'Make A Difference' এর স্বপ্ন শিবিরে 'তারে জমিন পর'
মেক আ ডিফারেন্স সংক্ষেপে ম্যাড। একটি এনজিও। ম্যাড-ই বটে। মানুষের প্রেমে পাগল। মাত্র ৯ বছরে সংস্থাটি ছড়িয়ে গিয়েছে ২৩ টি শহরে। শুধু কলকাতাতেই আছেন ২৭০ জন ভলান্টিয়ার। যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫। এরা বদল চান। রাজনৈতিক বদল নয়। সামাজিক বদল। গোটা খোল নলচে বদলে দেওয়ার প্রতিস্পর্ধা করেন না। তবে এরা চান নিবীড় ভাবে শহরের অবহেলিত শৈশবের ভিতর সৃজনশীলতার জাদুকাঠি ছুঁইয়ে দিতে। শুনতে রোম্যান্টিক লাগছে হয়তো। কিন্তু কাজটা সামনে থেকে দেখলে কোনও সন্দেহ থাকবে না। ভালোবাসার এক অবসেস্ড পাগলামি আপনার চোখে পড়বেই।
সম্প্রতি হয়ে গেল ওদের তিনদিনের কর্মশালা। শহরের বিভিন্ন শেল্টার হোমের শদেড়েক শিশুকে নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন হয়েছিল। নাম দেওয়া হয়েছিল ড্রিম ক্যাম্প। তিন দিন ধরে চলল আত্মবিশ্বাস মজবুত করার কাজ। স্বপ্ন দেখানোর প্রয়াস। এবং স্বপ্নের পথে প্ৰথম পা ফেলার হিম্মত দেওয়া। চলল সংস্কৃতি চর্চা। ছবি আঁকা গান তো ছিলই পাশাপাশি ছিল মুক্ত ভাবে আলোচনা করার সাহস দেওয়া।
জোকার পাম ভিলেজে ড্রিম ক্যাম্প ২০১৫-১৬ ছিল শিশুদের স্বপ্নের বাস্তব সৌধ নির্মাণের এক আদর্শ জায়গা। ক্যাম্পে ১৪০ জন শিশুর পাশাপাশি ছিলেন মেক আ ডিফারেন্সের ৯০ জন ভলান্টিয়ার। কলকাতা শহরে এই সংস্থা কাজ করছে ২০০৯ সাল থেকে। এবং বর্তমানে এই সংস্থা চারটি শেল্টার হোমের সাথে যুক্ত। এই চারটি হোম হল - অল চিন্ড্রেন টুগেদার ট্রাস্ট, দক্ষিণ কালিতলা সেবাশ্রম, ক্যালকাটা মুসলিম অরফ্যানেজ (ছেলেদের জন্য) এবং ক্যালকাটা মুসলিম অরফ্যানেজ (মেয়েদের জন্য)। এরা দেখভাল করছেন ২৫০’রও বেশি শিশুকে। স্বেচ্ছাসেবীদের অধিকাংশই ছাত্র। এসেছেন সেন্ট জেভিয়ার্স, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, এন ইউ জে এস এর মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। এছাড়া বেশ কিছু পেশাদার কর্মী এবং গৃহবধূও ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করেন এই সংস্থায়। কিছু অভিজ্ঞ ভলান্টিয়ার রয়েছেন যাঁদের বয়স ২৫ এর বেশি।
সংস্থার বাৎসরিক কর্মসূচীর অংশ হিসাবে যে ২৩ টি শহরে এরা কাজ করছেন সর্বত্রই হয় এরকম এই ধরনের ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
কী এই ড্রিম ক্যাম্প ?
আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে ড্রিম ক্যাম্প ছোটোদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়। ছুটির মেজাজে নতুন, অনাস্বাদিত অভিজ্ঞতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়। বড় কিছু করার, বড় করে ভাবার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এই সংস্থা মনে করে যে বিভিন্ন উৎসাহব্যাঞ্জক কাজে ছোটোদের যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে এবং নিজেদের পরিসরে দক্ষ পেশাদার ব্যক্তিত্বদের ক্যাম্পে নিয়ে এসে তাঁদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বৈঠক বা প্রয়োগমূলক অধিবেশন পরিচালনা করানোর মধ্যে দিয়ে শিশুরা নিজেদের দক্ষতার দিকগুলি উপলব্ধি করতে পারবে। এবং আগামীদিনে তারা কী করতে চায় সে সম্বন্ধে একটা ধারণায় আসতে পারবে, যা দীর্ঘমেয়াদিভাবে তাদের সাহায্য করবে নিজেদের জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে।
ক্যাম্পে অংশ নেওয়া ক্ষুদে সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এবং তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য ‘বিউটিফুল ইউ অ্যান্ড ড্রিম ট্রি’ এর মত অধিবেশনের পাশাপাশি বিট বক্সিং, বা হাতের কাজ শেখানোর কর্মশালাও রাখা হয়েছিল।
ম্যাড কলকাতার সিটি টিম লিড শুভম কানোই বলেন, “ছোটোদেরকে এই ক্যাম্পের কর্মসূচীগুলি উপভোগ করতে দেখা এবং আনন্দের সাথে ওদের নতুন কিছু শিখতে দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই অন্যরকম। মনে হচ্ছিল যেন আমাদেরও অনেককিছু শেখার রয়েছে ওদের কাছ থেকে। ওদের স্বপ্নের দৌড় সত্যিই তাক লাগিয়ে দেবার মত। এই ক্যাম্পে অংশ নেবার মধ্যে দিয়ে ওরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে ওরা একদিন নিশ্চয়ই সফল হতে পারবে। এটাই ক্য়াম্পের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রাপ্তি।”
এই গোটা ক্যাম্পের মধ্যে সবথেকে ভালো লেগেছে কোন বিষয়টা জানতে চাওয়ায় ক্যাম্পে অংশ নেওয়া ক্ষুদে সদস্যদের একজন, সপ্তম শ্রেণীর গুলশাফান বলল– “আমার বন্ধুদের সাথে কাটানো এটাই আমার সেরা সময়। এবং আমার বন্ধুদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠার জন্য ম্যাডকে অনেক ধন্যবাদ।”