মুক্তোর প্রেমে মশগুল Revere এর কর্ণধার পিয়া
মুক্তো মানেই একরকমের স্বপ্নের আভা ঠিকরোনো স্যুররিয়াল বুদ্বুদ। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ঝিনুকের বুক চিরে সামুদ্রিক সফেদ ফেনায় ধোয়া চাঁদের হাসির মতো মুক্তো। বাংলায় মুক্তো হাসির চল আছে। মুক্তো নিয়ে অনেক কাব্য হয়েছে। অনেক প্রেমে পড়াও হয়েছে। রাজরাজড়ার সাতনরি মুক্তোর মালা পেতে অনেক কূট ষড়যন্ত্র অনেক লড়াইয়ের কিস্সাও আছে রূপকথায় ঢাকা ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু মুক্তো নিয়ে পিয়া সিংহের খ্যাপামোর অন্য একটা মাত্রা আছে। সে উদ্যোগী নারী। মুক্তো ভালোবাসেন ছোটো থেকেই। পিয়া বলছেন, মুক্তোর কথা বললেই তাঁর মা ঠাকুমা দিদিমার নস্টালজিয়া উথলে ওঠে।
সাজানো পেতলের ঢাউস গয়নার বাক্স থেকে উঁকি মারা মুক্তোর মালা, নীল সাদা আভায় ম ম করা সেই বাক্স আজও স্বপ্নে হানা দেয়। আর সেই টানই আইনজীবী পিয়াকে মুক্তোর ব্যবসায় টেনে এনেছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি এখন তৈরি করেন মুক্তোমালা। এক একটি ডিজাইন সেখানে রেখে যায় এক এক রকমের ঐতিহ্যের ছোঁয়া। পিয়ার তৈরি ‘রিভিয়ার’-এর গয়না যেন সেই মনের কথাই বলে দিয়ে যায়। অত্যন্ত সাধারণ অথচ আকর্ষণীয় গয়নাগুলি স্বপ্নের রঙ এঁকে যায় । এই স্টাইলই ‘রিভিয়ার’কে করে তুলেছে অনন্য।
দিল্লিতে জন্ম। ছোটবেলা কেটেছে হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, গোয়ায়। অত্যন্ত স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে। লন্ডনেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশুনা শেষ করেন তিনি। ফিরে এসে দিল্লিতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নে মুক্তোর অমলিন আভা হাতছানি দিত। আট বছর নিজের পেশা আর স্বপ্নের সঙ্গে দড়ি টানাটানির খেলাই খেলেছেন পিয়া। ২০১৪ সালে জয়ী হয়েছে তাঁর প্রেম। তৈরি হয়েছে ‘রিভিয়ার’।
ঠিক যেন সাত সাগরের ঝিনুক থেকে সেরা মুক্তো খুঁজে আনার পণ করেছেন পিয়া।তাই ‘রিভিয়ার’-এর জন্য মুক্তো আনতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুক্তোর ফার্মগুলি তন্নতন্ন করে খোঁজেন তিনি। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেরা মুক্তো বাছাই করেন। মুক্তোর গুণমানই তাঁর ইউ এস পি। শুধু তাই নয়, মুক্তো কেনার সময় ক্রেতারাও যাতে সমান লাভবান হন, সেদিকেও নজর রাখেন তিনি। তাঁর সংস্থার মক্তো কিনলে শংসাপত্র দেন। মান নিয়ে কোনও প্ৰশ্ন থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে নিয়ে এলেই সঙ্গে সঙ্গে ফেরতেরও সুবিধা দেন পিয়া।
বলছিলেন, ব্যবসায় নামার পথটা কুসুমাস্তীর্ণ তো ছিলই না। বরং পুরুষশাসিত গয়নার ব্যবসায় তাঁর মত এক মহিলার অনুপ্রবেশ অনেকেই না মেনে নিতে পারায় তাঁর চলার পথে কাঁটাই বিছোনো হয়েছিল। মুক্তোর প্রেম বাঁচাতে আইনজীবীর পেশা কাজে আসে। সমস্যার মোকাবিলা কি ভাবে করা যায়, সে ব্যাপারে অভিজ্ঞতা ছিল পিয়ার। তাই সমস্যাগুলি খুব একটা গুরুতর হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁর কাছে।
আর ছিল ভাষার সমস্যা। ভুগতে হয়েছে। কারণ হিন্দি তিনি ভালো জানেন না। তাই আঞ্চলিক কারিগরদের সঙ্গে কথা বলতে সমস্যাই হয়। তবে এর চটজলদি উপায় বের করার চেষ্টায় রয়েছেন পিয়া। নিজের পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করলেও পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ‘রিভিয়ার’-এর জন্য পুরো সমর্থন আদায় করে নিয়েছেন এই মুক্তোকন্যা।