স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা রাখেন রানাঘাটের লড়াকু নীলিমা
স্বপ্ন দেখতে সাহসের দরকার। স্বপ্ন দেখার সাহস দেখাতে পেরেছিলেন বলেই রাণাঘাটের নীলিমা সেন আজ বাংলার বহু মহিলার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করার পরই নেশাটা মাথায় চেপে বসে। তবে, নিজে কিছু করবেন এই ভাবনাই ছিল। ঠিক করে ফেলেন তৈরি করবেন নিজের বুটিক। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। দুহাজার সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করেন নীলিমা দেবী।
পোশাক, মূলত শাড়ির উপর এমব্রয়ডারির কাজ। চাইলে তিনি কেবল নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, নিজের কাজকে ছড়িয়ে দিতে পারলে আখেরে সমাজের লাভ। তাই ২০০৪ সালে খুলে ফেলেন নিজের স্কুল। ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেন। সে সময়ই নিজের ব্যবসা বড় করার কথাও ভাবেন। কিন্তু কোথা থেকে আসবে পুঁজি সেটাই তখন ছিল সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথা।
সে সময় ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হন নীলিমা। ব্যঙ্ক লোনের চেষ্টা করা যে কী হ্যাপা। হাড়ে হাড়ে সেটা টের পেয়েছিলেন। সামান্য টাকা লোন পাওয়ার আশায় বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু দমে যাননি। লোন পাওয়ার পর নিজের কাজের পরিধি আরও বাড়াতে থাকেন। নিজেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন। তবে জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ২০০৯ সাল। ব্যাঙ্ক থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকা লোন পান। শুরু করেন নিজের কারখানা। সেখানে শুরু করেন কম্পিউটারাইজড এমব্রয়ডারির কাজ। নিজের উদ্যোগেই মেশিন আনিয়ে নেন বিদেশ থেকে। এরপর অবশ্য আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একদিকে নিজের স্কুলে প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন, অন্যদিকে নিজের কারখানায় উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে চলতে থাকে ব্যবসা। বর্তমানে নীলিমার সঙ্গে তাঁর কারখানায় কাজ করছেন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কুড়ি জন। পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে তিনশোরও বেশি মানুষের। তাঁর তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী আজ পাড়ি জমাচ্ছে কানাডা, দুবাইতে।
ভবিষ্যত পরিকল্পণার কথা নিজেই জানালেন। ব্যাঙ্ক থেকে যে লোন নিয়েছেন তা পরিশোধ হওয়ার মুখে। সেটাও যে কম বড় কৃতিত্বের নয়। চলতি লোন শোধ হলে ফের একটি কারখানা তৈরির পরিকল্পণা করছেন। নতুন পরিকল্পণার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি। সব ঠিক ঠাক চললে ২০১৮ সালের মধ্যেই তার দ্বিতীয় কারখানাটি তৈরি হয়ে যাবে। এই রাজ্যে ও দেশে তাঁর মত বহু মহিলাই তাঁর মত স্ব-নির্ভর হতে চান। নতুন কিছু করতে চান। নতুনভাবে ভাবতে চান। মাত্র পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ তারই পরিমান প্রায় ষাট লক্ষ টাকা।
কিন্তু নীলিমা জানেন, "to sit in the sty of contentment meaning death" তাই তৃপ্ত নন থেমে থাকতে চান না নীলিমা। এগিয়ে যেতে চান আর অন্যান্য মহিলাদেরও বলেন "চরৈবেতি"।