শারীরিকভাবে অক্ষমদের সাহায্যার্থে হরপ্রীতের ‘ওয়েবঅ্যাসিস্ট’
ছাত্রাবস্থা থেকেই ব্যবসা শুরু। পড়াশোনা চলাকালীনই ‘ওয়েবঅ্যাসিস্ট’ (web@assist) নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেন তিনি। শারীরিকভাবে অক্ষমদের কাছে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্ভাবনী ভাবনার হাত ধরে ছাত্রাবস্থাতেই ন্যাসকম তাঁকে সোস্যাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড দেয়। এত কম বয়সে এই বিরল পুরষ্কার তার ছাত্রাবস্থার উত্থান কাহিনিকে কার্যত একটা উপাখ্যানের চেহারা দেয়।
হরপ্রীতের মতে, এই পুরষ্কার ভারতের শিল্পক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া থেকে শুরু করে একজন সফল উদ্যোগপতি হয়ে ওঠার দরজা খুলে দিয়েছিল তাঁর সামনে। এই পুরষ্কার শুধু তাঁর নয়, তাঁর তৈরি পুরো টিমটারও মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল। উৎসাহ যুগিয়েছিল লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার। হরপ্রীতের দাবি, কম বয়সেই এত বড় সম্মান বাণিজ্য জগতের প্রবেশদ্বারটা সহজেই খুলে দিয়েছিল। ফলে টিমটা তাদের টুকিটাকি কাজেও মনঃসংযোগ করতে উৎসাহ পায়।
ক্লাউড বেসড অ্যাসিসটিভ টেকনোলজি। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েই শারীরিক দিক থেকে অক্ষম মানুষজনের কাছে ইন্টারনেটের সুবিধা পোঁছে দিচ্ছে ওয়েবঅ্যাসিস্ট। যাতে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত বা অসুস্থতার কারণে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিকমত নাড়াতে ব্যর্থ মানুষজনও এই সুবিধা ভোগ করতে পারেন সেদিকেও নজর দিয়েছেন হরপ্রীত। ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন বুঝে ওয়েবঅ্যাসিস্টে পরিবর্তন করেছেন তিনি। সেটিং পর্যন্ত স্বংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত করার সুবিধা দিচ্ছে তাঁর এই ওয়েবসাইট। তাঁর দাবি, বারবার প্রয়োজনের নিরিখে নিজেদের পাল্টানো এবং সাইটির উন্নতিসাধন নিয়ে নিরন্তর চর্চা তাদের বাড়তে থাকা চাহিদা ও দ্রুত বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় সাহায্য করেছে।
২০১১ সালে জন্ম নেয় ওয়েবঅ্যাসিস্ট। তখন হরপ্রীত ছাত্র। কিন্তু শুরু থেকেই একটি সফল ওয়েবসাইট হিসাবে দ্রুত চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জাল বুনেছে ওয়েবঅ্যাসিস্ট। সমস্যা সমাধানে নিজেদের মধ্যে বারবার বসেছেন ওয়েবঅ্যাসিস্টের সদস্যরা। কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে সমাধানসূত্র। আর এভাবেই বাধা অতিক্রম করে প্রয়োজনের নিরিখে নিজেদের বদলের ধারা অব্যাহত রেখেছে তারা। এখন তারা চেষ্টা চালাচ্ছে মোবাইলে তাদের ওয়েব ব্যবহারের সুবিধা শারীরিক দিক থেকে অক্ষমদের কাছে পৌঁছে দিতে।
ওয়েবঅ্যাসিস্ট যখন তৈরি হয় তখন হরপ্রীত ছাত্র। তখন থেকেই সমস্যা সমাধান করে তার ওয়েবসাইটটিকে ছড়িয়ে দেওয়ার নিরন্তর চেষ্ঠা চালিয়ে গেছেন তিনি। পড়াশোনার সময় বাদ দিয়ে পড়ে থেকেছেন স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে। নিজে হাতে একটা টিম তৈরি করেছেন। নিজের লক্ষ্য নিজেই স্থির করেছেন। সেখানে পৌঁছলে ফের নতুন লক্ষ্য স্থির করেছেন। অন্যদিকে তাঁর তৈরি টিম প্রতিদিন শারীরিক দিক থেকে অক্ষম মানুষজনের সঙ্গে দেখা করে চলেছে। তাঁদের প্রয়োজন বোঝার চেষ্টা করছে। পরদিন তা নিয়ে আলোচনায় বসছে। আর এ কাজে সকলের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই বলে দাবি করেন হরপ্রীত। হরপ্রীতের মতে, ছাত্র হওয়ায় তাঁর মধ্যে নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদের অভাব ছিল না। প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবনা ভাবা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছিল। এমনকি তাঁর ওয়েবঅ্যাসিস্ট থেকে দূরে থাকার সময়ও তার মাথায় সারাক্ষণ ওয়েবঅ্যাসিস্টই ঘুরপাক খেত। এক জিনিস নিয়ে পড়ে থাকতে থাকতে অনেক ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু ওয়েবঅ্যাসিস্টের প্রতি গভীর আসক্তি তাঁর মধ্যে এসব মানসিক সমস্যা তৈরি হওয়ার সুযোগ দেয়নি বলে জানালেন হরপ্রীত।
ছাত্র মানেই সে সদ্য শেখা কোনও শিক্ষাকে সমস্যা সমাধানে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। যা অনেক সময় সমস্যা সমাধানে প্রতিভার সাক্ষর রেখে যায়। এটাই ঘটেছিল তাঁর ক্ষেত্রে বেল জানিয়েছেন হরপ্রীত। ছাত্রাবস্থা থেকেই ব্যবসায় নামার সুবিধা হল সেসময়ে কিছু করে দেখানোর একটা অদম্য ইচ্ছা যেমন কাজ করে, তেমনই বাণিজ্য জগতে অল্প বয়সেই কাজ শুরুর সুযোগ পাওয়া যায়। যা সকলকে দ্রুত বাইণজ্য জগতে টিকে থাকার কৌশল শেখায় বলে জানালেন ওয়েবঅ্যাসিস্টের জন্মদাতা।
টিমের সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করা আর ব্যবসাকে সফল করতে একশো শতাংশ প্রয়াস তাঁকে দ্রুত একজন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী করে তোলে বলে জানান হরপ্রীত। এখনও প্রতিদিন এই ওয়েবকে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তায় বিভোর থাকেন তিনি। এজন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাও করেন। কাজের প্রতি একটা প্রবল আকর্ষণ তাঁর কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। ন্যাসকমের পুরষ্কার বিজয়ী হরপ্রীতের এখন একটাই স্বপ্ন, শারীরিকভাবে অক্ষমদের জন্য সস্তায় যেকোনও জায়গা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করার পথ খুলে দেওয়া।