স্বচ্ছ ভারত মিশনে কলকাতার গ্রিন ‘অ্যাডবিন’
অনুপ্রেরণা প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান। সেখান থেকেই মাথায় আসে আইডিয়াটা। তারপর আর সময় নষ্ট করেন নি জয় পানসারি,অঙ্কিত আগরওয়াল ও সৌরভ মুন্দ্রা। তবে শুধু জঞ্জাল সাফাই নয়, তারসঙ্গে এই তিন যুবক মিলিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞাপনকে। নতুন ভাবনার নাম দিয়েছেন ‘অ্যাডবিন’। আপাতত অ্যাডবিনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াই চালাচ্ছেন তাঁরা।
জঞ্জাল সাফাই এক জিনিস, আর তা সঠিক পাত্রে ফেলার একটা নিয়মানুবর্তিতা বা সামাজিক দায়িত্ববোধ আরেক জিনিস। জয়-অঙ্কিতদের দাবি, শহরে সেই অর্থে ডাস্টবিন নেই। যেখানে আছে সেখানেও তার সঠিক ব্যবহার নেই। মানুষের মধ্যে সেই সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তারা নিজেদের খরচেই শহরের বিভিন্ন কোণায় ডাস্টবিন বসাচ্ছেন। ডাস্টবিনের গায়ে থাকছে বিজ্ঞাপন। ডাস্টবিনের গায়ে বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপনের এই নয়া ধারণার তারা নাম দিয়েছেন ‘অ্যাডবিন’।
কিন্তু একটা ডাস্টবিনের গায়ে বড় বড় কপোর্রেট সংস্থা কেন বিজ্ঞাপন দেবেন? জয়দের মতে, প্রত্যেক কপোর্রেট সংস্থার একটা সামাজিক দায়িত্ববোধ থাকে। যাকে পরিভাষায় বলা হয় ‘কপোর্রেট সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটি’। যা ওই সংস্থার ব্যবসাকেও উৎসাহ যোগায়। তাছাড়া তাদের উদ্যোগ কেন্দ্রের স্বচ্ছ ভারত অভিযানকেও সমর্থন করে। ফলে তাদের এই নয়া উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার পিছনে অনেকগুলি সদর্থক শর্ত কাজ করছে।
ইতিমধ্যেই চিত্র পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের প্রোডাকশন হাউস ফ্যানটমের বিজ্ঞাপন পেয়েছে অ্যাডবিন। বিজ্ঞাপন এসেছে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকেও। তাছাড়া অনেক ওয়েবসাইটও তাদের বসানো ডাস্টবিনের গায়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হল একটি সংস্থা সুন্দর করে ফ্লেক্স, হোর্ডিং বা অন্যত্র বিজ্ঞাপন দিয়েই মানুষের নজর কাড়তে পারেন। সেখানে জঞ্জাল ফেলার ডাস্টবিনের গায়ে কেন তাঁরা বিজ্ঞাপন দেবেন? এরও উত্তর দিয়েছেন অঙ্কিতরা। তাঁদের মতে, ফ্লেক্স বা হোর্ডিং দেখতে গেলে মাথা উঁচু করে দেখতে হয়। ফলে ওভাবে পড়ায় অনেকেই উৎসাহ পান না। কিন্তু অ্যাডবিনে দেওয়া বিজ্ঞাপন আই লেভেলে পড়ে। ফলে সহজেই তা মানুষের চোখে পড়ে। পড়া যায়।
জয়-অঙ্কিতের আবেদন কেউ যদি তাঁর এলাকায় বা আবাসনে অ্যাডবিন বসাতে ইচ্ছুক হন তাহলে তাদের একটা ফোন করলেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে তারা পোঁছে যাবেন সেখানে। বিনামূল্যে বসিয়ে দেবেন অ্যাডবিন। তবে শুধু বসিয়েই তাদের সব দায়িত্ব শেষ এমন কিন্তু নয়। সাত দিন অন্তর অ্যাডবিনের ভিতর ও বাইরের অংশ তারাই সাফ করার ব্যবস্থা করবেন। নজর রাখা হবে জনস্বাস্থ্যের দিকেও। বিনিময়ে একটি পয়সাও খরচ করতে হবে না। শুধু মনে করে অ্যাডবিনটি ব্যবহার করলেই স্থানীয় মানুষের দায়িত্ব শেষ।
জয়দের আক্ষেপ অনেক এলাকায় ডাস্টবিন থাকলেও অধিকাংশ ডাস্টবিনই মানুষ ব্যবহার করেন না। দূর থেকে জঞ্জাল ছুঁড়ে দেন। ডাস্টবিনের আশপাশে জমে জঞ্জালের স্তুপ । সেখানে মাছি ভন ভন করে। এলাকায় দূষণ ছড়ায়।
ইতিমধ্যেই ৩০০টি আবাসনে অ্যাডবিন বসিয়েছেন তাঁরা। অ্যাডবিনগুলিতে জ্বলজ্বল করছে বিজ্ঞাপন। অ্যাডবিনগুলির রক্ষণাবেক্ষণে পাঁচজন সুপারভাইজার নিয়োগ করেছেন জয়-অঙ্কিত।
আগামী দিনে অ্যাডবিন প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে জয়-অঙ্কিতের। যাঁরা ভবিষ্যতে এলাকায় বা আবাসনে অ্যাডবিন ব্যবহার করবেন তাঁদের বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা প্রদানের চিন্তাভাবনা রয়েছে তাঁদের। ‘ওয়াইফাই অন বিন’ নাম দিয়ে দু’ঘণ্টা করে বিনামূল্যে ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এখন উঠে পড়ে লেগেছেন এই দুই যুবক। সঙ্গে রয়েছে আরও একিট পরিকল্পনা। জঞ্জাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের। আপাতত কলকাতা শহরের মধ্যেই তাঁদের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকলেও আগামী দিনে এই প্রকল্প দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে দিতে চান সৌরভ-জয়-অঙ্কিতরা।