আমার বন্ধু অরিন্দম সদ্য রাঁচিতে ট্রান্সফার হয়েছে। কাজের সূত্রে ওকে প্রায়শই ট্রেনে করে লং ডিস্টেন্স ট্রাভেল করতে হয়। ছেলে কখনও বাড়ির বাইরে থাকেনি, তাই ওকে নিয়ে ওর বাড়ির লোকের বড়ই দুশ্চিন্তা। ওর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ না করতে পারলে কাকিমা আমার কাছে খোঁজ নেন। ট্রেন লেট আছে কিনা, ট্রেন কোথায় পৌঁছল – ইন্টারনেট ঘেঁটে সেসব খবর আমাকেই বের করতে হয়। কলকাতা ও শহরতলিতে বেরিয়ে আমার নিজেরও অনেক সময় লোকাল ট্রেন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, কিন্তু রাস্তায় চলতে চলতে লোকাল ট্রেনের টাইম জানা অতটাও সহজ নয়। ট্রেন চলাচল নিয়ে এমন নানা জিজ্ঞাসার উত্তর পেতে গুগল হাঁতড়ে বেরাতে হয়। রেলের নিজস্ব এমন কোনও ওয়েবসাইট নেই যেখান এই সমস্ত তথ্য খুব সহজে পাওয়া যায়। তবে নেট ঘাঁটতে গিয়ে অবশেষে একটা ওয়েবসাইটের খোঁজ পেয়েছি। RailYatri.in – ট্রেন চলাচল নিয়ে প্রায় সব জিজ্ঞাসার উত্তর দেয় এই ওয়েবসাইট।
শুরুর গল্প
RailYatri-র সূচনা ৪ বছর আগে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মনীশ রাঠি, শচীন সাক্সেনা ও কপিল রাইজাদা। আগে এই তিনজন বিভিন্ন স্টার্টআপ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দিতেন। মোট ১৮টি স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করার পর তাঁরা নিজেদের সংস্থা খোলার কথা ভাবেন। সেই পরিকল্পনারই বাস্তব রূপ RailYatri।
সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মনীশ রাঠি জানিয়েছেন, ‘বিমান যাত্রীদের ক্ষেত্রে তথ্যানুসন্ধানের একগুচ্ছ উপায় থাকলেও রেলযাত্রীদের ক্ষেত্রে তা খুবই কম। কিন্তু দেশে বিমানযাত্রীর তুলনায় রেলযাত্রীর সংখ্যাটা অনেক অনেক বেশি। তাদের কথা মাথায় রেখেই RailYatri সূত্রপাত’।
খুঁটিনাটি তথ্যের হদিশ দেয় RailYatri
পিএনআর স্ট্যাটাস চেক করা, কোন ট্রেন কোন রুটে যায় এই সব বেসিক তথ্য দেওয়া ছাড়াও গোটা ভারতে এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের রিয়াল টাইম আপডেট পাওয়া যায় এই ওয়েবসাইটে। অজ পাড়া-গাঁয়ের কোন স্টেশনে কখন কোন লোকাল ট্রেন আসবে, আসতে দেরি হবে কি না, কোন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়াবে – এই সব খুঁটিনাটি তথ্যও রয়েছে RailYatri-র কাছে। রেল উইজডম নামক একটি অপশনের সাহায্যে আবার সংশ্লিষ্ট স্টেশনের আশেপাশে যাতায়াতের ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার জায়গার বিষয়েও জেনে নেওয়া যায়। আবার রেলের কোন শাখায় কোন টেলিকম সংস্থার নেটওয়ার্ক কভারেজ কেমন, তাও জানতে পারবেন।
ভারতীয় রেলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা
কিন্তু বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করা যতটা সহজ, রেলের মতো সংস্থার ক্ষেত্রে তো তা নয়। হাজারও লালফিতের ফাঁস জড়িয়ে থাকে। সেই পথ কীভাবে মসৃণ হল? মনীশ রাঠি জানিয়েছেন, ‘আমরা রেলের আইটি বিভাগের সঙ্গে কাজ করছিলাম। আমাদের প্রস্তাবিত পরিষেবাগুলো তাদের প্রয়োজনের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। সেটাই অনেকটা সুবিধা করে দিয়েছিল। ভারতীয় রেলের মতো বড় সংস্থার ভিতরে কীভাবে কাজ হয় সেটাও আমরা দেখার সুযোগ পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা অবশ্যই লাভজনক। তবে কিছু বিধিনিষেধ তো ছিলই’।
RailYatri-র মার্কশিট
মনীশ রাঠি জানিয়েছেন তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন বাবদ আয়তে ভিত্তি করেই সংস্থা তরতরিয়ে এগোচ্ছে। শুরুয়াতি ব্যবসা সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ, তবে বাকিদের সাফল্য-ব্যর্থতা দুইয়ের থেকে তাঁরা শিক্ষা নিয়েছেন। অন্যান্য শুরুয়াতি ব্যবসার জন্য কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁরা নিজেদের ব্যবসায় প্রয়োগ করছেন। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ-এর মাধ্যমে RailYatri-র পরিষেবা বিস্তৃত হয়েছে।
বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স নামক অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ভর করে আরও নতুন নতুন তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইট ইউজারদের জন্য তুলে ধরছে RailYatri। এমনকি RAC-তে থাকলে আপনার আসন সংরক্ষণের সম্ভাবনা কতটা তারও ভবিষ্যদ্বাণী করে দিচ্ছে এই ওয়েবসাইট। আগামী উইকেন্ডে কী কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন? রেলযাত্রার কথা ভাবছেন? তাহলে নিজেই পরখ করে নিতে পারেন RailYatri-র বুদ্ধিমত্তা।