল বা রিসোর্ট এর মতো জায়গায় থাকার ব্যাবস্থা করে দ্যায়। কিন্তু ঘোরার পুরো মজাটার ব্যাবস্থা করা সম্ভব নয়। অনেকগুলো অপশন এর মধ্যে থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বুকিং করে নিলেই এদের দায়িত্ব শেষ। আপনার আতিথেয়তার বিষয়টা এদের কাজের আওতায় পড়ে না। ঠিক এই জায়গাতেই একটা অন্যরকম স্বাদ বা অভিজ্ঞতা আপনাকে দিতে পারে এই নতুন অ্যাপ্লিকেশন এক্সপ্লোর।
তথ্যসম্পূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন না হয়ে এক্সপ্লোর হয়ে উঠেছে একটা সুবিধাজনক পদ্ধতি। আপনার গন্তব্যের জায়গাটা ঠিক করলেই, সেখানকার বাড়ির মালিকেরা নিজেরাই যোগাযোগ করতে শুরু করবেন আপনার সঙ্গে। আপনার চাহিদা অনুযায়ী ব্যাবস্থা হলেই পুরো বুকিং সম্পূর্ণ হতে লাগে দুঘণ্টারও কম সময়। পাশাপাশি অতিথিদের সুরক্ষা এবং ভালো সার্ভিস দেওয়ার লক্ষে এক্সপ্লোর তৈরি করেছে নিজস্ব রিসার্চ টিম। বিক্রম জানাচ্ছেন যে উবের অথবা জীপ এর মাধ্যমে কাস্টমারের যাতায়াতের ব্যাবস্থা থেকে শুরু করে, তাদের থাকার ব্যাবস্থা, সেখানকার আতিথেয়তা, খাবারের কোয়ালিটি, সর্বোপরি সার্ভিসেস সব ঠিকঠাক পাওয়া যাচ্ছে কিনা সেসবই নিখুঁত ভাবে দ্যাখাশুনা করার জন্য রয়েছেন কমিউনিটি ম্যানেজার। যিনি ফি-সপ্তাহে একবার করে ঘুরে আসেন সব Homestay গুলোতে। এছাড়াও রয়েছে আপনার অভিযোগ বা অন্য কোন তথ্যের জন্য এক্সপ্লোরের নিজস্ব কাস্টমার কেয়ার। অনলাইন চ্যাট এর মাধমেও আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন এই প্রতিনিধিদের কাছে।
ব্যাঙ্গালরের একজন homestay মালিকের কথায় মেক মাই ট্রিপ, গো আই বিব বা বুকিং ডট কম এর মতো ওয়েবসাইট থেকে বেশি সংখ্যায় কাস্টমার পাওয়া গেলেও টাকা পাওয়া নিয়ে একটা কনফিউশন থেকেই যায়। কারণ কে, কখন, কাকে কোথায় টাকা দেবে এই সব নিয়ে কোন চুক্তি থাকেনা ওইসব সংস্থায়। ফলে অনেকসময়ই Homestay মালিকদের টাকা মার যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এক্সপ্লোর এই জায়গাটাতে একটা স্বচ্ছতা আনতে পেরেছে। এখান থেকে বুকিং করলেই কাস্টমারকে বুকিং এর পরেই পুরো টাকা পেমেন্ট করে দিতে হয় আবার তার সাথে সাথে অতিথিদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও খেয়াল রাখে তারা। সবাই যাতে সঠিক সার্ভিস পায় সেই দিকটিতেও নজর থাকে। Homestay মালিক আর কাস্টমার এদের মধ্যে একটা পারস্পরিক স্বচ্ছতার সম্পর্ক তৈরি করেছে এক্সপ্লোর।
এছাড়াও এই প্রতিযোগিতার বাজারে প্রতিদিনই নতুন নতুন ট্রেন্ড তৈরি হচ্ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে ব্যাবসার মডেল। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ। কিন্তু এক্সপ্লোরে আপনার সাধ আর সাধ্যের মধ্যে মিল রেখে তৈরি করা যাবে আপনার নিজের পছন্দসই প্যাকেজ। সস্তায় পুষ্টিকর পরিষেবা পেতে হলে আপনাকে দিতে হবে মোট ভাড়ার ১০ শতাংশ কমিশন হিসাবে। আর এছাড়া Homestay মালিকরা নিজেদের জায়গায় খুব কম খরচে কিছু বিশেষ সার্ভিস পেয়ে যেতে পারেন এক্সপ্লোর এর সৌজন্যে।
ব্যবসার পরিসর ক্রমশই বাড়ছে
এখানে একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। বেশ কয়েকবছর ধরেই ভারতের অর্থনীতির একটা বড় অংশ আসছে ভারতের পর্যটন শিল্প থেকে। ২০১৪ সালে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে চোখে লাগার মতো। এই শিল্প থেকে এসেছে ৭.৬০ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে দেশের মোট জি.ডি.পির অনেকটাই এসেছে এই শিল্প থেকে (প্রায় ৫৫০২.৩ বিলিয়ন)।
Homestay র চাহিদা ক্রমশই বেড়ে চলেছে ভারতবর্ষে। যাত্রা ডট কম এর মতো পুরনো সংস্থার পাশাপাশি অনেক নতুন সংস্থাও নাম লেখাচ্ছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে। Hiliday IQ এর একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে যে এ দেশে প্রায় দুশোরও বেশি জায়গায় দেড় হাজারের বেশি Homestay র ব্যাবস্থা রয়েছে। যার বেশীরভাগই আমাদের অজানা। এক্সপ্লোর এর সদর দফতর ব্যাঙ্গালরেই প্রায় পঁচিশটির মতো Homestay র ব্যাবস্থা রয়েছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে হোক বা শহর থেকে একটু দূরে আপনি পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের ঘর।
সংস্থার কর্ণধার বিক্রম জানাচ্ছেন যে ব্যাঙ্গালরের পর তাদের পরবর্তী টার্গেট হোল গোয়া। বিচ ফেস্টিভ্যালে সানবার্নের আনন্দের তাঁরা ভাগ দিতে চান কাস্টমারকেও। শুধু গোয়াই বলছি কেন! বিক্রমদের এক্সপ্লোর খুব শিগগিরই আসমুদ্র হিমাচল, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারি সব জায়গাতেই পৌঁছে দিতে চায় তাদের এই পরিষেবা।