Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Youtstory

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

ADVERTISEMENT
Advertise with us

১০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করে ৬ কোটি টার্নওভার তারক পালের

১০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করে ৬ কোটি টার্নওভার তারক পালের

Thursday April 21, 2016 , 4 min Read

সাধারণ বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা। অ্যাকাউন্টেন্সিতে অনার্স। একেবারেই ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের আর পাঁচটা ছেলে যেমন চায়, পড়াশোনা শেষে সেরকমই নিশ্চিত চাকরির খোঁজ শুরু করেছিলেন তারক পাল। উত্তর কলকাতার উল্টোডাঙার তেলেঙ্গাবাগানে তিন ভাই বোন আর বাবা মা। পরিবার বলতে এই। কিন্তু চাকরি করতে নেমে বুঝতে পারেন, জীবনে নিশ্চিত বলে কিছুই হয় না। প্রথম কিছুদিন মার্কেট রিসার্চ ফার্মে যোগ দিয়ে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ কলকাতার একটি অ্যাড এজেন্সিতে যোগ দেন।

image


“তখন আমার মাইনে ছিল ৫০০ টাকা। ২০০২ সালে ‌যখন চাকরি ছাড়ি তখন বেতন পেতাম ২০০০ টাকা,” বলছিলেন তারক। অবশ্য, সেবছর তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়েননি। বরং ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সংস্থার হাল খারাপ চলছিল। এদিকে ২০০০ সালে বাবাও মারা যান। ফলে সংসারের জোয়াল টানতে এই সামান্য টাকার চাকরিতে চলছিল না পরিবারের বড় ছেলেটির। ততদিনে অবশ্য অ্যাড এজেন্সিতে কাজ করার সুবাদে ক্লায়েন্ট বেস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই ক্লায়েন্টদেরই একজন ছিলেন শহরের এক নামী অলঙ্কার প্রস্তুতকারক সংস্থার ডিরেক্টর। মূলত ওঁর পরামর্শেই ব্যবসা করার ভাবনা মাথায় আসে তারকবাবুর। পরের গোলামি থেকে নিজের কিছু একটা করার উৎসাহও হয়তো ওই মানুষটিই জুগিয়েছিলেন তাঁকে। ব্যাস। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাত্র ১০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়েই সেদিন নেমে পড়েছিলেন ব্যবসায়। পথ চলা শুরু 'দ্য অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভার্টাইজিং'-এর।

কিন্তু ব্যবসায় নেমেও কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি তাঁকে। তারকবাবুর পূর্বতন সংস্থার বাজারে প্রচুর টাকা ধার ছিল। মূলত সেই কারণে তাঁর নতুন সংস্থাকে কেউ ধার দিতে চাইছিল না। সেই সময়েও পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ওই অলঙ্কার প্রস্তুতকারক সংস্থার ডিরেক্টর। মূলত তাঁর সাহায্যেই প্রথম বিজ্ঞাপনের কাজ পেয়েছিল 'দ্য অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভার্টাইজিং'। “তখন কাজ পাওয়ার জন্য এলআইসির ১ লক্ষ টাকার পলিসি বন্ধক রাখতে চেয়েছিলাম। শেষমেশ অবশ্য সেটা করতে হয়নি। আমার উপর ভরসা রেখেই কাজ দিয়েছিলেন তাঁরা,” হাসতে হাসতে বলছিলেন তারক।

এরপর একে একে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন সরবরাহের কাজ শুরু করেন তারকবাবু। ধীরে ধীরে ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়ে। ২০০৫ সালে নটি বিনোদিনীর বাড়িতে একটি অফিস ঘর ভাড়া নেন। তখন কর্মী নেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না। নিজেই কোরাল, ফোটোশপের কাজ শিখেছিলেন। সেই জ্ঞানকে সঙ্গী করেই এগিয়ে চললেন।

ধীরে ধীরে শাখাপ্রশাখা মেলল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভার্টাইজিং। মিডিয়া প্ল্যানিং, কনসালটেন্সির কাজও শুরু হল। বেশ কিছু নামী ব্ৰ্যান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পেও আজ কাজ করছেন তারকবাবু। স্থায়ী কর্মী ছাড়া প্রচুর ফ্রিলান্সার ‌যুক্ত রয়েছেন তাঁর সংস্থার সঙ্গে। এখন আর শুধু সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপন দেওয়াই নয়, শুরু করেছেন বিজ্ঞাপন নির্মাণ। বিভিন্ন সংস্থার জন্য প্রিন্ট ও অডিও-ভিজ্যুয়াল বিজ্ঞাপন তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যেই বেশ কিছু বিজ্ঞাপন তৈরি হয়েছে তাঁর উদ্যোগে। আর সেই কাজে কপি রাইটার থেকে গ্রাফিক্স, ক্যামেরা পার্সন থেকে প্রডাকশন ম্যানেজার-- শুটিং এবং অডিও রেকর্ডিং-সহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত বহু মানুষ তাঁর মাধ্যমে নিয়মিত আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। আসলে নিজের উদ্যোগে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটা নেশা তারকবাবুর। পেশার সঙ্গে নেশাটাকেও মিশিয়ে নিয়েছেন তিনি।

আক্ষরিক অর্থেই শূন্য থেকে শুরু করে এই সাফল্য তাঁর। এরপরও সামনে আরও চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তারকবাবুর জন্য। বলছিলেন, আগে যেখানে এজেন্সির কমিশন থাকত ১৫ শতাংশ, প্রতিযোগিতার বাজারে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২-৩ শতাংশ। এছাড়াও রাজ্যে শিল্পের দূরাবস্থাও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসার ক্ষেত্রে। তাঁর কথায়, “ছোটবেলায় স্থানীয় যে গ্লিসারিন সাবানের বিজ্ঞাপণ দেখে বড় হয়েছি আজও তাই দেখছি। অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বলতেও একটি মাত্র নামই ভেসে ওঠে চোখের সামনে।”

বর্তমানে 'দ্য অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভার্টাইজিং'-এর বার্ষিক টার্নওভার ৬ কোটি। মাত্র ১০,০০০ টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমে এই সাফল্য স্বপ্নের মতো মনে হয় তারকবাবুর কাছে। তাঁর হাত ধরেই ধীরে ধীরে হাল ফিরেছে পাল পরিবারের। কিন্তু বদলাননি তারক পাল। কলকাতার কোথা থেকে কোথায় যাওয়ার বাস নম্বর কত সেটা তাঁর মুখস্থ। তাঁর আচর‌ণে এখনও ফেলে আসা তেলেঙ্গাবাগানের গরীব ঘরের ছেলেটা।

শুরুয়াতিদের কি টিপস দেবেন? প্রশ্নের উত্তরে তারক পাল জানান, “আমি ১০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে ৬ কোটি টাকার টার্নওভার পেয়েছি। আজ ৬ কোটি টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামতে হয়। কারণ, এখন আগে দেখনদারি, পরে গুন বিচারি‍‍‍র যুগ।” এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ব্যবসা করারই পরামর্শ দিচ্ছেন তারকবাবু।

বারাসত থেকে ২৫ কিমি দূরে গাদামারা হাটে ছোটদের জন্য একটি স্কুল করেছেন তিনি। সামান্য মাসিক বেতনে সেখানে পড়তে আসে এলাকার শিশুরা। ভবিষ্যতে স্কুলটিকে আইসিএসই-র নথিভ‌ূক্ত করার স্বপ্ন রয়েছে তাঁর। জীবনে সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন, তাই আগামী প্রজন্মের জন্য কিছু করে যেতে চান তিনি। হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউট সেই উদ্দেশ্যেই তাঁর ক্ষুদ্র প্রয়াস।