চাট্যার্ড গৌরীর টেবিলে মুম্বাইবাসীরা চাখেন বিলিতি স্বাদ
মার্কিন খাবারের সংস্কৃতি নিয়ে এসেছে মুম্বইয়ের ‘দ্য টেবিল’। সৌজন্যে গৌরী দেবিদয়াল। একজন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। স্বামী জে ইউসুফ যোগ্য সহযোগিতা করেছেন তাকে।
ঋতুর টাটকা সব্জির প্রিপারেশন খেতে চান? সম্পূর্ণ মার্কিন স্টাইলে? মুম্বইয়ে বসেও মনে হবে আমেরিকার কোনও আবহে খাচ্ছেন? ‘দ্য টেবিল’ রেঁস্তোরার দুনিয়ায় এমনই এক অভিনব সংযোজন। কিন্তু এমন ব্যবসায়িক বুদ্ধি এল কার মাথা থেকে? তাহলে জানিয়ে রাখি তিনি আর কেউ নন, একজন চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। নাম গৌরী দেবিদয়াল। তিনি আবার ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে আইন নিয়েও পাশ করেছেন। নিজের মুখেই জানালেন, জীবনে তিনি কোনও ঝুঁকি নিয়ে কখনও ব্যবসা করতে চাননি, কিন্তু ব্যবসায় নেমেছেন যখন, ঝুঁকি নেওয়ার কাজটা তো করতেই হবে।
২০০৮ থেকেই নতুন একটা রেঁস্তোরা করার পরিকল্পনা করছিলেন গৌরী স্বামী।যদিও প্রধানত আইনি এবং আর্থিক ব্যাপারটাই তখন দেখতেন গৌরী। যদিও যোগ্য সহযোগিতা করেছিলেন তাঁর স্বামী জে ইউসুফ। বরং বলা ভাল, রেঁস্তোরাকে নিজেদের মত করে সাজিয়ে তোলার ব্যাপারে প্রধান উদ্যোগ নিয়েছেন ইউসুফই। একসময় তিনিও ছিলেন স্যানফ্র্যানসিস্কোতে। তারপর ফিরে আসেন মুম্বইয়ে। তারপর দেখা হয় গৌরীর সঙ্গে। দুজনেই চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেন রেঁস্তোরা খোলার ব্যাপারে। ‘দ্য টেবিলের’ ইউনিক কালচার নিয়ে আসার ভাবনাটা পুরোটাই ইউসুফের কৃতিত্ব। আমেরিকায় দীর্ঘদিন থাকার জন্য সেখানকার খাবারের সংস্কৃতি সম্বন্ধে ভালমতো জানেন ইউসুফ। গৌরীও নিজের ব্যবসার যে স্বাধীনতা, তা পুরোপুরি ভাবে উপভোগ করতে চান।
২০১০ সালে দু’জনে বিয়ে করেন। তার মাত্র তিন সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে ‘দ্য টেবিল’। ইউসুফের ছিল ব্যবসায়িক বুদ্ধি, সেই সঙ্গে আত্মবিশ্বাস। নিজের অর্থ তিনি বিনিয়োগ করলেন ব্যবসায়। সেই অর্থকে সঠিক পথে খাটালেন গৌরী। তিনি কখনোই চাননি ‘দ্য টেবিল’ এমন একটা রেঁস্তোরা হোক, যেখানে শুধুমাত্র কোনও অনুষ্ঠানেই লোকে ভিড় করুক, বরং সারা বছর যেন সেখানে ভিড় থাকে। পুরো পরিবার যাতে একসঙ্গে বসে আনন্দ করে খেতে পারে, তার সব ব্যবস্থাই করে ‘দ্য টেবিল’। ‘কমিউনিটি ডাইনিং টেবিল’-এর ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। যাতে কোনও অপরিচিতের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক তৈরি করতে পারে ‘দ্য টেবিল’। এছাড়াও যে কোনও পরিবার নিজেদের মত আলাদা করেও রেঁস্তোরায় সময় কাটাতে পারেন।
দশ বছর আগে আলিবাগে খানিকটা জমি কিনেছিলেন গৌরী। সেখানেই এখন রেঁস্তোরার জন্য নানা সবজি উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সেখান থেকেই মরসুমের টাটকা সবজি আসে রেঁস্তোরার জন্য। পালংশাক, বীট, মূলা, গাজর, মিজুন, টমেটো- আলাদা স্বাদই লেগে থাকে মুখে।
গৌরীর এই ব্যবসার সিদ্ধান্তের ওপর বাড়ির লোকদের খুব একটা ভরসা ছিল না। চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাজ ছেড়ে ব্যবসা চালানো, খুব একটা ভরসা তাঁরা করতে পারছিলেন না গৌরীর ওপর। কিন্তু আজ দু’বছরের মেয়েকে সামলিয়ে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। আজ আর কারও কোনও প্রশ্ন নেই।