ফ্ল্যাটফুট থেকে দীপা 'প্রদুনোভা' কর্মকারের স্কাই ভল্ট

ফ্ল্যাটফুট থেকে দীপা 'প্রদুনোভা' কর্মকারের স্কাই ভল্ট

Friday April 22, 2016,

3 min Read

ভারতের খেলার আকাশে নতুন যে তারা উঠেছে তাঁর নাম দীপা কর্মকার। আগরতলার মেয়ে। ২২ বছর বয়স। কিন্তু ভারতের ৫২ বছরের ইতিহাস বদলে দিয়েছেন এই ত্রিপুরা সুন্দরী। স্রেফ তাঁর দৌলতেই রিওর অলিম্পিকে জিমনাস্টিক মঞ্চে থাকবে ভারতের প্রতিনিধিত্ব। প্রথম ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পকের ছাড়পত্র পেয়ে নজির তৈরি করেছেন দীপা। 

image


ইওর স্টোরি বাংলার পক্ষ থেকে আমরা যখন ওঁকে শুভেচ্ছা জানাই, ওঁর ইন্টারভিউ চাই অনাবিল বাংলায় বললেন ধন্যবাদ। একদম আটপৌরে মেয়ের মতই কথা বলছিলেন দীপা। কিন্তু ক্রমাগত ফোন বেজে যাচ্ছিল। কত শুভেচ্ছা কত ফুল। এত তৃপ্তি ও কখনও পায়নি। ২০০৭- এ বছর চোদ্দর মেয়েটা যেবার জলপাইগুড়িতে জুনিয়ার ন্যাশনাল জিতল সেদিন থেকেই ওর দিকে আমাদের নজর রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ও ৭৭টি পদক জিতে ফেলেছেন। তার মধ্যে ৬৭ টিইি সোনা। রাজ্যস্তরে তো বটেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে যেখানেই ফ্লোরে নেমেছেন গলায় উঠেছে স্বীকৃতির সম্মান। হার ও কখনও মানেননি। ওঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী ছোটোবেলা থেকেই ওঁকে তৈরি করেছেন। ফলে ওঁর নাড়ি নক্ষত্র সব থেকে ভালো বিশ্বেশ্বর বাবুই জানেন। বলছিলেন ওঁর হার না মানার কাহিনি। 

ও যখন প্রথম জিমন্যাস্টিকের প্রশিক্ষণ নিতে আসে তখন ওর বয়স কত হবে খুব বেশি হলে ৬ বছর। পায়ে একটা ডিফেক্ট ছিল। প্রথমদিনই নজরে পড়ে। ওর ফ্ল্যাটফুট। জিমন্যাস্টদের জন্যে একদমই ঠিক নয়। দীর্ঘদিন সময় লেগেছে পায়ের তলায় কার্ভ আনতে। Flat Feet থাকার জন্যে যন্ত্রণাও হত। সাধারণত এধরণের সমস্যা থাকলে ঠিকঠাক ভাবে হাঁটা চলাই কষ্টকর হয়। আর জিমন্যাস্টদের জন্যে এই সমস্যা অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু কোচ এবং ছাত্রী উভয়ের দীর্ঘ চেষ্টায় পায়ের তলার সমস্যা কেটেছে। আর এটা দিয়েই প্রথম যুদ্ধ জয় শুরু করেছেন দীপা। বাবা দুলাল কর্মকার মেয়েকে জিমন্যাস্টিকে দিয়েছিলেন শুধু পায়ের পাতার সমস্যা সারানোর জন্যেই নয়। চেয়েছিলেন দূর পাল্লার ঘোডা় হোক তাঁর মেয়ে। দুলাল বাবুও সাইয়ের কোচ। খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত এই পরিবার। প্রথম দিকে দীপার ভালো লাগত না এই অকথ্য পরিশ্রম। কিন্তু দীপার জীবনে বাবা আর কোচই হল ব্যালান্স বিম, প্যারালাল বার। আর ভাল লাগাটা আস্তে আস্তে আসা শুরু হল যখন গুটিগুটি পায়ে সাফল্য যবে থেকে আসতে লাগল। তখন থেকেই জিমন্যাস্টিকই জীবন হয়ে উঠতে শুরু করল দীপার।

অ্যাসোসিয়েশানের গন্ডগোল পেরিয়ে কোচ,পরিবার ওশুভাকাঙ্খীদের হাত ধরে উড়ান ভরতে শুরু করলেল দীপা কর্মকার। প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসেবে কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ জেতেন। আর বাজিমাত করলেন রিও অলিম্পিকের টেস্ট ইভেন্টে। হারালেন তাঁর অন্যতম আইডল প্রাক্তন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ওকাসানাকে। আইডলকে হারিয়ে সোনা, তার চেয়েও বড় ভারতীয় মহিলা হিসেব প্রথম অলিম্পিকের টিকিট। তবে অলিম্পিকের প্রস্ততির জন্য বিশাল অর্থের প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় সরকারের টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমে ৩০ লক্ষ টাকার অনুদান পেয়েছেন। আলাদা করে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকও তাঁকে ৩০ লক্ষ টাকা দেবে। ফলে টাকা বাধা মিটেছে।

বলছিলেন, "বাধা তো আসবেই, প্রতিকূলতাও থাকবে। কিন্তু এগিয়ে যেতেই হবে।" রীতিমত পরিনত মেয়েটা। সামনে ওর পাখির চোখ অগস্ট মাসের ৬ তারিখ। অলিম্পিকে এই দিনই তাঁর ইভেন্ট হওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে এই দিনই দীপা প্রদুনোভা কর্মকার খেল দেখাবেন। আর ১২৫ কোটি আনন্দে ডিগবাজি খাবে। খোদ ক্রিকেটের ঈশ্বর সচিন তেন্ডুলকরও আঙুল ক্রস করে বসে আছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চোখের কোনে আশার আলো। মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সরকার ঘরের মেয়ের সাফল্যে হতবাক। 

যে প্রাদুনোভা ভল্ট দিতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়, প্রাণের ঝুঁকি থাকে, দুমড়ে যেতে পারে স্পাইনাল কর্ড। সেই Yelena Sergeyevna Produnova-র সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কথা বলতে গিয়ে কিশোরীর মত আবেগপ্রবণ বাইশ বছরের দীপা। এটাই বোধহয় ওঁর সাফল্যের বৈশিষ্ট্য। দীপা নিজের আবেগটাকে ধরে রেখে গভীরতা বাড়িয়ে নিয়েছন। এখন একটা বড় স্বপ্ন। রিও-র মঞ্চ। ৫২ বছর ধরে যে স্বপ্ন কেউ ছুঁতে পারেনি, সেটাকে এবার ছোঁয়ার সময় এসে গিয়েছে। অধ্যাবসায় চালিয়ে যাচ্ছেন দীপা।