পলাশ ফুসলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পার্বণের পাহাড়ে
বসন্ত এসে গেছে। অযোধ্যা পাহাড় মম করছে প্রেমের গন্ধে। পলাশ আর শিমূলের সিডাকটিভ লাল আভায় জঙ্গলমহলের শরীরে আগুন গলে পড়ছে। অযোধ্যা পাহাড়ের জঙ্গলে উপত্যকায় ঢলে পড়েছে বসন্ত। আর প্রতি বছরের মত এবছরও এই প্রেমের বসন্তকে সেলিব্রেট করার সমস্ত আয়োজন প্রায় শেষ। পুরুলিয়ার ঝালদা, গড়জয়পুর এবং আযোধ্যা পাহাড়কে কেন্দ্র করে শুরু হতে চলেছে ছৌ-ঝুমুর-করম-নাটুয়া ইত্যাদি ফোক ও ট্রাইবাল নাচ গানের উন্মাদনা। এসব দিয়েই বসন্তের আবাহনে এতল্লাটের নিজস্ব উৎসব – “পলাশ পার্বণ”। ‘কালচারাল বোহেমিয়া’, ‘ASA Vacations’ এবং পুরুলিয়া ডিসট্রিক্ট ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেটিভ সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে আগামী ২৪ মার্চ। চলবে তিন দিন।
“পলাশ পার্বণ” উৎসবের শুরু ২০০০ সালে। প্রথমবার এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পুরুলিয়ার দরবারী ঝুমুর গানের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী শ্রীমতী সিন্ধুবালা দেবী এবং চিত্রশিল্পী শ্রী বাঁধন দাস। এরপর থেকে দীর্ঘ ষোলো বছরের যাত্রায় এসেছে বহু চড়াই উৎরাই। রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সমস্যায় দীর্ঘদিন জেরবার হয়ে ছিল পুরুলিয়া। অবশেষে ভয়ের পরিবেশ কেটে গিয়ে এসেছে স্থিতাবস্থা। পাহাড় জঙ্গলের সিনিক বিউটি ও সহজ আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষগুলি আশার আলো খুঁজছে পর্যটন শিল্পকে আঁকড়ে ধরে। পলাশ পার্বণ তাঁদের কাছে যেন এক নতুন আলোর সম্ভাবনা। এ প্রসঙ্গে পুরুলিয়া ডিসট্রিক্ট ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কোওপারেটিভ সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা সমাজসেবী ও নাট্যকার শ্রী বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত জানালেন, “গত ষোল বছর ধরে আমরা এই জেলার পর্যটনকে উন্নত করার ব্যপারে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে দেউলঘাটার পাল যুগের বিশাল টেরাকোটার মন্দির ও কাঁসাই নদী সংলগ্ন পাহাড় জঙ্গলের সৌন্দর্যকে পর্যটকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। আর সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় আর্টফর্মগুলি এবং এইসব আর্টিস্টরা। কলকাতার মানুষের কাছে ছৌ নাচিয়েদের গ্রামে এসে শিল্পীদের নাচ গান এবং তাঁদের জীবন সংগ্রামকে তাঁদের মুখ থেকে শোনার ও চাক্ষুষ করার এক অভিনব সুযোগ করে দেবে এই পলাশ পার্বণ”। আর শুধু ছৌ নাচ নয়, পলাশ পার্বণে এলে রাঢ় বাংলার হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন আর্টফর্ম যেমন দরবারী ঝুমুর গান, মুখোশ শিল্প, মাটির পুতুল, নাটুয়া নাচ, করম নাচ সহ একাধিক শিল্প মাধ্যম ও তার সঙ্গে যুক্ত থাকা মানুষদের সঙ্গে পরিচয় লাভ করার সুযোগ হবে।
এই উৎসবের আরেক আয়োজক চিত্রশিল্পী এবং ফটোগ্রাফার তথা ‘কালচারাল বোহেমিয়া’র প্রধান শ্রী আগ্নি বসু বললেন, “এবারের পলাশ পার্বণ হবে একটা ভিস্যুয়াল মিউজিক্যাল জার্নি। এবারের উৎসবের অতিথিদের আমরা এমন একটা ট্রাইবাল ফোক জার্নির মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাব যা তাঁদের কাছে একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে থেকে যাবে। স্টেজ পারফরমেন্সের অভিজ্ঞতা দিয়ে এই ন্যাচারাল জার্নিকে বোঝা যাবেনা। গড়পড়তা জীবনের বাইরে এসে বোহেমিয়ান জীবনের স্বাদ নেওয়ার ইচ্ছে যাঁদের রয়েছে তাঁদের জন্য এটা হতে চলেছে ওয়ান্স ইন আ লাইফ টাইম এক্সপিরিয়েন্স”। এই উৎসবে এসে অতিথিরা পাবেন রক ক্লাইম্বিং, ট্রেকিং, ক্যাম্পিং ইত্যাদি অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ। আপনি যদি আরাম বিলাসী হন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে ঝালদায় আর্মেনিয়ান বণিকদের বানানো বিলাস বহুল রিসর্টের সুব্যবস্থা। আর আপনি যদি হন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, বোহেমিয়ান জীবন দর্শনে উৎসাহী, তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে অযোধ্যা পাহাড়ের পলাশ-লাল উপত্যকায় চাঁদনী রাতে ক্যাম্পিং এর অনবদ্য অভিজ্ঞতা। ধামসা মাদলের তালে তালে মহুয়ার মাতাল নেশায় বসন্তের বনজ্যোৎস্না গায়ে মেখে আপনি পেয়ে যেতে পারেন জীবনের এক নতুন মানে।
পলাশ পার্বণের রুটিন
২৪শে মার্চ, ২০১৬ – ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ১৮৬১৫ ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেসে হাওড়া থেকে পুরুলিয়ার মুড়ি স্টেশানে অবতরণ এবং গাড়িতে দশ কিলোমিটার দূরে ঝালদায় হোটেল / টেন্টে ট্রান্সফার। ব্রেকফাস্টের পর কুকি ড্যাম যাওয়া এবং ফিরে এসে লাঞ্চ ও বিশ্রাম। বিকেলে ক্লাইম্বিং / হাইকিং / বা নিজস্ব অ্যাক্টিভিটি। সন্ধ্যায় ক্যাম্পফায়ারের পাশে বসে বিশেষ করম নাচ (মহিলা শিল্পীদের) এবং ঝুমুর গান। রাতে ঝালদায় হোটেল / ক্যাম্পে রাত্রিযাপন। ২৫শে মার্চ, ২০১৬ – ব্রেকফাস্টের পর গাড়িতে ছৌ নাচের মুখোশ তৈরির গ্রাম চড়িদা যাওয়া এবং সেখান থেকে অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যা পাহাড়ের সিনিক বিউটির সঙ্গে রয়েছে আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম, বামনি ফলস্ এবং পাহাড়ের উপর থেকে ব্রেথটেকিং ভিউ। দুপুরে লাঞ্চ। বিকেলে আড়ষায় যাওয়া এবং সেখানকার ট্রাইবাল গ্রামে সাঁওতাল গান ও নাটুয়া নাচের এক বিশেষ অনুষ্ঠান। সঙ্গে থাকবে মহুয়া ও চাপরার (স্থানীয় রুটি) বন্দোবস্ত, তবে সেটা নিজস্ব খরচে ও ইচ্ছায়। রাত্রে গড়জয়পুরে হোটেল / টেন্টে রাত্রিযাপন।
২৫শে মার্চ, ২০১৬ – ব্রেকফাস্ট, নিজস্ব অ্যাক্টিভিটি এবং পুরুলিয়া ষ্টেশনে পৌছনো এবং দুপুর ৩ টে ৩৫ মিনিটে ১২৮৮৪ ডাউন রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে তুলে দেওয়া।
[পলাশ পার্বণ নিয়ে বিশদে জানতে লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করতেই পারেন। নিচে COMMENT এ প্রশ্ন লিখুন, মতামত জানান।]
---