Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Bangla

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

বালিকাবধূ থেকে Sugarr&Spice এর কর্ণধার সুপ্রিয়া রায়

বালিকাবধূ থেকে Sugarr&Spice এর কর্ণধার সুপ্রিয়া রায়

Sunday May 08, 2016,

3 min Read

তিনি অহংকারী, ভগবানে বিশ্বাসী, ভাগ্য মানেন, অসম্ভব জেদী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বালিকা বধূ হয়ে এসেছিলেন রক্ষণশীল পরিবারে। ১৪ বছরে মা। তারপরের গল্পটা ছাপিয়ে যেতে পারে যে কোনও সিনেমাকেও। তিনি সুপ্রিয়া রায়। শহরের অন্যতম কনফেকশনারিজ সংস্থা ‘দ্য সুগার অ্যান্ড স্পাইস’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর৷ রাজ পরিবারের বালিকাবধূ থেকে তাঁর সুগার অ্যান্ড স্পাইসের মালকিন হয়ে ওঠার সেই গল্প শোনাব আপনাদের।

image


পুতুলখেলা নয়, পড়ার বইগুলো বড্ড প্রিয় ছিল ছোট্ট সুপ্রিয়ার। ক্লাস নাইনে পড়তেন তখন। স্কুলজীবনকে ছুটি দিয়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে রাজ পরিবারের বউ হয়ে চলে আসতে হয় শ্বশুরবাড়ি৷ ১৪ বছরেই মা। রক্ষণশীল পরিবারের বউ হলেও মনে মনে পুষে রেখেছিলেন নিজে কিছু একটা করার ইচ্ছে। স্বনির্ভর হবেন, উপার্জন করবেন এমন ইচ্ছে সযত্নে বেড়ে উঠছিল মনের কোণে। তাই মা হওয়ার পরও ছেলের দায়িত্ব সামলে বাড়িতেই ফের শুরু পড়াশোনা। শ্বশুরের কড়া হুকুম। বাইরে যাওয়া চলবে না। তাই বাড়িতেই আসতেন মাস্টারমশাই। প্রইভেটে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিলেন। স্কলারশিপ পেলেন। সুপ্রিয়াদেবীর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা নাকি এই স্কলারশিপ পাওয়া। জীবন বইতে শুরু করল অন্য ধারায়। এরপর গ্র্যাজুয়েশন।

‘বিয়ের পরই শ্বশুরমশাই জানিয়ে দেন, বাড়ির বাইরে আমার পা রাখা চলবে না৷ আমি বাড়িতেই থাকতাম৷ যখন অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ফ্লাওয়ার মেকিং-এর ক্লাস করতে যেতাম, তখনও কেউ না কেউ আমার সঙ্গে যেতেন৷ ব্যবসার কথা যখন বাড়িতে প্রথম বললাম তখন শ্বশুরমশাই একটাই কথা বললেন, যা করবে, বাড়িতে থেকে করবে৷ বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না’,পুরনো কথা বলতে গিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে রাজবাড়ির গিন্নির।

ব্যবসায়ী পরিবারে বড় হয়েছেন। অবচেতন মনে সবসময় ভাবতেন বাবা-দাদার মতো ব্যবসায়ী হবেন নিজেও। ৩৬ বয়সে এসে স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে পা রাখলেন। শুরু করলেন নিজের ব্যবসা। প্রথমে একটা কুকারি ক্লাস খোলেন। নিজেই শেখাতেন।‘আমার এখনও মনে পড়ে, আমার কুকারি ক্লাসে আমি কেক তৈরি শিখিয়ে ৭০ টাকা পাই৷ ওটাই ছিল আমার প্রথম উপার্জন’, তৃপ্তির হাসি ষাটোর্ধ্ব সুপ্রিয়ার মুখে।১০ বছর ওই ব্যবসা চালানোর পর একটা ফাস্টফুড আর কেকের দোকান দেন। কুকারি ক্লাসে আইসক্রিমের ক্লাস করিয়ে যে টাকাটা উঠেছিল সেটা দিয়েই দোকান করেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে কনফেকশনারিজের ব্যবসায় চলে আসা। এই ব্যবসায় শুরুর কারণ জানতে চাইলে মজাদার গল্প শোনালেন সুপ্রিয়া।‘আমি কেক খেতে খুব ভালোবাসতাম৷ আমরা আট-ভাই বোন৷ বছরে একবার বাড়ির সবাইকে নিয়ে বাবা ফ্লুরিজে যেতেন৷ সেই দিনটা আমার কাছে দারুণ আনন্দের৷ বাড়িতে বাবা কখনও কেক আনলে, আমি সেই কেক চুরি করে খেতাম, এতো পছন্দের ছিল৷ সেই কারণেই কনফেকশনরিজের বিজনেস করার কথা ভেবেছিলাম’, গড়গড়িয়ে বলে চলেন তিনি।

শ্বশুরমশাই মেজাজি হলেও সুপ্রিয়াদেবী পাশে পেয়েছিলেন স্বামীকে। কুকারি শেখানোর জন্য গ্র্যান্ডের শেফের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন৷ ব্রিটেনের রানির যে হেড কুক তার রেসিপির বই এনে দিয়েছিলেন স্ত্রীকে৷ তবে সুপ্রিয়াদেবী জানতেন, লড়াইটা তাঁর একার। আর সেই কারণেই বোধহয় নব্বইয়ের দশকে যখন কনফেকশনারিজের এতটা রমরমা ছিল না, তখনই এক বুক আত্মবিশ্বাস নিয়ে নেমে পড়েছিলেন এই ব্যবসায়। আর সেইদিন সেই চ্যালে়ঞ্জটা নিয়েছিলেন বলেই নিজের চোখে সেরা তিন ব্যবসায়ীর তৃতীয় হিসেবে নিজেকেই ভাবেন সুপ্রিয়া। বাকি দুজনের মধ্যে প্রথম বাবা অজিত কুমার গঙ্গোপাধ্যায়,তারপর রতন টাটা।

ব্যবসা করতে গিয়ে পরিবারকে চোখের আড়াল হতে দেননি। সমানতালে সামলেছেন দুই দিক। বিশ্বাস করেন ভাগ্যে। ‘যার ভাগ্যে যেটা আছে সেটা হবেই৷ জোর করে কেউ কিছু করতে পারে না৷আমার ভাগ্যে ছিল বলেই আমি আজ এই জায়গায় এসেছি৷ আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি’, বলেন সুপ্রিয়া।

বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকা ছোট্ট মেয়েটার মনে জেদ ছিল, স্বপ্ন ছিল একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবেই৷ সে স্বপ্ন সার্থক হয়েছে৷ শুধু নিজের পায়েই দাঁড়াননি সুপ্রিয়া রায়, প্রায় ২০০ জনের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন৷ সেদিনের ছোট্ট সুপ্রিয়া আজ একজন সফল মহিলা ব্যবসায়ী, যিনি আর পাঁচজন মহিলাকে অনুপ্রাণিত করেন, অনুপ্রেরণা যোগান নবীন উদ্যোক্তাদের৷