মুহুর্তে যে কোনও ব্যক্তির সম্বন্ধে জানাচ্ছে ‘গেটস্ট্রাইক’
মোবাইলেই দেখা যাবে কারও ইমেলের যাবতীয় যোগাযোগ। ইমেলে থাকা ব্যক্তিদের সম্বন্ধে সোস্যাল সাইটগুলিতে ছড়িয়ে থাকা যাবতীয় তথ্যও ফুটে উঠবে মোবাইলের পর্দায়। যাঁদের প্রতি মুহুর্তে ইমেলের দরকার পড়ে। যোগাযোগগুলির তালিকা দ্রুত দরকার পড়ে ,তাঁদের মুশকিল আসানের একটাই ঠিকানা গেটস্ট্রাইক। আদপে একটি অ্যাপ হল গেটস্ট্রাইক। যার জন্মই হয়েছিল প্রয়োজনের নিরিখে। কারণ অহরহ ইমেল ব্যবহার করতে গিয়ে রাস্তায় ঘাটে যাঁরা তাঁদের যোগাযোগগুলির সম্বন্ধে কিছুটা জোনে নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন তাঁদেরই একজন ছিলেন ঐশ্বর্য জৈন।
হ্যাকারআর্থ সংস্থায় ঐশ্বর্যের কাজ ছিল সেলস, মার্কেটিং ও অপারেশন দেখা। কর্মসূত্রে তাঁকে সারাদিন ইমেলে চোখ রাখতে হত। মেল করতে হত। সারক্ষণ ইমেল ঘাঁটতে গিয়ে তাঁর মনে হয় মোবাইলে একটা অ্যাপ হিসাবে মেলের যাবতীয় যোগাযোগ দ্রুত দেখার সুবিধা থাকাটা জরুরি। কারণ মোবাইলে মেল করার সুযোগটা থাকলেও, যাঁদের সঙ্গে মেলের মাধ্যমে তিনি কাজ করছেন, তাঁদের সম্বন্ধে জানার কোনও উপায় থাকছে না। এই ভাবনাই তাঁকে ভাবার খোরাক দেয়।
ঐশ্বর্য মোবাইল অ্যাপ ও ক্রোম এক্সটেনশন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে। ঐশ্বর্য লক্ষ করে একজনের সম্বন্ধে প্রাথমিক কিছু খোঁজখবর নিতে গেলেও মোবাইলে একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করতে হচ্ছে। যা কোনও ব্যবহারকারীই পছন্দ করবেন না। এটা তাঁকে এবং তাঁর সহযোগী বন্ধু অক্ষয়কে ভাবতে বাধ্য করল।
ইমেলে যুক্ত কারও সম্বন্ধে প্রাথমিক তথ্য যোগাড় করতে একটা অ্যাপের যে দ্রুত দরকার তা তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলেও সেটা রাতারাতি বানিয়ে ফেলা সম্ভব ছিল না। ঐশ্বর্য জানাল এই অ্যাপকে পূর্ণ রূপ দিতে তাঁর এবং অক্ষয়ের এক বছরেরও বেশি সময় লাগে। এ সময়ে বারবার তাঁদের ব্যর্থ হতে হয়েছে। কিন্তু একটা জিদ তাদের ফের লড়াইয়ের প্রেরণা যুগিয়েছে। এভাবেই একদিন সাফল্য আসে। কিন্তু ঠিক কীভাবে কাজ করে গেটস্ট্রাইক? একজন যখনই জি-মেল অ্যাপ খুলবেন এবং ইমেল পড়তে শুরু করবেন, তখনই গেটস্ট্রাইক সেই ব্যক্তির যাবতীয় সামাজিক তথ্য মেলের ব্যাকএন্ড থেকে খুঁজে নেবে। আর দ্রুত তা মোবাইলের পর্দায় ফুটিয়ে তুলবে।
সেকেণ্ডের মধ্যে একজন সম্বন্ধে প্রাপ্তিসাধ্য তথ্য ফেসবুক,টুইটার,গুগুল, অ্যাঞ্জেললিস্টের মত বিভিন্ন সোস্যাল সাইট থেকে খুঁজে দেয় গেটস্ট্রাইক। তবে গেটস্ট্রাইককে দ্রুত সাজিয়ে তোলায় আরও একজনের অবদান মেনে নিয়েছে ঐশ্বর্য। অক্ষয়ের কলেজের বন্ধু অমরবীর তাদের এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার পর গেটস্ট্রাইকের সেজে ওঠার গতি অনকটাই বেড়ে গিয়েছিল। অক্ষয় দেখছিল প্রযুক্তিগত দিকটা। ব্যাকএন্ডের নির্মাণ, স্কেলিং, ডাটা সবই অক্ষয়ের হাত ধরে সেজে উঠছিল। কম্পিউটার গেমস তৈরির স্টুডিওতে আগে কাজ করত অমরবীর। সে অ্যান্ড্রয়েডের দিকটার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। বেঙ্গালুরুর এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার মিলন গেটস্ট্রাইকের জন্য মার্কেটিং সামলানোর দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিল। যোগাযোগ রাখছিল সোস্যাল মিডিয়া ও এনজিওগুলির সঙ্গে।
জুন ২০১৫ থেকে প্রতি ১৫ দিনে গেটস্ট্রাইক লাফিয়ে লাফিয়ে উন্নতি করছে। খতিয়ান বলছে প্রতি সাত দিনে এই অ্যাপ ১৭ শতাংশ করে উন্নত হচ্ছে। আপাতত বিনামূল্যেই ডাউনলোড করে এই অ্যাপ ব্যাবহার করা যাচ্ছে। আগামী দিনে আরও উন্নত সুবিধা আনার কাজ চালাচ্ছে টিম গেটস্ট্রাইক। সামনের দিনে মোবাইল অ্যাপ ও ডেক্সটপের মধ্যে দুরত্ব কমানোর লক্ষে একমনে কাজ করে চলেছে ঐশ্বর্য, অক্ষয়রা। আগামী বছরের গোড়ার দিকে একটি আইওএস অ্যাপও চালু করতে চলেছে টিম গেটস্ট্রাইক।