ফাইট সায়নী ফাইট... আরও... আরও...
খিদেটা ওঁর বড্ড বেশি। যে সে জিনিসের খিদে নয়, সোনার খিদে। সায়নী ঘোষ। নিজের প্রথম ইন্টারন্যাশানাল ইভেন্টে সোনা জিতে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সাউথ এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটার মেডলেতে সোনা জিতে ফিরেছেন। জলে নামলেই ওঁর মাথার ভিতর ফিনিশিং লাইনটাই তাড়া করে। লক্ষ্য একটাই জয়। জয় ছাড়া আর কিচ্ছু মোটিভেট করে না সায়নীকে। লড়াকু এই স্যুইমার জলে নামলেই দ্রুতগামী এমন এক জীবে বদলে যান যার লড়াইটা বাধা টপকানোর সমস্ত শরীর দিয়ে জলকে তাচ্ছিল্য করার। জলপরীর মত, মাছের মত তরতর করে এগোন শুধু ফিনিশিং লাইন ছোঁবেন বলে। এভাবেই সায়নী একা একটি প্রতিস্পর্ধা।
বালির মেয়ে। বাবা স্টেশনর কাছেই রোলের দোকান চালান। তাহলে কী বলবেন কুঁজোর চিত হয়ে শোওয়ার স্বপ্ন। রোলের দোকান চালিয়ে মেয়েকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করা। একি মুখের কথা নাকি। শুরুটা আসলে নেহাতই অন্য জায়গা থেকে। ছোট থেকে রোগে ভুগতেন সায়নী। তাই চিকিৎসক বলেছিলেন সাঁতারে দিয়ে দিন, ভাল থাকবে। আসলে যাঁর যেখানে যাওয়ার যেকোনও পথ দিয়েই সে লক্ষ্যে পৌঁছয়। সায়নীর জলে নামাটা ডেস্টিনিই ছিল। তাই যেন জল তাঁকে টেনে নিয়েছে।
স্থানীয় ক্লাবের পুলেই শুরু সাঁতার শেখার। বালি সুইমিং সেন্টারের কোচ সুরজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেন সায়নীর জীবনে ক্ষিতদা। মতি নন্দীর কোনিকে যিনি সাঁতার শিখিয়েছিলেন। পাশাপাশি শিখিয়েছিলেন লড়তে দুনিয়ার মুখে ঝামা ঘসে জয় ছিনিয়ে আনতে। বালির সুরজিৎ বাবুও তেমনি তৈরি করেছেন সায়নীকেয়, ভিতরে ভিতরে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন। তবে তিনিও জানেন শুধু লড়াইতে হয় না। এখন সর্বোচ্চ মঞ্চে লড়তে গেলে আর্থিক ক্ষমতা থাকাটাও খুবই জরুরি। পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি আধুনিক অ্যাকসেসরিও প্রয়োজন। এখনও স্পনসরের দেখা নেই। লড়াই আর লড়াই। সাঁতারের পুলে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার পাশাপাশি দারিদ্রের সঙ্গেও লড়াই সায়নীর। এত না থাকা সত্ত্বেও সায়নী যে পারছেন সেটা শুধু সম্ভব হচ্ছে তাঁর অদম্য মানসিক শক্তি আর দুরন্ত প্রতিভার দৌলতে।
সিনিয়র ন্যাশানালে রূপো পাওয়াটা আরও চাগিয়ে দিয়েছে সায়নীকে। সায়নী মনে করেন তিনি সোনা হারিয়েছেন, রূপো তিনি পাননি। সোনার লক্ষ্যে তাই নিজেকে প্রতিমূহুর্তে তৈরি করছেন বালির এই কিশোরী। কারণ জলের তলা থেকে তাঁকে যেন কেউ বলে ফাইট সায়নী ফাইট। ফিনিশিং লাইনটা তাঁকে তাঁড়া দেয়। তখন সোনার খিদেটা ভীষণ পায় সায়নীর।