বাংলায় তৈরি হচ্ছে স্টার্টআপ সাপোর্ট সিস্টেম
বাংলায় শিল্প নেই। শিল্পের সংস্কৃতি নেই। অধিকাংশই চাকরির জন্যে হা পিত্যেশ হয়ে বসে থাকেন। নিজে থেকে উদ্যোগ নিতে চান না। ব্যবসার কথা বললেই মুখে উত্তর লেগে থাকে "কে দেবে ক্যাপিটাল।" আর ব্যবসা মানে প্রায় সকলেরই ধারণা দোকান খুলে বসার নাম ব্যবসা। পাশাপাশি যারা উদ্যোগকে উদ্যোগ বলে চেনেন। উদ্যোগ নিতে দু'পা এগোন তাদের মুখে অন্য যুক্তি উদ্যোগ নেওয়ার ইকোসিস্টেম নেই। এরকম হাজারো অভিযোগ, অনেকদিন ধরেই পিং পং বলের মতো এ দেওয়াল সে দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে। সময় নষ্ট হচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলা।
রাজ্যের রাজনীতিকে দোষ দেওয়া খুব সোজা। ইতিহাসকে রেফারেন্স ফ্রেমে রেখে নিজেকে জাস্টিফাই করাই যেখানে রেওয়াজ সেখানে একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটতে চলেছে কলকাতায়। গোটা বাংলার উদ্যোগপতিদের জন্যে তৈরি হচ্ছে একটি বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা। একটি জাতীয় স্তরের স্টার্টআপ ফেডারেশন।
যেখানে উদ্যোগপতিরা পাবেন সবরকমের সুযোগ সুবিধে। এবার আপনি এগিয়ে আসুন। বাংলাকে তুলে আনুন সামনের সারিতে। কিন্তু ভাবছেন তো কীভাবে? এতদিন যা হয়নি তা কোন জাদুবলে হয়ে যাবে! হবে কারণ বাংলা এবার জেগে উঠছে তাঁর নিজস্ব সম্পদে। মানবিক শক্তিতে। যে সংস্থার কথা বলা হচ্ছে সেটিই পারবে উদ্যোগ মানচিত্রটা বদলে দিতে।
ধরুন আপনি একজন তরুণ উদ্যোগপতি, অনেক আইডিয়া মাথায় গিজ গিজ করছে। কিন্তু আপনার কোম্পানি তৈরি করে সেই আইডিয়াকে নিয়ে এগোবার পথ পাচ্ছেন না। ভাবছেন দীর্ঘদিন, কী করা যায়, কিভাবে এগোনো যায়, কিন্তু কোম্পানি খোলার হ্যাপাও পোহাতে চান না। তা হলে কী করবেন! আইডিয়াকে জলাঞ্জলি দিয়ে উদ্যোগপতি হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করবেন, নাকি এগোবেন সাফল্যের সন্ধানে! উত্তর যদি পরেরটি হয় তবে এই সংস্থা আপনাকে সেই শক্তি দেবে।
আবার এমন হতেই পারে আপনি একটি সংস্থা খুলে ফেলেছেন কিন্তু সেক্রেটারিয়াল কাজের চাপে আপনার বাজার, উদ্ভাবন এসব নিয়ে ভাববার অবকাশ নেই। ফলে পিছিয়ে যাচ্ছেন। গুণগত মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অথবা আপনি বিনিয়োগ চান, তার জন্যে কাগজ তৈরি করা, তার প্রেজেন্টেশন বানানোর এত তাগিদ যে মৌলিক কাজটাতে ফাঁকি পড়ে যাচ্ছে। তাহলে আপনি কী করবেন! ২৪ ঘণ্টার ফ্রেমটাকে তো আর বাড়াতে পারবেন না। আপনি এই সংস্থার দ্বারস্থ হতে পারেন। হাসিমুখে আপনার কাজের চাপ ভাগ করে নিতে তৈরি এই সংস্থা।
অনেকের আবার প্রয়োজন পড়ে মেন্টরশিপের। কলকাতা সম্পর্কে বলা হয় এই শহরে অভিজ্ঞ লোকেরা মেন্টরিং করতেই চান না। চায়ের ঠেকে অযাচিত জ্ঞান অনেকে দেন কিন্তু কার্যক্ষেত্রে প্রফেশনাল জগতে কোনও সঠিক মেন্টর পাওয়া কঠিন। এই সমস্যার সমাধান করতে চলেছে এই স্টার্টআপ ফেডারেশন।
কেউ চান পিচিং করার কলা কৌশল শিখতে। কীভাবে পিচিং করবেন! ইনভেস্টর রেডি হবেন কীভাবে! আপনার হয়তো ল্যাঙ্গুয়েজটা ব্রাশ আপ করা প্রয়োজন। এই সব সমস্যা নিয়ে আপনি কোথায় যাবেন ভাবছেন? আমি হলফ করে বলতে পারি এই ফেডারেশন দেবে সেই স্কিল ডেভেলপ করার সুযোগ।
এরকম হাজার একটা সমস্যার একটিমাত্র ঠিকানা তৈরি হচ্ছে কলকাতায়। এই উদ্যোগের পিছনে আছেন বাঙালি শিল্পপতিদের একটি টিম। যারা আপনাকে হাতে ধরে ব্যবসা শেখাবেন।
বাংলার ধুকতে থাকা উদ্যোগ মানচিত্রে বদল আনার ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন সেই অভিজ্ঞ সফল ব্যবসায়ীদের টিম। শুধু কলকাতা নয় গোটা বাংলা, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল এবং পূর্বভারতের অন্যান্য অঞ্চলের উদ্যোগপতিদের কথা মাথায় রেখেই শুরু হচ্ছে এই সাপোর্ট সিস্টেম। যেকেউ যেকোনও স্টার্টআপ, ছোট বড় মেজো উদ্যোগপতি এই সিস্টেমের সঙ্গে নিজেকে জুড়তে পারবেন। বিভিন্ন ভূমিকায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন আপনি। ধরুন আপনি যদি উদ্যোগের দুনিয়ায় কোনও সহযোগিতা করতে চান কিংবা আপনার যদি আইনি পরামর্শ দেওয়ার কিংবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি ফার্ম থাকে তাহলে এই সিস্টেমে আপনি সাপোর্টিং অথরিটি হিসেবে কাজ পাবেন।
আর যদি আপনার বিশেষ কোনও স্কিল থাকে তাহলে তারও মূল্য দেবে এই সিস্টেম। উদ্যোগপতিরা তাঁদের সমস্যা এই স্টার্টআপ সাপোর্ট সিস্টেমের কাছে খুলে বলতে পারবেন এবং ব্যবসা বাড়ানোর সমস্ত সুলুক পাবেন তেমনি যারা এই পরিষেবাগুলি দিয়ে আসছেন এতদিন তারাও পাবেন ক্লায়েন্টেল। শুনতে সোনার পাথর বাটি হলেও এই সাপোর্ট সিস্টেমই কলকাতার ইকোসিস্টেমকে টেনে তুলবে বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ টিম।
নাম বলতে মানা। কিন্তু নামগুলো এত পরিচিত যে গোটা ভূভারত তাঁদের চেনে। শিল্পের দুনিয়ায় শিক্ষার দুনিয়ায় তাঁরা প্রত্যেকেই প্রথিত যশা। প্রত্যেকেই সাফল্যের শীর্ষে। তাঁরা এখনই সকলের সামনে আসতে চাইছেন না। বরং চাইছেন কাজের কাজটা করে দেখাতে।
এই বিশেষজ্ঞ টিমে যেমন আছেন অভিজ্ঞ শিল্পপতির দল, বণিকসভার কর্ণধারদের একটি টিম। তেমনি রয়েছে অর্থনীতিবিদদের একটি টিম, থাকছে ইনভেস্টরদের লাউঞ্জ। যেখানে বিনিয়োগকারীরাও নথিভুক্ত থাকবেন। শুধু অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টিং নয়, ভিসি ফান্ডিং করেন এমন বিনিয়োগকারীরাও থাকছেন এই টিমে। সন্তর্পণে এগোচ্ছে এই সংগঠন। তলায় তলায় তৈরি হচ্ছে ইকোসিস্টেম। চাইলে আপনিও নথিভুক্ত হতে পারেন এই সাপোর্ট সিস্টেমে। শুধু একটি কনসেন্ট মেল [email protected] এই অ্যাড্রেসে আপনাকে পাঠাতে হবে, তারপরই পাওয়া যাবে সাপোর্ট সিস্টেমে ঢোকার সুযোগ।