লুকিয়ে থাকা শিল্প স্বত্বা জাগিয়ে সফল বর্ধমানের ইন্দু প্রসাদ দাস
কেরালার সুখ্যাতি রয়েছে খড় শিল্পের জন্য। তবে বাংলাতেও এই শিল্পের ব্যাপক চাহিদা। চাহিদা থাকলে কি হবে। হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শিল্পী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। যাদের মধ্যে ইন্দু প্রসাদ দাস অন্যতম। বর্ধমানের রসুলপুরের বৈদ্যডাঙার বাসিন্দা। বাবা নগেন্দ্র চন্দ্র দাস ছিলেন রেলের স্টেশন মাস্টার। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে কোন সরকারি চাকরি করুক। কিন্তু ছোট থেকেই সৃষ্টিশীল মনোভাবাপন্ন ইন্দু প্রসাদ চেয়েছিলেন বড় শিল্পী হতে। তবে গতানুগতিক ভাবধারার বাইরে তার শিল্প সত্তার প্রকাশ ঘটাতে চেয়েছিলেন। পেরেওছিলেন তিনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে শিল্পীর আসনে।
রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পড়াশোনা। তারপর কমার্স নিয়ে গ্রাজুয়েশন। ছোট থেকেই হাতের কাছে পাওয়া জিনিস থেকে বিভিন্ন শিল্প সামগ্রী তৈরিতে পটু ছিলেন। কিন্তু বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিতে হচ্ছিল ঠিকই, মন চাইছিল শিল্প নিয়ে কিছু করার। ঠিক এই সময় তার এক বন্ধু কেরালা বেড়াতে যায়। ফিরে এসে তাকে খড়ের তৈরি এক সুন্দর শিল্প সামগ্রী উপহার দেয়। উপহার পাওয়া ওই একটি শিল্পই তার জীবনকে বদলে দেয়। সিদ্ধান্ত নেন খড় দিয়েই বিভিন্ন শিল্প তৈরি করবেন। তারপর নিজের চেষ্টায় খড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্প সামগ্রী তৈরি করতে লাগলেন।
চর্চা করতে করতে খড়ের মধ্যেই সাতটি রং খুঁজে পান। কোনটি ধুসর, কোনটি কালচে, কোনটি আবার হলুদ। এর সাথে গম গাছ ব্যবহার করে ফুটিয়ে তুললেন চোখ ধাঁধানো শিল্পকর্ম। দেব দেবীর মুর্তি, মনিষীদের প্রতিকৃতি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক চিত্র সহ আরও অনেক কিছু। কোন কৃত্রিম রং ব্যবহার করেন না।প্রকৃতির মধ্যে থাকা বিভিন্ন রং এর খড় ও গম গাছ থেকেই এই শিল্প কর্ম তৈরি করেন। বিহার থেকে এক বিশেষ ধরনের খড় আনা হয়, যা এই শিল্পের প্রধান উপকরণ। তবে গম গাছ সংগ্রহ করা হয় বাংলা থেকেই। প্রথমে খড়গুলিকে কাটিং করা হয়। তারপর নিজের হাতে ফুটিয়ে তোলেন অপরূপ শিল্প। এগুলি কাঁচের ফ্রেমে বাধানো হয়। তারপর অর্ডার অনুযায়ী বিক্রি হয়। ৪ ফুট/২ ফুটের একটি শিল্প প্রায় ৩৫ থেকে ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ১৮ জন কর্মীকে নিয়ে চলছে তার এই কর্মকাণ্ড। এখন তার শিল্প সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা। সরকারি উদ্যোগে মঞ্জুষা, বঙ্গশ্রী, বিশ্ববাংলার শোরুমে তার হাতে শিল্প সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া কিছু এজেন্সি মাধ্যমে বাইরের দেশেও ইন্দু প্রসাদের খড়ের শিল্পের প্রসার ঘটেছে।
কথায় আছে শিল্পীর মধ্যেই শিল্প স্বত্বা লুকিয়ে থাকে। ইন্দু প্রসাদ দাসেরও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা থেকে অদ্ভুত শিল্প সৃষ্টি করে চলেছেন। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে বিদেশে।ইতিমধ্যেই পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। নিজস্ব শিল্প স্বত্বাকে কাজে লাগিয়ে আজ আর্থিক ভাবেও প্রতিষ্ঠিত এই শিল্পী। কঠিন লড়াই আর মনের ইচ্ছাশক্তিকে জাগ্রত করেই যে জীবনে সাফল্য আসে তা প্রমাণ করেছেন ইন্দু প্রসাদ দাস।