ইঞ্জিনিয়র নেহা, শিল্পের টানে খুলেছেন Alankrit
ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন। বি-টেক করে শহরেরই এক নামী সংস্থায় আজ কর্মরত। ইঞ্জিনিয়ারিং তাঁকে টেনেছে। কিন্তু তাঁর সৃজনশীল মনকে বেঁধে রাখতে পারেনি। “অনেকদিন থেকেই টুকটাক নিজের কানের দুল বানাতাম। আত্মীয়-বন্ধুদের আর্জিতে তাঁদের জন্যও তৈরি করে দিতাম। পরে তাঁরাই পরামর্শ দিলেন নিজের ব্ৰ্যান্ড তৈরি করার,” বলছিলেন নেহা। নেহা আচার্য। অলংকৃতের কণর্ধার।
২০০৫ সাল থেকে চাকরি সূত্রে হায়দরাবাদ , মুম্বই ঘুরেছেন। অবশেষে কলকাতায় ফেরা। শহরে ফিরে নিজের নেশাকে পাসটাইম করে নিলেন। ছুটির দিনে তো অবশ্যই। কখনও কখনও অফিস থেকে ফিরেই বিডস, সিলভার-গোল্ডেন চার্মস নিয়ে আঁকিবুকি শুরু হয়ে যায়। হ্যাঁ আঁকিবুকিই বটে। কারণ কর্মাশিয়াল, ফাইন আর্টস গুলে খেয়েছেন নেহা। বি-টেক স্নাতক নেহার কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকায় ঝোঁক ছিল। আর সেই ভালবাসাতেই পড়াশোনার আর্টসের কোর্স করা। সময়ের অভাবে আজ আর রং-তুলিতে হাত দেওয়া হয় না। তবে সৃষ্টিসুখেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন তিনি।
২০১৫ সালের পনেরোই এপ্রিল অলংকৃতের জন্ম। একজন ইঞ্জিনিয়ার অফিসের ব্যস্ততার মধ্যে সময় বের করেন কী করে? প্রশ্ন শুনে একটু হেসে নেহা জানালেন, শখের খাতিরে এটুকু সময় বের করাই যায়। পুজো বা উতসবের মরসুমে যখন অর্ডারের চাপ থাকে, তখন অফিস থেকে ফিরে রাত জেগেও হাতের কাজ শেষ করেন। তবে বেশিরভাগ কাজটাই হয় শনি ও রবিবার। ছুটির দিনে। ডেলিভারির বিষয়টি দেখে নেন মা।
কিন্তু এক বছরে অলংকৃতের এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পিছনে রহস্যটা কী ? নেহার মতে, সোনার গয়না পড়ে রোজ পথে বেরোনো যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। তার ওপর একই গয়না রোজ পড়তেও একঘেয়ে লাগে। ফলে পকেট ফ্রেন্ডলি এমন গয়না আজকাল গৃহবধূ থেকে ওয়ার্কিং ক্লাস সকলেরই পছন্দের তালিকায়।” জার্মান সিলভার আর গোল্ডেন ব্রাস-এর এই আধুনিক অলঙ্কার কিন্তু সকলেরই সাধ্যের মধ্যে। দাম শুরু ষাট থেকে সত্তর টাকায়। সেট মিলছে তিনশো থেকে ছশো টাকার মধ্যে।
তাই তো শুধু কলকাতা বা আশপাশের জেলা থেকেই নয়, ভিন রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে অলংকৃতের জনপ্রিয়তা। নেহা খুব বেশি মার্জিন রাখেন না। তাঁর মতে, দাম রিজনেবল হলে বিক্রি বেশি হয়। কারণ তিনি ভালই জানেন, এই পেশায় রয়েছেন প্রচুর মানুষ। তাই প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। হয়তো সে কারণেই ব্যবসায় নয়, এখনও শখেই সীমাবদ্ধ রয়েছে অলংকৃত। তবে এই শখ পুষতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতাও হয়েছে নেহার। বলছিলেন, “একবার ৩ হাজার টাকার অর্ডার তৈরি করে বসে আছি। কিন্তু যিনি অর্ডার দিয়েছেন তিনি বেপাত্তা।” এই ঘটনার পরও যে তিনি প্রফেশনাল হয়ে উঠতে পারেননি তা অকপটেই স্বীকার করলেন নেহা। আপাতত বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনী করে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভর করে ভালই এগোচ্ছে অলংকৃত।
বেশ কিছু পাইকারি বাজারে বরাত সরবরাহের প্রস্তাব এসেছে তাঁর। ভবিষ্যতে হয়তো ইঞ্জিনয়ার নেহা ব্যবসায়ী হয়ে উঠবেন। সেক্ষেত্রে অব্শ্য শুধু অলঙ্কার নয়, স্বয়ংসম্পূর্ণ বুটিক খোলার ইচ্ছা রয়েছে নেহার। তবে আপাতত তাঁর অলংকৃতেই মজে আজকের জেন এক্স-ওয়াই।