Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Bangla

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

Raj's Spanish Cafe কলকাতায় এক টুকরো মাদ্রিদ

Raj's Spanish Cafe কলকাতায় এক টুকরো মাদ্রিদ

Monday April 11, 2016,

4 min Read

ছেলেটির নাম রাজ। সাদার স্ট্রিটে যে রাস্তাটা মিউজিয়ামের পাশ ঘেঁষে ঢুকেছে তার শেষ প্রান্তে রাজ একটি কাফেটেরিয়া চালান। কাফে তো অনেকই আছে কলকাতায়। কিন্তু, রাজের স্প্যানিস কাফেটি সকলের থেকেই স্বতন্ত্র। কাফের জন্ম ইতিহাসও বেশ অভিনব। সাদার স্ট্রিটের পাড়ায় রাজের একটি কাপড়ের দোকান আছে। বিদেশিদের অনেকেই সাদার স্ট্রিট বা ফ্রিস্কুল স্ট্রিটের আশপ‌াশের হোটেলগুলিতে থাকেন। সস্তায় মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে যা বোঝায় এখন তেমন বাজেট হোটেলের অভাব নেই। স্যালভেশন আর্মির হোস্টেল যখন ছিল তখন থেকেই এই চত্ত্বরে গড়ে উঠেছে সারাবছর বিদেশি পর্যটকের ভিড়। বিদেশি মুদ্রা বিকিকিনির ব্যবস্থা। কলকাতা থেকে উড়ে যাওয়ার প্লেন টিকিট বুকিং কিংবা ছোটোখাটো কন্ডাক্টেড ট্যুরের বন্দবস্ত। রাজ জানালেন, তাই এই চত্ত্বরে ওর দোকানে বিদেশিদের আনাগোনা চলতেই থাকত। ওঁরা তাঁর কাপড়ের দোকানে এলে তিনি ওঁদের কাছে জানতে চাইতেন, আর কী হলে ভালো হয় বলো? ওঁরা বলত, এখানে একটা কফি খাওয়ার জায়গা পেলে মন্দ হত না। 

image


কাপড়ের দোকানের পাশে ছিল একটা ছোট অ্যাপার্টমেন্ট। রাজ অ্যাপার্টমেন্টটি কিনে নেন। পরে ভেঙেচুরে নতুন নকশা করে কাফেটি গড়ে তোলেন। প্রায় ৫৫০ স্কোয়ার ফুটের মতো জায়গা। ছড়ানোছিটানো কয়েকটি টেবিলচেয়ার, সোফা। বিদেশি বা বিদেশিনীরা সেখানে বসে তুমুল আড্ডা দেন, কেউ বা গান গাইতে থাকেন অথবা হো হো হাসির ছররা ছড়িয়ে পড়ে কাফের হাওয়ায়। কেমন খুশি খুশি ভাব একটা। এটা এই গরমেও রোজকার দৃশ্য। শীতে এই পরিযায়ী পাখিরা বেশে আসে কলকাতায়। তখন রাজের কাফেতে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। কিন্তু সারা বছরই কম বেশি ব‌্যাস্ত থাকেন রাজ। মেক্সিকো, স্পেন, চিলি, কিউবার খাবার নিয়ে কলকাতার বুকেই একটুকরো বিদেশ এই স্প্যানিশ কাফে।

রাজ বললেন, কাফে চালানোর মতো কিছুই জানতাম না আমি। কাফেটা খোলার পর প্রথমে একটা কেটলিতে চা-কফি বানিয়ে বিক্রি করতাম। মাত্র ৬ বছরের ভিতরই মুখে মুখে দেশান্তরে ছড়িয়ে গিয়েছে রাজের স্প্যানিশ কাফের সুখ্যাতি। একটা দল স্বদেশে ফিরে গিয়ে পরে যাঁরা কলকাতায় আসছেন তাঁদের জানিয়ে দিচ্ছেন রাজের কাফের ঠিকানা। এভাবে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে রাজের কাফে ক্রমশ খ্যাতিমান হয়ে উঠেছে।

"বিদেশি খানা বানানোর কিছুই জানতাম না। ওঁরা এসে খাবার চাইত। আমি বলতাম, দেখিয়ে দিলে বানিয়ে দিতে পারি। ওঁরাই কোন খাবারটা কীভাবে বানাতে হয়, তা শিখিয়ে দিয়েছেন।" এখন রাজের কাফেতে দুনিয়ার প্রায় সব দেশেরই খাবার পাওয়া যায়। আর রাজও সেইসঙ্গে হয়ে উঠেছেন ওঁদের প্রাণের বন্ধু।

কাফের দেওয়াল গুলিতে কত ধরনের শুভেচ্ছা বার্তা। সেও এক কাহিনির মতো। "দেওয়ালগুলো খানিক ময়লা হয়ে গিয়েছিল। ঠিক করলাম রং করাব। সেই সময় নিউ জার্সি থেকে কলকাতায় বেড়াতে আসা এক তরুণী প্রস্তাব দিলেন, তিনি দেওয়ালে কিছু লিখতে পারেন কিনা? আমি বললাম, অবশ্যই, লেখো। মেয়েটা দেওয়ালে ভারতের একটা মানচিত্র অাঁকল। তারপর থেকে ওঁরা সকলেই কিছু না কিছু উপলব্ধির কথা লিখে দেওয়াল ভরিয়ে দিয়েছে। আসলে রাজের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারে কাফেটি নিজেই স্বতন্ত্র একটি কালচার হয়ে গিয়েছে। যাকে বলা যেতে পারে, the culture of Raj's Spanish Cafe।

image


বিদেশিরা সাধারণত দুটি কারণে কলকাতায় আসেন। একদল আসেন ঐতিহাসিক শহর সিটি অব জয়কে নিজের চোখে দেখতে। তবে বিদেশিদের একটা বড় অংশ এই শহরে আসেন স্বেচ্ছাসেবা করার কাজে। কিছুকাল থেকে মিশনারিজ অব চ্যারিটির হয়ে গরিবদুখী মানুষের সেবা করে ফের ফিরে যান স্বদেশে। রাজ বলেন, আসলে ওঁদের নিজের দেশে জীবন অতিব্যস্ত। এখানে ওঁরা আসেন হাঁপ ছাড়তে।

যাওয়া আসার সূত্র ধরে রাজের সঙ্গে ওঁদের বন্ধুত্বের সূত্রপাত। কবিগুরুর ওই কবিতার মতো সার্থকতা যেন রাজের নিজের জীবনে। দেশে দেশে তাঁর ঘরে আছে। রাজও মাঝেমধ্যে ফুরসত পেলে পাড়ি দেন কাফেতে আলাপ হওয়া বন্ধুদের কাছে। রাজের কথায়, দুনিয়ার সব দেশে আমার একটা না একটা আস্তানা আছে। তাই রাজের কাছে গোটা পৃথিবীটাই একটা ছোট্ট দেশ। শুধু তাই নয় বছর কয়েক আগে কলকাতা থেকে লন্ডন সাইকেলে পাড়ি দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন রাজ। কারণ তিনি বলছিলেন দুই শহরের মিল আছে অনেক। একটি করে নদী আছে। আর আছে রাণীর শাসনের একটা ইতিহাস। একটা ছবি তো অন্যটা তার প্রতিচ্ছবি। রাজ এই দুই শহরের মিলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এক সময়। দুচাকায় ভর করে দুনিয়াটা ব্যবচ্ছেদ করে দেখতে চেয়েছিলেন এই যুবক। কাফের চৌহদ্দিতে সেই সাংস্কৃতিক মিলনের কাজটা দারুণ ভাবে করে যাচ্ছেন রাজ। 

রাজের পুরো নাম রাজেন্দ্র প্রসাদ পাল। আদি নিবাস বেনারস। রাজ বলছিলেন, মাত্র দুবছর বয়সে বাবার সঙ্গে মায়ের কোলে চেপে এই কলকাতা শহরে চলে এসেছিলেন তিনি। ৪২ বছরের তরতাজা এই যুবক এখন এই শহরকে তাঁর নিজের শহর বলেই মনে করেন। স্কুলের লেখাপড়া করেছেন সেন্ট অ্যান্টনিতে। ক‌লেজ ছিল বিড়লা কলেজ অব সায়েন্স। রাজ জানালেন, জীবনে কখনও তিনি চাকরি বাকরি করার কথা ভাবেনইনি। ব্যবসা তাঁর রক্তে।

এখন আটজন কর্মী নিয়ে দিব্যি গড়গড়িয়ে চলেছে রাজের স্প্যানিশ কাফের চাকা। তরতাজা এই মানুষ নিজেও প্রবল ঈশ্বরবিশ্বাসী। দিনগত পাপ থেকে মুক্তির তাগিদে গঙ্গাস্নান করতে ভালোবাসেন। অল্প বয়সে বিয়ে করেছেন। রাজ এখন তিন সন্তানের বাবা। স্প্যানিস কাফের পরিবেশ পুরোপুরিই ঘরোয়া। রাজ বলছিলেন, এটাই আমার ব্যবসার সাফল্যের চাবিকাঠি। Keep it simple... সাধারণভাবে সাজিয়ে তোলার সেই কাজই প্রতিদিন সার্থকতার সঙ্গে করে চলেছেন কলকাতার রাজ।