বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সক্ষম মূক তাঞ্জিলা, মন্দিরারা
লজ্জায় মুখ ঢাকছে আজকের বাংলা। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য- নারীদের ওপর অত্যাচারে দেশের শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্টে আরও বলছে, গত একবছরে শুধু কলকাতা শহরে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা ২০৭৩। আমাদের শহরে ধর্ষন বেড়েছে ৪৭.৮ শতাংশ। পার্কস্ট্রিটের ঘটনা থেকে বাঁকুড়া জেলা হাসপাতালে মূক বধির মেয়ের শ্লীলতাহানি। একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা। তবে পৃথিবীর আলো দেখতে না পেলেও অষ্টমী কিংবা আরতি নিজেকে বাঁচানোর উপায় জানে। কথা বলতে না পারলেও মন্দিরা কিংবা তাঞ্জিলা খাতুন বাঁচতে জানেন। দুষ্টু লোকের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম। কিন্তু কেমন করে। আজ সেই বাঁচার গল্প ....
প্রতিবন্ধীদের ওপর এই অত্যাচার দেখে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি নিত্যানন্দ দত্ত। ইস্টার্ন রেলের চিফ ল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিত্যানন্দ বাবু কুস্তি এবং জুডোতে বাংলায় চ্যাম্পিয়ন। জাতীয় স্তরেও সাফল্য রয়েছে। তাঁর আরও একটা পরিচয় ব্লাইন্ড এন্ড প্যারা জুডো অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের যুগ্ম সচিব। মূলত তাঁর উদ্যোগেই হোমের প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়েদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষন দেওয়া শুরু করলেন তিনি।পাশে পেয়ে গেলেন প্রবীর কুমার সিনহা এবং অমিত কুমার চৌরাশিয়াকে। দুজনেই জুডোতে ব্ল্যাকবেল্ট। জুডো কুস্তির সঙ্গে জাপানের বিশেষ মার্শাল আর্ট জুজিৎসুর আত্মপ্রকাশ হল বাংলায় নিত্যানন্দ-প্রবীর-অমিত বাবুদের হাত ধরে। জুজিৎসু-কুস্তি, জুডো ও ক্যারাটে এই তিনের কম্বিনেশন। তিনজনে ঠিক করে ফেললেন যারা দেখতে পায না ঠিক মতো, কিংবা যারা শারীরিকভাবে ততটা সক্ষম নয়, বিপদের মাঝে কেমনভাবে তারা নিজেদের বাঁচাবে। শারীরিক সেই প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে ওদের আত্মরক্ষার উপায় শেখাতে হবে, এই ভাবনাকে সঙ্গে নিয়েই ২০১৫ র মাঝামাঝি নিত্যানন্দ-প্রবীর-অমিত বাবু চলে গেলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে। সেই শুরু .....
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজদের সঙ্গে কথা বলে শুরু হল অন্ধ পড়ুয়াদের আত্মরক্ষার কৌশল। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতেই থেমে থাকেননি তাঁরা। ফুলেশ্বরের আনন্দ ভবন, পানিহাটির গোবিন্দ ভবন, বেহালা সম্বিত এবং জোকার হোমের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে শুরু হল জুডো, কুস্তি কিংবা ক্যারাটে আবার কখনও জুজিৎসু প্রশিক্ষণ। সপ্তাহে নিয়ম করে এই হোমগুলিতে গিয়ে বিণা পারিশ্রমিকে ছেলেমেয়েদের ট্রেনিং দিয়ে আসেন অমিত চৌরাশিয়া, প্রবীর সিংহা কিংবা নিত্যানন্দ দত্ত। সব জায়াগাতেই প্রায় সত্তর থেকে আশি জন করে ছেলে মেয়েকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের ওপর নির্যাতনের পরিমান বেশি। তাই মেয়েদের যারা দুর্বল ভেবে ঘৃন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তারা এবার সাবধান। ...... আরতি, মন্দিরা, অষ্টমীদের এক একটা পাঞ্চ ওদের শক্ত করে তুলছে। বিপদের মাঝে ওদের শারীরিক দুর্বলতাগুলি ঢেকে দিচ্ছে মনের জোর আর আত্মরক্ষার জন্য হাতে কলমে শেখা মার্শাল আর্ট। আত্মরক্ষার জন্য ওই মার্শাল আর্ট শিখেই থেমে নেই পুনম, সুচিত্রা বা অনন্যারা। এই তো লক্ষ্ণৌতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ব্লাইন্ড এন্ড ডেফ জুডো চ্যাম্পিয়নশিপে(১৮ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি,২০১৬)পদক জিতেছে ওরা সকলেই। বাংলা থেকে অংশ নিয়েছিল ২৮ জন। তার মধ্যে ১৭ জন পদক এনেছে।জাতীয় স্তরে এই সাফল্য ওদের আজকের অনুপ্রেরণা। আর ওদের মুখে হাসি নিত্যানন্দ-প্রবীর-অমিত এই ত্রয়ীর সাফল্য। ওঁনারা জানেন অপরাধীদের শাস্তি দিতে প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে ওরাও সহায় সম্বল।