ঝাপসা দেখছে চশমাগলি, Lenskart-এর বাজার মাত
শ্যামবাজারে সার্কুলার রোড থেকে চটজলদি বিধান সরণিতে যাওয়ার একটা শর্টকাট আছে। এক ফালি সরু গলি, দু-পাশে সার দিয়ে চশমার দোকান। সেই সুবাদেই এই শর্টকাটের নাম চশমা গলি। ভবিষ্যতে গলিটা থাকলেও আদৌ এই মজাদার নামটার অস্বিত্ব থাকবে কি না তা নিয়ে আজ আশঙ্কা হচ্ছে।
ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটির সুবাদে লেন্সকার্ট নামটা আমার জানা। তবে কখনও ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। বন্ধুর থেকে শুনলাম এই অনলাইন চশমার দোকান নাকি প্রথম ফ্রেমটা ফ্রি-তে দিচ্ছে। ব্যাপারটা কাল্টিভেট করতেই আজ ফের লেন্সকার্ট-এ লগ ইন করা। ওয়েবসাইটে যে চমকপ্রদ প্রযুক্তির দেখা পেলাম, সেটাই চশমা গলির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার কারণ।
ওয়েবসাইটের 3D TRY ON অপশনে ক্লিক করতেই আপনার মুখের থ্রি-ডি ছবি উঠে যাবে কম্পিউটারে। সেই ছবির ওপরেই পরখ করে নিতে পারবেন হরেক চশমার ফ্রেম আর সানগ্লাস। ঘরে বসেও যেন দোকানে গিয়ে পছন্দসই ফ্রেম বেছে নেওয়ার স্বাদ। আগামিদিনে এই প্রযুক্তিই আরও উন্নত হবে। তখন আর চশমা কিনতে দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন পরবে কি? তা চশমা ছাড়া চশমা গলি নামটা কেমন যেন বেমানান হবে।
যাই হোক, ভবিষ্যতের কথা বাদ দিয়ে এবার একটু বর্তমানটা দেখে নেওয়া যাক। পরিসংখ্যান বলছে উন্নত দেশগুলোতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন চক্ষু চিকিৎসার সুযোগ পান। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ, যেমন ভারতের ক্ষেত্রে ছবিটা একেবারে উল্টো। এখানে ১০ জনের মধ্যে ৬ জনেরই চোখের সমস্যা থাকলেও তাদের কাছে চক্ষু চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগ নেই। ১২০ কোটি জনসংখ্যার নিরিখে এই অসহায় মানুষের সংখ্যাটা বিশাল। তাই চশমা ব্যবসায়ীদের কাছে ভারত হল মুক্তাঙ্গন।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আইওয়্যার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বৃহত্তম সংস্থাটি - ইতালির Luxottica। রে-ব্যান এই সংস্থারই অধীনে; আর প্রাডা, জর্জিও আরমানি, ডলচে গাব্বানা-র মতো জগদ্বিখ্যাত ব্র্যান্ড ব্র্যান্ডের জন্য আইওয়্যার তৈরি করে লাক্সোটিকাই। বিশ্ব বাজারের ৮০%-ই ইতালীয় সংস্থাটির দখলে। সব মিলিয়ে লাক্সোটিকার আয়ের পরিমাণ ১৭০ কোটি মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১১২০৯ কোটি টাকা। অনলাইন আইওয়্যার ব্যবসায় সব চেয়ে বড় সংস্থা – ওয়ার্বি পার্কার। মোট ব্যবসার পরিমাণ ১২০ কোটি মার্কন ডলার।
ভারতে আইওয়্যার ব্যবসার জন্যা খোলা বাজার পড়ে থাকলেও দেশীয় সংস্থাগুলি এখনও লাক্সোটিকা বা ওয়ার্বি পার্কারের পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। এদেশে অপটিক্যাল পণ্যের অন্যতম বড় বিক্রেতা – জিকেবি অপটিক্যাল্স। সদর দফতর কলকাতার লালবাজারে। সারা দেশে ৬০ টিরও বেশি দোকান রয়েছে সংস্থাটির। এছাড়াও রয়েছে হিমালয় অপটিক্যাল, টাইটান আইপ্লাস-এর মতো সংস্থা। তবে ভারতীয় বাজারের এই মহীরূহদের মাঝেও তরতর করে এগোচ্ছে Lenskart।
ওয়াচকার্ট, ব্যাগ্সকার্ট, জুয়েল্সকার্ট ও লেন্সকার্ট – ২০১০ সালে এই চারটি অনলাইন পোর্টাল চালু করে Valyoo Technologies নামে একটি সংস্থা। অনলাইনে ঘড়ি, গয়না, ব্যাগের ব্যবসা তেমন সাড়া না ফেললেও লেন্সকার্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ৫ বছর পর, আজ অনলাইনের বাইরে বেরিয়েও চুটিয়ে ব্যবসা করছে লেন্সকার্ট। সারা দেশে ৬৬টি শহরে ইতিমধ্যে তারা ১০০টি দোকান খুলে ফেলেছে। ওয়াচকার্ট, ব্যাগ্সকার্ট, জুয়েল্সকার্ট বন্ধ করে লেন্সকার্টের অগ্রগতিতেই মন দিয়েছে Valyoo Technologies।
লেন্সকার্টের দেখানো পথেই অনলাইন ব্যবসায় নেমেছে Glassic, Gorgeye। লেন্সকার্টের মতো গ্লাসিকও অনলাইনেই পরখ করে চশমা বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়। সংস্থার অন্যতম মালিক কৈলাশ নিচানির দাবি, তাদের বিক্রি করা কোনও পণ্যই আজ অবধি ফেরত আসেনি। মাত্র ৩২ ধরণের ফ্রেম নিয়ে ব্যবসা শুরু করা গর্জআই-এর অনলাইন সম্ভারেও এখন ১০০টির বেশি ডিজাইন। বছর শেষ হওযার আগে তাদের সেল্স টার্গেট – মাসে প্রায় ১০০০ বরাত নিয়ে ১০ লাখ টাকার বিক্রিবাটা। চশমা ব্যবসায় একাধিক অনলাইন পোর্টালের আগমনই বলে দিচ্ছে, অনলাইনে আইওয়্যার কেনার প্রবণতা বাড়ছে। তাই জিকেবি বা হিমালয়-এর মতো সংস্থাও অনলাইনে তাদের অনলাইন সম্ভার নিয়ে তৈরি।
বিগত কয়েক বছরে অনলাইনে বই কেনার হিড়িক কলেজ স্ট্রিটের বই পাড়াকে প্রতিযোগিতায় ফেলে দিয়েছে। অনলাইনে চশমার বিক্রিবাটা এখনও অনলাইন বুক শপিংয়ের উচ্চতায় পৌঁছতে এখনও দেরি আছে। তবে কে বলতে পারে, ই-কমার্সের রমরমা আগামী দিনে লালবাজার বা চশমা গলির দোকানগুলোর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলবে না!