ভারতীয় বাজারে ‘গেমিং বিপ্লব’ ঘটিয়েছে সৌরভ গরওয়ালের ‘তিন পাত্তি’

ভারতীয় বাজারে ‘গেমিং বিপ্লব’ ঘটিয়েছে সৌরভ গরওয়ালের ‘তিন পাত্তি’

Monday December 21, 2015,

3 min Read

কম্পিউটার, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার নিয়ে আগ্রহ ছিল বরাবরই, কিন্তু তা যে একদিন তাঁকে মোবাইল গেমিং অ্যাপ-এর মুকুটহীন রাজা করে তুলবে স্বপ্নেও ভাবেননি সৌরভ আগরওয়াল। অথচ শুরুটা কিন্তু হয়েছিল একেবারে গতে ধরা জীবন দিয়েই।

সৌরভের পরিবারে সকলেই উচ্চশিক্ষিত। তাঁর বাবা ১৯৬৯ সালে আমেরিকা থেকে ইলেকট্রনিক্সে স্নাতকোত্তর। ঠাকুরদা পিএইচডি এবং দিল্লির রামজস কলেজের অধ্যাপক। সৌরভের মা এমবিএ।

তাই পারিবারিক ঐতিহ্যের বাইরে বেরিয়ে কিছু করা সম্ভব ছিল না সৌরভেরও। পড়াশোনা শেষে স্ট্যানফোর্ডের একটি নেটওয়ার্কিং সংস্থায় চাকরি করতে লাগলেন।

পেশাজীবনের প্রথম বছরের ঘটনা।পাম অপারেটিং সিস্টেমের একটি স্মার্টফোন হাতে পেয়ে সৌরভ দেখলেন অপারেটিং সিস্টেমে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। অনেকটা কৌতুহলের বশেই সমস্যা মেটাতে বিকল্পের সন্ধান শুরু করলেন। একটি বিকল্প সেইসময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তাতে কিছু টাকাও হাতে এসেছিল। এরপরই এধরনের আরও “ হ্যাকস ” তৈরির কাজ শুরু করে দিলেন সৌরভ। ধীরে ধীরে আস্ত একটা প্রোডাক্টই তৈরি করে ফেললেন। তাঁর হাত ধরেই বাজারে এল বিবি, আওল, ইয়াহু মেসেঞ্জার-এর মতো ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং পরিষেবা। তাও আবার একটি মাত্র অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে। প্রথমে পাম অপারেটিং সিস্টেমে পাওয়া গেলেও পরে সিমবায়ানেও মিলল এই পরিষেবা। এভাবেই সুট-ব্যুট পরা চাকুরিজীবীর বদলে আদ্যন্ত ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন সৌরভ।

কেটে গেছে ১৩ বছর। বর্তমানে ভারতীয় গেমিং অ্যাপের বাজারে পয়লা নম্বরে সৌরভ আগরওয়াল। ২০০৬ সালে নয়ডায় তাঁর সংস্থা অকট্রোর গোড়াপত্তন হয়। তাঁর সংস্থার দুটি গেমিং অ্যাপ তিন পাত্তি আর রামি গুগল প্লেস্টোরের প্রথম পাঁচটি জনপ্রিয় গেমিং অ্যাপের অন্যতম। গত বছর অকট্রো ১৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে সিকুইয়া ক্যাপিটাল থেকে।


image


অকট্রো‍ -র জন্ম

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কখনও তিন পাত্তি খেলেছেন ? তাহলে আপনি সেই এক কোটি ভারতীয়ের একজন যাঁরা এই গেম ডাউনলোড করেছেন। সৌরভ জানালেন, ভারতীয় গেমিং অ্যাপের মধ্যে তিন পাত্তি-ই এমন একটি গেম যা জনপ্রিয়তার এই বিপুল অঙ্ক ছুঁয়েছে। নয় বছর আগে একেবারে নিজের উদ্যোগে অকট্রো-র জন্ম দিয়েছিলেন সৌরভ। প্রথম ছয় বছর অকট্রো ভিওআইপি অর্থাৎ ভয়েস ওভার আইপি নিয়ে কাজ করত। উইন্ডোজ ফোন, সিমবায়ান প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মের জন্যই প্রোডাক্ট তৈরি করেছে তারা। কিন্তু তেমন সাফল্য মিলছিল না।

“আমরা এমন একটি ক্ষেত্রে কাজ করছিলাম যেখানে ব্যবসায় নেমে প্রথমেই প্রচুর উপার্জন করা সম্ভব ছিল না। সে কারণে আমরা গেমিং অ্যাপ-এর দিকে ঝুঁকি, জানালেন সৌরভ।”

গত ছয় বছরের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে এই নতুন ভেনচারে ঝাঁপালেন সৌরভ। মূল লক্ষ্য ছিল মাল্টিপ্লেয়ার গেম তৈরি করা।

অকট্রো-র সাফল্যের রহস্য

কোনওদিনই মোবাইল গেমার ছিলেন না সৌরভ। তাই একজন নন-গেমারের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখেছিলেন গেমিং অ্যাপকে। ঠিক করলেন একেবারে সহজ সরল রাখবেন খেলার নিয়মাবলি। তিন পাত্তির প্রথম পর্বটিতে তাই ছিল শুধু ‘ প্লে নাও ’ বাটন। কারণ সৌরভ বুঝেছিলেন গেমিং-এ ভারতীয়রা ফ্রেশার। তাই এক বছরের শিশুকে পাঁচ বছরের শিশুর উপযোগী খেলনা দিলে সমস্যা হবেই। সে কারণেই তিন পাত্তি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল বলে মনে করেন তিনি। ফলও মিলেছিল হাতেনাতে। ২০১৪ সাল জুড়েই সংস্থার গ্রাফ ছিল উর্ধমুখী।

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় অকট্রো তিন পাত্তি-তে ক্রিকেট বেটিংয়ের ফিচার্স যুক্ত করেছিল। কারণ সৌরভ জানেন, ভারতীয়েরা ক্রিকেটের পোকা। তাই ২২ গজের ফ্লেভার যোগ করলে তিন পাত্তি‍-র জনপ্রিয়তাও বাড়বে। হলও তাই। একটি গেমেই ৭ লক্ষ বেটিং হয়েছিল। টাকার অঙ্কে যা ছিল ১০ হাজার কোটি। কাল্পনিক হলেও সংখ্যাটা নেহাত ফেলনা নয়।

গেমিংয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ৫০ জনের শক্তিশালী টিম রয়েছে অকট্রো-র। গেমিং ডিজাইন আর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে দিনরাত গবেষণা চালাচ্ছে তারা।

৬ বছর ধরে একটু একটু করে অকট্রো-কে দাঁড় করিয়েছেন সৌরভ। প্রথম ভেঞ্চার থেকে বেরিয়ে আসার পর হাতে টাকা পেয়ে অকট্রো-এ বিনিয়োগ করেছেন। তিন পাত্তি বাজারে আসার পর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

সৌরভ বললেন, আমাদের প্রোডাক্ট সাধারণ মানুষ যেভাবে গ্রহণ করেছেন সেটাতেই কাজের উৎসাহ পাই। একজন লাখপতির ছেলে যেমন তার দামী স্মার্টফোনে গেমটি খেলছে, তেমনই মন্দিরের বাইরে প্রসাদ বিক্রেতার সন্তানও ততটাই আগ্রহী এই গেম নিয়ে। সকলকে ছুঁয়ে যায়, এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত।

লেখক অলোক সোনি

অনুবাদ শিল্পী চক্রবর্তী