ক্যাপসিকাম ফলিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন উত্তরবঙ্গের চাষিরা
বানগড়। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের এই জনপদ ইতিহাসের অনেক আকরের খোঁজ দিয়েছে। সেন, পাল যুগের নানা নিদর্শন উঠে এসেছে বানগড়ের মাটি থেকে। নিজেদের উত্তরণের খোঁজে বানগড় লাগোয়া ফুলবাড়িতেও স্থানীয় কৃষকদের একটা বড় অংশ উঠে পড়ে লেগেছেন। এলাকার ধানি লঙ্কা উত্তরবঙ্গে মসহুর। ঝালও মারাত্মক। খ্যাতি থাকলেও দাম সেভাবে পাচ্ছিলেন না চাষিরা। এসব দেখে গত বছর ধানি লঙ্কা ছেড়ে ক্যাপসিকাম চাষে মন দেন গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ির চাষিরা। কৃষি দফতর ও উদ্যানপালন দফতর থেকে আর্থিক সাহায্য ও প্রশিক্ষণও পান। এখন আর পিছনে ফিরে তাকাতে হচ্ছে না। যাঁরা ঝুঁকি নিয়ে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন তাঁরাই এথন অন্যদের পথ দেখাচ্ছেন। বিদেশি এই লঙ্কা হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে।
দোঁয়াশ মাটিতে উর্বর ফুলবাড়ি সারা বছরই মোটামুটি সবুজে–সবুজ। এই এলাকার প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে লঙ্কা চাষ হয়। দক্ষিণ দিনাজপুরের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা ফুলবাড়ির লঙ্কা নিতে আসেন। লঙ্কা ভাল বিকোলেও দাম নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ ছিল চাষিদের। ধানি লঙ্কা ফলিয়ে অভ্যস্ত ওই এলাকার কয়েকজন চাষি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও এক লঙ্কা অর্থাৎ ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেন। আন্তরিকতা থাকলেও চাষের সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা ছিল উদ্যমীদের। গত বছর এই উৎসাহীদের সঙ্গে কথা বলেন জেলার কৃষি দফতরের কর্মীরা। তারা বুঝতে পারেন আগ্রহ আছে, শুধু ঠিকমতো গাইড দরকার। পাশে পেয়ে যান জেলার উদ্যানপালন দফতরকে। উদ্যানপালন থেকে চারাগাছ দেওয়া হয়। জৈব পদ্ধতিতে চাষের ব্যাপারে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি রাজ্য সরকারের ‘আতমা’ প্রকল্পের আর্থিকভাবে কৃষকদের সাহায্য করা হয়। প্রায় চার হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয় কৃষকদের। এরপর এগিয়ে যাওয়ার পালা।
গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু হয়। ফুলবাড়ি এলাকার প্রায় ২০ বিঘা লঙ্কাজমি নতুন চাষের আওতায় আসে। ফেব্রুয়ারি পড়তেই ফুলবাড়ির হায়দার আলি, সুকুর মহম্মদ, দিলীপ সরকার, প্রহ্লাদ সরকারদের সংশয়ের মেঘ কেটে যায়। তাঁর বুঝে যান বিকল্প চাষে ঝুঁকে ভুল করেননি। এপ্রিল মাস পর্যন্ত ক্যাপসিকাম পাবেন এই চাষিরা। স্থানীয় বাজারে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এই ক্যাপসিকাম। নতুন চাষে সাড়া ফেলে দেওয়া হায়দার আলির বক্তব্য, ‘‘লঙ্কার মতো চাষে একই খরচ, ঝক্কিও কম। দামও পাচ্ছি কয়েকগুণ বেশি।’’
সুকুর মহম্মদও সাফল্যের শরিক। টানা তিন বছর রাজ্য সরকারের কৃষকরত্ন ও জেলা প্রশাসনের তরফে কৃষকসম্মান পাওয়া সুকুর এই ক্যাপসিকাম চাষ করেই অন্যদের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছেন। সুকুরের কথায়, ‘‘আতমা প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যাপসিকাম এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। আমি নিজেই এবার দু’বিঘা জমিতে চাষ করেছি।’’ মাস পাঁচেক সময়ে লঙ্কার মতো খরচ করে বাড়তি ১৮-২০ হাজার টাকা রোজগার করেছেন চাষিরা। বিকল্প চাষ যে এলাকায় ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে তা বোঝা গেল একাধিক চাষির বক্তব্যে। বদলে যাওয়া পরিবেশ দেখে ভরসা পাচ্ছেন গঙ্গারামপুরের সহ কৃষি অধিকর্তা সেফাউর রহমান। এই উদ্যম ধরার জন্য ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘ক্যাপসিকামের চাষ আরও ছড়িয়ে দিতে আগামী বছর বর্ষার পর বায়ো ভিলেজে প্রদর্শনী করা হবে। পাশাপাশি চাষিদের নিয়ে হবে সচেতনতা শিবির। বিপণনের জন্য কিষাণমান্ডির সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার পরিকল্পনা রয়েছে।’’