কলেজের শেষ বছরে ওঁরা তিনজন ক্লাশের ফাঁকে প্রায়ই আলোচনায় বসতো এই নিয়ে, এরপরে কী হবে! তিন কন্যে দেবারতি গুহ, মৌলি বকশি এবং দেবমিতা সাহারায় নিজেরা কিছু করতে চাইছিল।
শেষপর্যন্ত ওঁদের ওই আলোচনা ফলবান হয়েছে। দেবারতি ও তাঁর দুই বান্ধবী মিলে গড়েছে দি স্ক্র্যাপ শপ নামে একটি স্টার্টআপ। দি স্ক্র্যাপ শপ ঘর সাজানোর হাতে তৈরি নানান সামগ্রী ও মেয়েদের গয়না তৈরি করে থাকে। তবে গয়নাগুলি কিন্তু সোনারূপোর নয়। ওঁরা কাগজ দিয়ে জুয়েলারি তৈরি করে। এছাড়া, দেবারতিরা বানাচ্ছে আইসক্রিম স্টিক দিয়ে পেনস্ট্যান্ড, খবরের কাগজ দিয়ে বাস্কেট কিংবা পিচবোর্ড দিয়ে বানাচ্ছে সুন্দর ফটোফ্রেম।
কারিগর ওঁরা তিনজনই। দেবারতি নিজে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি নিয়ে এমএ পড়ছে। অন্য দুজন মৌলি আর দেবমিতা কিছুদিন আগেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বিএসসি উত্তীর্ণ হয়েছে।
তিন বান্ধবীকে একসঙ্গে পাওয়া গেল। জানা গেল, দি স্ক্ৰ্যাপ শপ গঠনের নেপথ্যে কাহিনি। ওটা আর কিছুই নয়, তিন কন্যের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তুমুল তাগিদ।
তিন বন্ধুই লেখাপড়ায় ভালো। তাছাড়া, আর একটি বিষয়ে তিনজনেরই মিল আছে। দেবারতি বলল, আমি নিজে ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকতে ভালোবাসি। আঁকা শিখি এখনও। মৌলি আর দেবমিতাও সময় পেলে ছবি আঁকতে ভালোবাসে। ইতিমধ্যে ওঁদের ছবি নানা প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃতও হয়েছে।
ছবির প্রতি এই ভালোবাসা নিয়েই ওঁরা কিছু একটা করতে চাইছিল। তারই ফসল ওঁদের তিনজনের স্বপ্নের স্টার্ট আপ সংস্থা দি স্ক্র্যাপ শপ।
দেবারতিদের হাতে তৈরি জুয়েলারি বা ঘর সাজানোর সামগ্রীগুলি অভিনবই। দেবারতি জানালেন, লেখাপড়ার বাইরের সময়টা আমরা হাতের কাজ করি। তাতে সময়ও বেশ ভালো কাটে।
তিন কন্যেই সাহিত্য অনুরাগী। একটা সময় ছিল যখন এই বয়সের প্রতিভাবান ছেলেমেয়েরা লিটল ম্যাগাজিন বের করার জন্যে অথবা একটা নাটকের দল গড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত। দেবারতিরা বললেন, সেই সময়টা এখন গত যুগ। সময় পাল্টে গিয়েছে। আমাদের বন্ধুদের মধ্যেও কেউ কেউ এখনও লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে রোমাঞ্চিত হয়। তবে আমরা তিনজন ও রাস্তায় যাইনি।
মৌলি বললেন, যুগটা ব্যবসার। তাই নিজেরা কোম্পানি খুলে ব্যবসা করার চেষ্টা করছি। আমাদের গুণ আর মেধাই আমরা বাজারে বেচছি। একাজটা ভালোই লাগছে।
ইতিমধ্যে ফেসবুকে নিজেদের সংস্থার একটি পেজ ক্রিয়েট করেছে দি স্ক্র্যাপ শপ। সেখানে ওঁদের হাতে তৈরি সামগ্রীর নিদর্শন দেখা যাবে। সাড়া মিলছে ভালোই। প্রতিমাসে বেশ কিছু অর্ডারও পাচ্ছে ওঁরা। স্বভাবতই তাতে উত্সাহ আরও বাড়ছে।
দেবারতি ব্যবসায়ী পরিবারের মেয়ে। সে হিসাবে ব্যবসা ওঁর রক্তে জন্মগতভাবেই। সংস্থা পরিচালনার দায়িত্ব দেবারতির হাতে। অন্য দুই বান্ধবী এ কাজে ওঁর সহায়ক। মৌলি জানাল. ওঁদের হাতে তৈরি জিনিসের দাম খুব একটা বেশি নয়। আইসক্রিম স্টিক দিয়ে গড়া পেনস্ট্যান্ডের দাম ১৫০ টাকা, খবরের কাগজের মন্ড দিয়ে তৈরি বাস্কেটের দাম ২৫০ টাকা আর পিচবোর্ড দিয়ে তৈরি ফটোফ্রেমের দাম ১৫০ টাকা। জুয়েলারিগুলির দামও নাগালের ভিতরই রাখা হয়েছে। ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার ভিতর মিলবে নেকলেস কিংবা কানের দুলের সেট।
দেবারতি, মৌলি বা দেবমিতাদের এখন নতুন কিছু একটা করতে পারার বয়স। তিন কন্যেরই ধীরে ধীরে কোম্পানিটা দাঁড় করানোর স্বপ্ন। দেবারতি বলল, অনেকেই আমাদের হাতে তৈরি প্রোডাক্টের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কিছুদিনের ভিতর আমরা দি স্ক্র্যাপ শপের নামে একটি ওয়েবসাইট খুলছি। ক্রেতাদের আমাদের সঙ্গে যোগাযোগে তাতে সুবিধা হবে।