কলকাতায় বসে গোটা দুনিয়ায় ডালপালা মেলছে ArcVisions
তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় এখন একজনকে নিয়ে দারুণ কাড়াকাড়ি। নাম তার ওয়াটসন। সে একাধারে ক্যান্সারের জটিল চিকিৎসাকে সহজতর করতে বিশেজ্ঞদের পরামর্শ দিচ্ছে। অন্যদিকে মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার উপায়ও বলে দিচ্ছে নিমেষে। আলাদিনের জিনের মতো সিরি নামের এক মহিলা আবার তার মণিবের নানা টুকিটাকি আদেশ পালন করতে কম যান না। ওদিকে করটানা বলছে সে নাকি সিরি-র থেকে বেশি ভাল কাজ করে। এই ওয়াটসন, সিরি বা করটানা কেউই আসলে মানুষ নয়। ওয়াটসন এক সুপারকম্পিউটার, সিরি, করটানা, ডিজিট্যাল পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট। আর্টিফিশিয়ান ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে এরা ব্যবহারকারীর কাজকে আরও খানিকটা সহজ করে তুলছে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গোড়ায় যে অঙ্ক, তার নাম ডেটা সায়েন্স। ডেটা সায়েন্সের প্রয়োগেই টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল, ঘড়ি সবাই হয়ে উঠছে স্মার্ট। আর আমরা ঢুকে পড়ছি স্মার্ট যুগে।
‘তবে কলকাতায় বসে কিস্সু হবে না’ মার্কা নেতিবাচক ভাবনাকে গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে ডেটা সায়েন্সের মানচিত্রে কলকাতার নাম তুলতে বদ্ধপরিকর এই শহরেরই এক বিজ্ঞানী ও এক উদ্যোগপতি –অর্ণব মজুমদার ও কৌস্তভ চক্রবর্তী। আদ্যন্ত কমার্সের ছাত্র কৌস্তভ ২০০৪ সালে আর্কভিশন টেকনোলজিস নামে একটি সংস্থা খোলেন। এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স সলিউশন নিয়েই ছিল সংস্থার কাজকম্ম। কিন্তু কিছু বছর পর সেই সংস্থা শীতঘুমে চলে যায়। কৌস্তভের স্কুলের বন্ধু অর্ণব। লেখাপড়া ও কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন কলকাতা ছাড়া। তবে দুই বন্ধুর যোগাযোগ ছিল অটুট। বস্টন ইউনিভার্সিটিতে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ফিজিক্স নিয়ে বছর ১৫ গবেষণার পর শিকড়ের টানে কলকাতায় ফেরা।
চিৎপুর রোডে ট্রামলাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে দুই বন্ধুর রোজকার আড্ডাই আর্কভিশনের নবজন্মের সোপান তৈরে করে। ২০১৪ সালে নতুন যাত্রা শুরু করে আর্কভিশন। মূলত মার্কিন মুলুকের মানবসম্পদ, চিকিৎসা ও বিমা ক্ষেত্রকে প্রেডিক্টিভ অ্যানালিটিক্স নিয়ে পরামর্শ দেওয়াকেই পাখির চোখ করেছে কলকাতার এই স্টার্টআপ। সদর দফতর বলতে বিজয়গড়ে ২ কামরার ফ্ল্যাট। যেখানে হোয়াইটবোর্ড ব্রেইনস্টর্মিং সেশনের শেষে আমেরিকার সংস্থাদের ব্যবসায়িক রণকৌশন ছকে দিচ্ছেন অর্ণব, কৌস্তভ ও তাদের টিম। কীভাবে কাজ করলে মানবসম্পদের যথাযথ প্রয়োগ হবে, কোন বিমা পলিসি চালু করলে বাজারে বেশি বিকোবে – কলকাতাতেই অঙ্ক কষে মার্কিন ক্লায়েন্টদের বলে দিচ্ছেন অর্ণবরা।
কৌস্তভ তাঁর ব্যবসা নিয়ে দারুণ সিরিয়াস। আড্ডার ফাঁকে তাই মজা করেই বললেন অফিসেই এত সময় দিচ্ছেন যে গৃহলক্ষ্মী বেজায় চটে। অর্ণবেরও আর আমেরিকায় ফেরার ইচ্ছে নেই। কলকাতা মানেই ‘ল্যাদ’ এই স্টিরিওটাইপকে ভাঙতে চান বিজয়গড়ের ওই ফ্ল্যাটে বসেই। এদেশের বিভিন্ন সংস্থাতেও ডেটা সায়েন্সের প্রয়োগ করে তাঁরা কর্মপদ্ধতির খোল নলচে বদলে দিতে চান। আর্কভিশন স্বাবলম্বী হয়ে উঠলে তাঁরা স্মার্টডিভাইসও তৈরি করতে চান।
কৌস্তভ-অর্ণবদের এই সাহস, এই চেষ্টা নিয়ে লিখতে গিয়ে একটা বহুল প্রচলিত প্রবাদ মনে পড়ে গেল – “what Bengal thinks today, India thinks tomorrow.”। যে ওয়াটসনকে দিয়ে এই লেখা শুরু করেছিলাম, তাঁর বিখ্যাত বন্ধু থাকলে বোধহয় বলতেন – “it's elementary my dear Watson”।