Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Bangla

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

পাচার রুখতে আমিনার ‘বীরাঙ্গনা’

কখনও অভাবের সুযোগ নেওয়া। কখনও মিসড কল বা কাজের টোপ। পাচারকারীদের নানা চালে চুপিসারে হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের অজস্র কিশোরী, তরুণী। স্রোতের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে লড়াইটা নিজের মতো করে চালিয়ে যাচ্ছেন আমিনা খাতুন। তাঁর বীরাঙ্গনা সেবা সমিতি প্রতি বছর অন্তত পঁচিশজন মেয়েকে কানাগলি থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। বীরাঙ্গনার থেকে তারা নানারকম কাজ শিখে নির্ভরতার পথ পেয়েছে। পেয়েছে পুনর্বাসন। এমন পরশে শুকিয়ে যাওয়া কুঁড়িগুলো আবার ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করেছে।

পাচার রুখতে আমিনার ‘বীরাঙ্গনা’

Saturday March 12, 2016,

3 min Read

সাত বছর হতে চললেও আয়লার ক্ষত এখনও শুকোয়নি সুন্দরবনের নানা প্রান্তে। ভিটে ফিরে পেলেও অভাবের সঙ্গে লড়াইটা চলছেই। সেই একপেশে লড়াইয়ের ফাঁকে অনেক মায়ের কোল চুপিসারে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বাসন্তীর কুলতলি হোক বা ক্যানিং-এর জীবনতলা। পাচারের দৌরাত্ম্যে প্রায় প্রতিদিন একটি করে মেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে। ক্যানিং থেকে শিয়ালদহ, হাওড়া হয়ে কারও ঠিকানা হচ্ছে দিল্লির কোনও যৌনপল্লি কারও মুম্বই বা উত্তর প্রদেশের কোনও অন্ধকার ঠিকানায়। ২০০৪ সাল থেকে সুন্দরবনের নানা জায়গায় সমাজকর্মী হিসাবে কাজ করতে গিয়ে আমিনা খাতুন দেখেছিলেন পাচারের পর মেয়েদের উদ্ধার করা গেলেও তাদের পুনর্বাসন করা মুশকিল হয়ে পড়ে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেক সময়ই উদ্ধার হওয়া নির্যাতিতাদের বাড়ি ফেরাতে চায় না পরিবারগুলো। এমনকী কেউ কেউ বাড়িতে ফিরলেও কার্যত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই নিয়ে সচেতনতার প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। সেই ভাঙন ঠেকাতে নিজে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন ঘুটিয়ারি শরিফের বাঁশড়ার বাসিন্দা আমিনা। নাম দেন বীরাঙ্গনা সেবা সমিতি।

২০১২ সালে পথ চলা শুরু হওয়ার পর মেয়েদের উদ্ধারে গিয়ে নিত্যনতুন সমস্যার মুখোমুখি হন আমিনা। কখনও অভিভাবকদের গা-ছাড়া ভাব, কখনও পাচারকারীদের শাসানি। দেখে নেওয়ার হুমকি। একটুও না ঘাবড়ে মেয়েদের আলোয় ফেরাতে নিজের মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমিনা। বছর পঁয়ত্রিশের আমিনা ঠিক করেন ফিরিয়ে আনা মেয়েদের হাতের কাজ শেখাতে হবে। তারা নিজেদের মতো কিছু করতে পারলে মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে। সেই জন্য উদ্ধার হওয়া মেয়েদের জন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে তাঁর সংস্থায়। যেখানে পোশাক তৈরি, কিচেন গার্ডেন, মাশরুম চাষ শেখানো হয়। যেখানে কাজ শিখে নিজেদের কথা বলার সাহস দেখাতে পারছেন মুর্শিদা, তবসুম, রহিমারা (নাম পরিবর্তিত)।

image


ক্যানিং ১ ও ২ নম্বর ব্লক, গোসাবা, বাসন্তী, সন্দেশখালি, বারুইপুর, মিনাখাঁয় হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের পথ খুঁজে দেওয়ার কাজটা করে যাচ্ছে বীরাঙ্গনা। পরিবারগুলিকে আইনি সাহায্য, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতার কাজটা করেন আমিনা। এর ফলো মিলতে শুরু করেছে। গত বছরে বীরাঙ্গনার হাত ধরে মূলস্রোতে ফিরেছে ২৪ জন মেয়ে। পাচারের তুলনায় ফিরে আসার সংখ্যাটা অনেকটা কম হলেও আমিনা মনে করেন ছবিটা ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। আমিনার কথায়, গ্রামে গিয়ে বলি মেয়েদের অধিকারের কথা। কোনও সমস্যা হলে হেল্পলাইন নম্বরও দেওয়া আছে। এই ব্যাপারে পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করে। ফিরে আসার পর মেয়েদের হাসি তৃপ্তি দিলেও আক্ষেপও রয়েছে অনেক। আইনের ফাঁক গলে অনেক পাচারকারী ছাড়া পেয়ে যান। আমিনা বলছেন, একজন পাচারকারী যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেত তাহলে পাচারের ব্যাধি অনেকটাই কমত। তা হচ্ছে না কেন। আমিনা বলছেন, পাচারকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছর জেল। কিন্তু খুব বেশি ৩ মাসের মধ্যেই জামিন পেয়ে যাচ্ছে অভিযু্ক্তরা। মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত চাপের মুখে থাকতে হয় পরিবারগুলোকে। পাশাপাশি সুন্দরবনে এত দূর থেকে গিয়ে আলিপুর আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না নির্যাতিতাদের। সর্বোপরি আর্থিক কারণতো রয়েইছে। এক নিঃশ্বাসে এই কথা বলতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ঝড়ে পড়ে আমিনার গলায়। তবে হতাশা ঝেড়ে এগিয়ে চলেন আমিনা। কারণ তাদের কাজ যে অনেক বাকি।

image