Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Yourstory

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

ADVERTISEMENT
Advertise with us

সাফল্যের ট্র্যাকে উসেইন বোল্ট WTF এর সায়ন

সাফল্যের ট্র্যাকে উসেইন বোল্ট WTF এর সায়ন

Tuesday August 23, 2016 , 4 min Read

ছেলেটা কোনওদিন সিরিয়াসলি ভাবেনি ব্যবসা করবে। বাবা ব্যবসায়ী। শহরে বেশ নাম ডাক আছে। কিন্তু তিনি ছেলেকে ব্যবসায়ী করতে চাননি। চেয়েছিলেন ছেলে হোক আমলা। সেন্ট জেভিয়ার্সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়তে পাঠিয়েছেন। কিন্তু হঠাতই ছেলের মাথায় ব্যবসার পোকা নড়ে উঠেছে। কিছু একটা করতে হবে। করতেই হবে। উৎসাহের বশে নানান প্ল্যান নিয়ে ভাবতে থাকেন। দু-দুটো স্টার্টআপ নিয়ে এগিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ে উদ্যোগ। প্রতারণারও শিকার হন। কিন্তু ফের মাথা তুলে দাঁড়ান এই কুড়ি বছরের তরতাজা তরুণ। স্থির করেন শুরু করবেন খাবারের ব্যবসা।

এখনও পড়াশুনো শেষ হয়নি। কিন্তু ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাও শুরু থেকেই সাফল্যের হদিসও পেয়ে গেছে ছেলেটি। আমি Where is the Food (WTF) এর কর্ণধার সায়ন চক্রবর্তীর কথা বলছি। একটুও শান্ত ছেলে নন। সারাদিন টগবগ করে ফুটছেন। সকালে কলেজ। বিকেলে অফিস। গভীর রাত পর্যন্ত চলে পড়াশুনোর পাশাপাশি ব্যবসা এগোনোর কাজ।

আইডিয়াটা এসেছিল বছর দুয়েক আগে একবার একটা সেমিনারে গিয়ে। সেখানে দেখে নিজের খাবার নিজে বানিয়ে নেওয়ার বন্দবস্ত। মাথায় আইডিয়া দানা বাঁধতে থাকে। কাস্টমাইজেশনের এই যুগে পার্টি সেমিনারেও অতিথিরা রুচি মাফিক খাবার বানিয়ে নিচ্ছেন। এটাই ছিল প্রাথমিক অনুপ্রেরণা। তারপর যেমন ভাবা তেমন কাজ। ব্যবসা করার বুদ্ধি চলে এলো মাথায়। দিয়ে ফেললেন নাম, Where is the Food। বানিয়ে ফেললেন ব্র্যান্ডিং করার জন্যে প্রিন্টেড টিশার্ট। বাবা সুজিত চক্রবর্তীকে বলতেই বাবা বললেন না। কারণ বাবা চাইতেন না ছেলে রেস্তরাঁ চালানোর ব্যবসা করুক। তিনি চান ছেলে সরকারি আমলা হোক। এক্সপোর্ট ইম্পোর্টের ব্যবসা করার সুবাদে আমলাদের দাপট প্রতিপত্তি, সম্মান খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই নিজের ছেলেকেও আমলা করার স্বপ্ন দেখেছেন সুজিতবাবু।

কিন্তু ডিএনএ তে যে ব্যবসা! সায়ন তাই ব্যবসায়ী হতে চাইলেন। প্রথম উদ্যোগ স্থগিত হল ঠিকই, কিন্তু কিছু দিন পর ফের চাগাড় দিল ইচ্ছেটা। একবার কি হল একটা বড় ব্র্যান্ডেড রেস্তরাঁয় একজন ধোপদুরস্ত ভদ্রলোককে খাবারের দাম নিয়ে বারগেইন করতে দেখে আশ্চর্য হয়েছিলেন। একে তাঁকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন এটা নতুন নয়, অনেকেই ব্র্যান্ডেড দোকানে এসেও খাবারের দাম নিয়ে দর কষাকষি করেন। আরও একটু সমীক্ষা করলেন সায়ন। জানলেন স্বাস্থ্যের কারণে, স্বাদের কারণে নিরাপদ ব্র্যান্ডেড খাবার খেতে চান অনেকেই। কিন্তু সত্যি বলতে কি, অত্যধিক দামে পকেট আটকে যায়। রোজ রোজ আড়াইশ টাকার লাঞ্চ করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। এই সেগমেন্টটাই তাঁর ক্লায়েন্টেল বুঝতে পারলেন সায়ন। বন্ধু সোহম এগিয়ে এলেন। দুজনে মিলে শুরু করে দিলেন নতুন স্টার্টআপ তৈরির কাজ। এপ্রিল মে দুটো মাস রীতিমত সমীক্ষা চালিয়েছেন ওরা। বাজারের কী চাই। কীভাবে পাওয়া যায় সস্তায় পুষ্টিকর খাবার। কী থাকবে মেনুতে। কী কী প্যাকেজ হলে ভালো হয়, যেমন ৫৯ টাকায় ওরা দেন এক জোড়া গ্রিল্ড স্যান্ডউইচ, অথবা পছন্দ সই পিৎজা, ইন্টারন্যাশনাল ডিপস, চিপস, চকোলেট কেক উইদ চকোলেট সস অথবা হ্যান্ডমেড কুকি। আস্ত বাক্স মাত্র ৫৯ টাকায়। আরও একটু বেশি খিদে পেলে বারবিকিউ সস দিয়ে সেজুয়ান রাইস, দু টুকরো চিকেন সঙ্গে গ্রেভি, সঙ্গে বেক করা চিজি পম্মে সঙ্গে চকোলেট কেক সঙ্গে হট চকোলেট সস। কত দাম হওয়া উচিত? ওরা নেন একশ টাকার কম। এই সবই ওরা বাজার ঘুরে দেখে স্থির করেছেন কীসে কত নিলে ব্যবসা স্কেলেবল হবে। এরকম ৬ ধরণের প্যাকেজ আছে WTF এর। পুরনো নামটাই রাখলেন সায়ন। Where is the Food (WTF)। এখন এটা কলকাতায় বেশ পরিচিত নাম। কারণ সায়নরা যেটা করতে চেয়েছেন সেটার তাগিদ আছে কলকাতায়। সায়নদের WTF সস্তায় স্বাস্থ্যকর ভালো খাবার ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়। এক ডলারের কমে পেটপুরে খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেন সায়ন। অর্ডার দিলেই পৌঁছে যায় খাবার। অফিস কলেজ ক্যান্টিনের সঙ্গে WTF গাঁটছড়া বেঁধে ব্যবসা করে। বাল্কএ অর্ডার পাচ্ছে রোজ। সোহম হলেন চিফ অপারেটিং অফিসার। সেফ কৌস্তুভ ব্যানার্জি সংস্থার হেড সেফ এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোলার। কল্যাণ মজুমদার সংস্থার সিটিও। আর খোদ সায়ন সিইও।

পড়াশুনোর ফাঁকে ফাঁকে তুমুল চলছে ব্যবসা। ওদের টিমে রয়েছেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউশনের কৃতি ছাত্ররাও। তারাই তৈরি করেন খাবার। প্যাকড ফুড ডেলিভারি করে স্যুইগি। নিজেরাও কিনছেন গাড়ি। তৈরি হবে লজিস্টিক টিম। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে সেই ফুড কার। শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কাজ। আড়ে বহরে বাড়তে শুরু করেছে টিম WTF, ব্যবসা এগোনোয় সহযোগিতা করছেন ক্যালকাটা অ্যাঞ্জেলসের চিফ অপারেটিং অফিসার সৌম্যজিত গুহ। সায়নদের মেন্টরিং করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন WOW MOMO সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার সাগর দরিয়ানি। সায়ন বলছেন, যখন ব্যবসা শুরু করি তখন ওয়াও মোমোই ছিল মনে মনে প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এমন মজার জায়গা সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাই এগিয়ে আসার আশ্বাস দিচ্ছেন WTF এর ব্যবসায়িক অগ্রগতির ফন্দি ফিকির বাতলে দিতে।

সবে তো যাত্রা শুরু। ২০১৬-র মাঝামাঝি শুরু হয়েছে। বাবা নামজাদা ব্যবসায়ী সুজিত চক্রবর্তী। ছেলের প্যাশন দেখে মুগ্ধ। এগিয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। তিনিও নিজেকে জুড়ে দিয়েছেন ছেলের উদ্যোগের সঙ্গে। তাঁর প্রশ্রয়েই প্রাথমিক পথ চলার রশদ পেয়েছে WTF আর তিন চার মাসেই ব্রেক ইভেনে পৌঁছে যাওয়ার অসম্ভব দৌড়টা ফিনিশিং লাইন ছুঁয়ে ফেলল বলে। এ যেন উসেইন বোল্টের মরণপণ সাফল্যের দৌড়। বাংলা ইওরস্টোরি এই তরুণ উদ্যোগপতির সাফল্য কামনা করে। আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল সায়ন আরও বৃহত্তর বাজার পাক। আরও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্বগুলো সামলাক।