জীবন সবচেয়ে বড় শিক্ষক। বেত হাতে নেওয়া কোনও মাষ্টারমশাইও কঠিন বাস্তব আর বিনিদ্র রাতের মতন করে শিক্ষা দিতে পারেন না। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই ব্যক্তিনির্ভর বিষয়, যে কে কীভাবে জীবন থেকে শিক্ষা নেবেন। চলুন আজ আপনাদের এমন কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই যাঁরা জীবন থেকেই শিখেছেন কিভাবে ৯টা-৫টার অত্যাচারী চাকরির হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে, বাড়িতে বসেই মাসে হাজার হাজার ডলার রোজগার করা যায়। এঁদের মধ্যে অনেকেই যেটিকে নিছক নেশার মতো করতেন, আজ তা ফুলেফেঁপে রীতিমত ব্যবসার আকার নিয়েছে। সেইসব স্বশিক্ষিত, টপ ব্লগাররাই আপনার ব্যাঙ্কে মা লক্ষ্মীর পাকাপাকি বসতির হদিশ দিচ্ছেন।
অমিত আগরওয়াল
টেক ব্লগারদের তালিকা যাঁর নাম ছাড়া অসম্পূর্ণ তিনি আগ্রার অমিত আগরওয়াল। ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করেন ঊনচল্লিশ বছর বয়স্ক এই ব্লগার। পেশাদার টেক ব্লগিংকে ভারতে নিয়ে এসেছেন অমিত। তিনি IIT Roorkee থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক। আগ্রায় নিজের শহরে ফিরে যাওয়ার আগে অমিত কিছু বছর হায়দরাবাদে কাজ করেছেন। YourStory কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অমিত জানিয়েছেন যে, আগ্রা ফিরে যাওয়ার পর freelancer হিসেবে কাজ করা ছাড়া তাঁর কোনও উপায় ছিল না। ২০০৪ সালের বাজারে social media এবং অন্যান্য online networking/social tools ছাড়া ব্লগিং করা ছিল বেশ কঠিন এবং আলাদা রকমের অভিজ্ঞতা। অমিত তাঁর ব্লগিং এ বেশিরভাগই টেকনোলজি রিলেটেড গাইডলাইন দেন। উৎপাদনশীলতা কিভাবে বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে বেশকিছু ওয়েব অ্যাপও বানিয়েছেন। বছরে কয়েক কোটি টাকা রোজগার করেন এই ব্লগার। তিনি সেইসকল প্রোডাক্ট বানান যেগুলি freemium model (link) কে ফলো করে। Contextual advertising (blog + youtube) এর মারফতও অর্থ রোজগার করেন অমিত। Google এর প্রথম পাতায় টিকে থাকাটা তাঁর কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্থ রোজগার search traffic এর সঙ্গে সমানুপাতিক। উপার্জনের পথে আরেক বাধা হল adblocker। অমিত এখন ইন-হাউজ কনটেন্ট adblock user দের কাছে প্রমোট করেন। ব্লগিং করে টাকা রোজগার করতে চান যাঁরা তাঁদের প্রতি অমিতের উপদেশ হল user-এর অভিজ্ঞতাকে মূল্য দিন। অতিরিক্ত অ্যাড দিয়ে ওয়েবসাইটের সেই অভিজ্ঞতার ক্ষতি হতে দেবেন না। অমিতের ব্লগিং কেরিয়ারের সবচেয়ে অভূতপূর্ব এক ঘটনার কথা তিনি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। সাইড প্রজেক্ট হিসেবে তিনি TallTweets লেখেন। অমিতাভ বচ্চন টুইট করেছেন যে তিনি ওই অ্যাপ ব্যবহার করেন। Labnol.org এর মালিক অমিতের খুশির আর অন্ত নেই।
হর্ষ আগরওয়াল
এরপরের গল্পটি ঊনত্রিশ বছরের তরুণ হর্ষ আগরওয়ালের যে ShoutMeLoud.com এর ব্লগার। তাঁর ব্লগিং এর নেশা পেশায় পরিণত হয়ে আজ তিনি লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন। গুরগাঁওতে একটি কল সেন্টারে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন হর্ষ। যখন ওঁর ব্লগিং চরমে ওঠে তিনি বন্ধুর ক্রেডিট কার্ড ধার করে একজন হোস্ট রাখেন আর একটি জায়গা কেনেন। এভাবেই ShoutMeLoud অনলাইন হয়। হর্ষ দেশে থাকলে নয়া দিল্লিতে কাজ করেন। তবে ঘুরে ঘুরে কাজ করতেই ভালোবাসেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ShoutMeLoud এর হিন্দিটা সামলান। বালি, সিঙ্গাপুর আর থাইল্যান্ডেও বিভিন্ন সময় থাকেন ওঁরা। ২০০৮ সালের আগষ্ট সেপ্টেম্বর নাগাদ BlogSpot ব্লগ দিয়ে কাজ শুরে করেন হর্ষ। ২০০৮-এর ১লা ডিসেম্বর তিনি WordPress প্ল্যাটফর্মে সরে গিয়ে ShoutMeLoud.com চালু করেন। Shouter দের কমিউনিটি আর ব্লগিং এর স্বচ্ছতাই এই সাইটের ইউএসপি। হর্ষের গতমাসের রোজগার ছিল ৩২,০০০ ডলার। ওঁদের প্ল্যাটফর্মে eBooks, WordPress Plugins এসব বিক্রি হয়। ShoutUniversity নামক একটি মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম আছে ওঁদের। রোজগারের অন্যান্য রাস্তাগুলোর মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অন্যতম। গত তিনবছর ধরে nativeads.com এর মতো অ্যাডভাটাইজাররা ওঁদের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। প্রোডাক্টের রিভিউ আর নেটিভ অ্যাডভাটাইজিংও রেভিনিউ জোগাড়ের বড় দিক। একটা বড় অঙ্কের টাকা ব্লগের অখন্ডতার কথা মাথায় রেখে ছেড়ে রাখতে হয়। ব্যবসার আঙ্গিকে বিচার করলে বিষয়টি বড় ক্ষতি আর চ্যালেঞ্জেও বটে। হর্ষ যে টিপসটি দিলেন তা হল, ব্যবসা বাড়াতে চাইলে বড় করে ভাবুন। আপনার অ্যাটিটিউড হল সেই জিনিষ যা স্থির করে দেবে আপনি কত বড় হবেন। সারা জীবন ধরে শিখুন আর কখনও এক জায়গায় থমকে থাকবেন না। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির যুগে পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বারা প্রতিদিন আপনার ব্লগে নিত্যনতুন বিষয়ের সংযোজন ঘটান। কনটেন্টের পাশাপাশি কমিউনিটি গঠনেও নজর দিন। এমন এক নিশ ক্লাস হয়ে উঠুন যার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ব্লগিং কেরিয়ারে আপনার সাফল্যের সংজ্ঞা নির্ভর করছে আপনি কিভাবে বিফলতাগুলো সামলাচ্ছেন তার উপর। হর্ষের ব্লগিং কেরিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল Sharada University-র আন্ডারে তাঁর নিজের কলেজ থেকে ShoutMeLoud-এর জন্য ‘Entrepreneur of the Year’ অ্যাওয়ার্ড পাওয়া। তিনি সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন এবং শিক্ষাজীবনে কলেজ থেকে কোনও অ্যাওয়ার্ড পাননি। তিনি আনন্দে কেঁদে ফেলেন। বলেছিলেন, কে কিভাবে বাঁচবেন সেটা স্থির করে দেওয়া ঠিক নয়। নিজের মতন করে আবিষ্কার করতে পারা জীবন খুব সুন্দর।
চোখ রাখুন ইওরস্টোরি বাংলার পাতায়। আমরা এরকম আরও হাফ ডজন ব্লগারের হদিশ দেব যাঁরা আজ নিজেরাই নিজেদের বস, চরম সাকসেসফুল। বাড়ি-গাড়ি-ফরেনট্রিপ নিয়ে লাইফ সেট করে ফেলেছেন।