দিকে দিকে অগুণতি শালিনীর উদয়ন

দিকে দিকে অগুণতি শালিনীর উদয়ন

Wednesday March 30, 2016,

3 min Read

image


প্রথমা| একজন সামান্য ছাপোষা কেরানির মেয়ে গোপা মন্ডল। South Calcutta Law College থেকে B.A LL.B পাশ করে এখন Hazra Law College থেকে LL.M এর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

দ্বিতীয়া|মনের দিক থেকে খুব শক্ত মেয়ে মৌমিতা। জীবনের দীর্ঘ বন্ধুর পথ তিনি অতিক্রম করেছেন। দারুণ তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন নিয়ে B.Sc আর M.Sc করার পর তিনি খড়গপুর IIT তে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। সরকার তাঁকে মাসিক ১৬,০০০ টাকা স্কলারশিপ দিচ্ছে। PH.D করছেন মৌমিতা।

তৃতীয়া|West Bengal Armed Police এর 9th Battalion এর অফিসার মৌসুমি আলম। নদিয়া জেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভীষণ সফল এই লেডি কপ।

চতুর্থী| মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে নীলিমা। Indian's Ivy League institutions এর ক্লাসরুমে পৌঁছে গিয়েছেন মেয়েটি। নীলিমার অনবদ্য যাত্রাপথে রয়েছে চূড়ান্ত শ্রম আর মনোবল। মেধাবী এই ছাত্রী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে B.Sc করেন। ফাইনালে ৮৩ শতাংশ নম্বর পান। ফার্স্টক্লাস ডিস্টিংশান। জায়গা করে নেন কানপুর IIT তে। M. Sc তে আবার প্রমাণ করেন নিজের যোগ্যতা। এইবার ৯২ শতাংশ নম্বর। এখন তিনি খড়গপুর IIT তে PH.D করছেন।

আপনারা হয়তো এতক্ষণে ভাবতে শুরু করেছেন পরপর এই মেয়েগুলোর লড়াই আর সাফল্যের কাহিনি আপনাদের কেন শোনাচ্ছি! কারণ গোপা, মৌমিতা, মৌসুমি আর নীলিমার কথা নয়, আমার আজকের উদ্দেশ্য সেই তারটির সঙ্গে আপনাদের জুড়ে দেওয়া যেই তারে গাঁথা হয়েছে এই মেয়েগুলোর জীবন। যে সংস্থা ওঁদের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে তার নাম Udayan Care Kolkata। ২০০৭ থেকে উদয়ন তাদের Udayan Shalini Fellowships’ (USF) প্রোগ্রামের মাধ্যমে সমাজে শিক্ষাজগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে। সংস্কৃত ভাষায় 'উদয়ন' মানে অনন্ত সূর্যোদয় আর 'শালিনী' একজন মহিয়ষী নারী। ২০০২ সাল থেকে শুরু হয়ে আজ দিল্লি, কলকাতা, কুরুক্ষেত্র, ওরঙ্গাবাদ, দেরাদুন, হরিদ্বার, গুরগাঁও, পাগওয়াড়া, হায়দরাবাদ এবং জয়পুরে এঁদের ১০টি শাখা রয়েছে। ভীষণ সফল এই প্রকল্প ৫০০০ মেয়ের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

image


উদয়ন প্রথাগত ধ্যান ধারণার উর্দ্ধে শিক্ষা নিয়ে ভাবে। শুধু ডিগ্রী হাঁকিয়ে গুচ্ছের অর্থ রোজগারের নাম শিক্ষা নয়। উদয়নে একজনের শারীরিক, মানসিক আর মানবিকতার পূর্ণ বিকাশের চেষ্টা করা হয়। কলকাতার Udayan Care দিল্লির Udayan Care India -র একটি অংশ। এখন ভারতের বারোটি রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই সংস্থা।

কুসুম ভান্ডারির নেতৃত্বে কলকাতায় ২০০৭ সালে উদয়ন কেয়ার শুরু হয়। যুক্তিবাদী বছর চল্লিশের কুসুম তখন একজন সৃজনশীল শিক্ষাবিদ। উদয়ন তাঁর জীবনেও পরিবর্তন এনেছিল। ধীরে ধীরে শিক্ষাব্রতী কুসুম হয়ে ওঠেন সামাজিক উদ্যোগপতি। শুরুর দিকে তাঁর সঙ্গে ছিলেন পরিমলচন্দ্র দাস। তিনি একজন সফল ব্যাঙ্কার। পরিমলের পরার্থপরতা তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে উদয়নে যোগ দেন পরিমল। উদয়নের জন্ম থেকে গাইডের মতো সঙ্গে আছেন সুরেশ নেওটিয়া এবং বিডি সুরেখার মত মানুষ।

কুসুম জানালেন যেসব মেধাবী ছাত্রীর পড়াশোনা দারিদ্রের কারণে থমকে যায় ওঁরা চেষ্টা করেন তাঁদের পাশে দাঁড়াতে। তাঁদের প্রতিভাগুলি যাতে বিকশিত হতে পারে সেইদিকেই উদয়নের লক্ষ্য। এভাবেই বিকশিত একেকটি প্রতিভা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সিনেমা, নৃত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতির জগতে। উদয়নের সহযোগিতায় দারুণ সফল হয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স, প্রযুক্তির নানা শাখায়। এমনকি কেউ কেউ ইংরাজী সাহিত্যের অধ্যাপনাও করছেন। প্রকৃত অর্থে তাঁরা হয়ে উঠছেন এক একজন শালিনী। PWC, GENPACT, Allahabad bank, Century Ply এর মতো MNC গুলিতে উচ্চপদে কর্মরত পেশাদার ব্যক্তিরা এবং বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের পড়ান এমন শিক্ষকেরা স্তম্ভের মতো উদয়নের পাশে আছেন।

আজ উদয়নের আছে প্রায় হাজার শালিনীর দল যাঁরা প্রত্যেকে এক একজন স্বয়ং সম্পূর্ণ নারী, আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার সাথে জগতের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। এঁদের অনেকেই পড়াশোনা করেছেন Ivy League education institutions, IIMs এবং IITs এ। চাকরি করছেন বিভিন্ন MNC -তে। গবেষণা করছেন BARC, Allahabad Research Institute এর মত সংস্থায়। কেউ ফ্যাশন ডিজাইনার, কেউ শিক্ষিকা, কেউ ব্যাঙ্ক চাকুরে। কেউ আবার ঝুঁকেছেন উদ্যোগপতি হওয়ার দৌঁড়ে। নিজেদের গ্রামে খুলেছেন বুটিক। শহরে জামাকাপড়ের ব্যবসা করছেন। সমাজে ওরা সবাই সফল। আর তাই সাফল্যই উদয়নের মেয়েদের উদার করেছে। তার সুফল পাচ্ছে সমাজ। দিকে দিকে জেগে উঠছে উদয়ন।